Deocha Pachami Project: নতুন ফ্ল্যাট নয়, গ্রামীণ পরিবেশেই পুনর্বাসন আদিবাসীদের, পাচামি প্রকল্পে ঘোষণা সরকারের

Coal Mining Project: জেলাশাসক আরও জানিয়েছেন, পাচামির কতটা এলাকা জুড়ে কয়লা রয়েছে তা জানতে দেওয়ানগঞ্জ ও হরিণশিঙায় কূপ খনন করা হবে। মাটির কতটা নীচে কয়লা রয়েছে তাও পরীক্ষা করা হবে ওই কূপ খননের মাধ্য়মেই।

Deocha Pachami Project: নতুন ফ্ল্যাট নয়, গ্রামীণ পরিবেশেই পুনর্বাসন আদিবাসীদের, পাচামি প্রকল্পে ঘোষণা সরকারের
দেউচা পাচামি , নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 03, 2021 | 9:49 PM

বীরভূম: সিঙ্গুরের মতো জোর করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। দেউচা পাচামি প্রকল্পের (Deocha Pachami Coal Mining Project) কথা ঘোষণা করতে গিয়ে এমনই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, সরকারের ঘোষিত প্যাকেজ নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছিল আদিবাসীদের মনে। সবথেকে বড় আশঙ্কা ছিল, খনি এলাকায় যাঁরা থাকছেন, সরকার জমি অধিগ্রহণ করলে তাঁরা কোথায় যাবেন? সমস্ত আশঙ্কা মেটাতে ধীরে ধীরে ক্রমান্বয়ে পাচামি প্রকল্প সফল করতে পদক্ষেপ করছে সরকার। এ বার, বীরভূম জেলাশাসক বিধান রায় স্পষ্টই জানালেন, আদিবাসীদের নতুন ফ্ল্যাটবাড়ি নয়, বদলে গ্রামীণ পরিবেশেই পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

ঠিক কী বলেছেন জেলাশাসক বিধান রায়? তাঁর কথায়, “আদিবাসীদের সর্বাধিক সংশয় ছিল তাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হলে তাঁরা কোথায় যাবেন। এছাড়া তাঁদের সংস্কৃতি নষ্ট হতে পারে। সেইসব কথা চিন্তা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আদিবাসীদের কোনও নতুন ফ্ল্যাটবাড়ি নয়, বদলে মহম্মদবাজার ব্লকেই গ্রামীণ পরিবেশেই আদিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।”

জেলাশাসক আরও জানিয়েছেন, পাচামির কতটা এলাকা জুড়ে কয়লা রয়েছে তা জানতে দেওয়ানগঞ্জ ও হরিণশিঙায় কূপ খনন করা হবে। মাটির কতটা নীচে কয়লা রয়েছে তাও পরীক্ষা করা হবে ওই কূপ খননের মাধ্য়মেই। স্থানীয়রা যেন কোনও গুজবে কান না দেন এমনটাই দাবি করেছেন জেলাশাসক। শুধু তাই নয়, পাচামি প্রকল্প সংক্রান্ত কোনও জিজ্ঞাস্য থাকলে পঞ্চায়েত ব্লক এবং জেলার অফিসেও জিজ্ঞাসা করা যাবে। তবে লোবা নিয়ে এখনই কোনও আলোচনা হচ্ছে না বলেই জানিয়েছেন জেলাশাসক।  যদিও, এই ঘোষণায় আদিবাসীদের তরফ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

দেউচা পাচামির প্রকল্পের কাজে কোমরবেঁধে লেগেছে রাজ্য সরকার। বুধবারই, ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশে দেউচা পাচামির (Deocha Pachami) একাধিক খাদান ঘুরে দেখেন রাজ্য সরকার নিয়োজিত চার সদস্যের বিশেষ প্রতিনিধি দল। এলাকায় কতটা দূষণ হচ্ছে, কয়লা খাদান হলেই বা কতটা দূষণ হতে পারে তা খতিয়ে দেখতেই মঙ্গলবার আধিকারিকরা খনি এলাকায় আসেন। যদিও তা নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁরা বিশেষ কিছু বলতে চাননি।

দেউচা পাচামি প্রকল্প চালু হলে, মূলত খনি এলাকায় কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু হবে। এরফলে আদিবাসীদের যে জমি ও বাড়ি তা সরকারের অধীনে চলে যাবে। পরিবর্তে যে পুনর্বাসনের প্যাকেজ দেওয়া হবে, তা যথাযথ ও যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি, তড়িঘড়ি ওই এলাকা পরিবরর্তিত হতে পারে আসানসোল-রানিগঞ্জের মতো এক বিরাট শিল্পতালুকে। ফলে, গোটা ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশটাই বদলে যেতে পারে। সেদিক থেকে আদিবাসীরা কোথায় যাবেন এই সংশয়টাই তাঁদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনির সন্ধান পাওয়ার সুবাদে বীরভূমের দেউচা পাচামি কোল ব্লক এলাকার নাম এখন অনেকেরই জানা। বীরভূমের দেউচা পাচামি কয়লা খনির কাজ শুরুর বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রায় ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত দেউচা পাচামি কোল ব্লক এলাকা। প্রাথমিক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রায় ৩০১০টি পরিবার এই খনি অঞ্চলে বসবাস করেন যার মধ্যে ১০১৩টি আদিবাসী পরিবার।

ঘোষিত সরকারি প্যাকেজে বলা হয়েছে, প্রায় ১৭ জন খাদান মালিক বাড়ির দাম ও ক্ষতিপূরণ পাবেন। ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজের অধীনে বাড়ি দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। ওই এলাকায় থাকা বাসিন্দা, যাঁদের বাড়ি সহ জমি রয়েছে, তাঁরা পাবেন ১০ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা। এছাড়া অন্যান্য সুবিধা দিতে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এছাড়া বাড়ি বা জমি হারানো অথবা বর্গদাররা পরিবার পিছু জুনিয়র পুলিশ কনস্টেবল পদমর্যাদার চাকরি পাবেন। সব মিলিয়ে এই ত্রাণ পুনর্বাসন প্যাকেজের মোট আর্থিক মূল্য ১০ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন: Sitalkuchi: সিবিআই তদন্তের প্রয়োজন নেই! শীতলকুচি গুলিকাণ্ডে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে নিহতদের পরিবার