ভোকাল ফর লোকালের প্রকৃষ্ট উদাহরণ পৌষমেলা, বিশ্বভারতীর শতবর্ষে বললেন মোদী
"নমস্কার হে বিধাতা দাও দাও মোদের গৌরব দাও। গুরুদেব কখনও ছাত্রদের কথা ভেবে এ কথা বলেছিলেন। আজ সারা দেশ এই কথা বলে আমাদের সঙ্গে", ভাষণের শুরুতেই বলেন নরেন্দ্র মোদী।
Looking forward to addressing the centenary celebrations of the iconic #VisvaBharati University, Shantiniketan, among our premium centres of learning which is closely associated with Gurudev Tagore. Do tune in tomorrow, 24th December at 11 AM. pic.twitter.com/d4ZAcA9IUe
— Narendra Modi (@narendramodi) December 23, 2020
ভার্চুয়াল ভাষণে নরেন্দ্র মোদী বলেন-
* “নমস্কার হে বিধাতা দাও দাও মোদের গৌরব দাও। গুরুদেব কখনও ছাত্রদের কথা ভেবে এ কথা বলেছিলেন। আজ সারা দেশ এই কথা বলে আমাদের সঙ্গে।”
*আমি ভাগ্যবাণ এই পূণ্যলগ্নে আমিও সামিল হতে পেরেছি। এ এক আরাধ্য স্থল।
*নতুন ভারত নির্মাণের জন্য বিশ্বভারতীর নিত্য নতুন প্রয়াস রয়েছে। আমি খুশি বিশ্বভারতী, শ্রীনিকেতন ও শান্তিনিকেতন অনবরত সেই লক্ষ্য ছুঁয়ে চলেছেন গুরুদেব যার স্বপ্ন দেখেছেন।
* প্রকৃতির সঙ্গে মিশে এক উদার শিক্ষার পাঠ দেয় বিশ্বভারতী। এই প্রতিষ্ঠান দেশকে শক্তি জুগিয়েছে।
* ভারতে স্বাধীনতার কথা বলি তখন সোজা আমাদের উনিশ শতকের কথা মনে হয়। কিন্তু এর বীজ অনেক গভীরে। ভক্তি আন্দোলন ভারতকে এক সূত্রে বেঁধেছিল।
*চৈতন্য মহাপ্রভু থেকে রামদাস, কবীর থেকে তুলসীদাস …গোটা ভারত এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। এই জন্য়ই এই আন্দোলন স্বাভিমান আর সাংস্কৃতিক চেতনার অঙ্গ হয়ে ওঠে।
*বিবেকানন্দ সেই ভক্তি আন্দোলনের ফসল। ভক্তি আন্দোলনের পাশাপাশি কর্ম আন্দোলনও ভারতের অংশ।
*অন্যায় আর শোষণের বিরুদ্ধে চিরকালই মাথা তুলেছে মানুষ। সঙ্গে নতুন জ্ঞানের চেতনা স্বাধীনতার বিপ্লবকে সফল করেছিল। সেইসময় সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি।
*ভক্তি, শিক্ষা, কর্ম- এই তিন আন্দোলনের ভূমিকা আমাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
*বিশ্বভারতীর শতবর্ষে দেশের একটাই কামনা, গৌরব।
*নিজের পরম্পরা ভারতের সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে গুরুদেব রাষ্ট্রবাদের জন্ম দেন , পাশাপাশি বিশ্ব মানবিকতারও। আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখুন বিশ্ব আর মা ভারতী। বিশ্বভারতী আত্মনির্ভর ভারতের পথিকৃৎ।
*আত্মনির্ভর ভারতের বিকাশে আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয় বিশ্বভারতী।
*আমাদের কৃষি-বাণিজ্য-শিক্ষাকে আত্মনির্ভর দেখতে চাইতেন গুরুদেব। গুরুদেবের চিন্তনজুড়ে আমাদের আত্মশক্তির নির্মাণই ছিল। ভারতের আত্মনির্ভরতা , আত্মসম্মান জড়িয়ে আছে একে অন্যের সঙ্গে।
*ভারতের আত্মসম্মানের জন্য দেখুন বাংলা তো প্রাণ দিয়েছে।
*ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা আরও কত আছেন, তাঁরাই আমাদের অনুপ্রেরণা। আমাদের নতুন ভারত গড়তে হবে।আমাদের মার্গ দর্শন করাবে গুরুদেবের মতাদর্শ।
*এই মহামারি আমাদের শিখিয়েছে ভোকাল ফর লোকাল। আমরা যখন আত্মসম্মান, আত্ম নির্ভরতার কথা বলছি, তখন বলি, যারা পৌষ মেলায় গরীব শিল্পীরা আসতেন, চলুন তাঁদের পাশে দাঁড়াই। বিশ্ব বাজারে কীভাবে তাঁদের প্রতিভা পৌঁছে দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা করুন। পৌষ মেলা ভোকাল ফর লোকালের আক্ষরিক রূপ।
*গুরুদেব বলেছিলেন , গান ও সংস্কৃতি ছাড়া রাষ্ট্র বাঁচতে পারে না। তাকে সম্মান করুন।
* যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে… কেউ না এলে একলাই চলো।
*গুরুদেব মনে করতেন আমাদের শিক্ষা বেঁধে রাখা উচিত নয়। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য , উচ্চ যেথা শির…। অর্থাৎ আমরা এমন ব্যবস্থার প্রচলন করি যাতে আমরা মুক্ত হতে পারি। মাথা তুলে চলতে পারি। মনকে ভয় মুক্ত করতে পারি। আজ জাতীয় শিক্ষানীতি এরই ধারক। বিশ্বভারতীর এই নীতি প্রয়োগে অনেক বড় ভূমিকা আছে।
*গুরুদেবের বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গুজরাটের আমেদাবাদে ছিলেন। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী যেদিন আমেদাবাদে আসেন তখন দেখেন মহিলারা ডানদিকে শাড়ির আঁচল নেন। কিন্তু তাতে কাজে সমস্যা হয়। উনি ভেবে দেখলেন আঁচল বাঁ দিকে হলে আর সমস্যা হয় না। আমি ঠিক জানি না শুনেছি , বাঁ কাঁধে শাড়ির আঁচল রাখার ধারনা উনিই চালু করেন। একে অপরের সঙ্গে থেকে আমরা একে অপরে সংস্কার, ঐতিহ্য থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি।
*এই সংস্কারই গুরুদেব বিশ্বভারতীকে দিয়েছিলেন। আমাদের উচিৎ নিরন্তর তা আরও মজবুত করা। আপনারা যেখানেই যান, যে জায়গাতেই থাকুন, আপনার অবস্থান থেকেই এক নতুন ভারত তৈরি হবে। আমি গুরুদেবের কথা দিয়েই শেষ করব, ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল। স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল…। দ্বার খোল।’ দেশে নয়া সম্ভাবনার দ্বার আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আপনারা সফল হোন, এগিয়ে চলুন, দেশের স্বপ্ন পূরণ করুন। এই শুভ কামনা রইল।