Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Panchayat Election 2023: শাসকের জোট বনাম বিরোধীদের মহাজোট, পাহাড়ের রাজনীতিতে আবার ‘গোর্খাল্যান্ড’!

Darjeeling Politics: একটা সময় ছিল, যখন পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবির সরাসরি বিরোধিতায় কোনও জোটের কথা ভাবাই যেত না। কিন্তু সেই ট্রেন্ড এখন কিছুটা বদলাতে শুরু করেছে। পঞ্চায়েতের আসরে আরও কাছাকাছি এসে গিয়েছে অনীত থাপার দল ও তৃণমূল।

Panchayat Election 2023: শাসকের জোট বনাম বিরোধীদের মহাজোট, পাহাড়ের রাজনীতিতে আবার 'গোর্খাল্যান্ড'!
পাহাড়ে পঞ্চায়েত ভোটImage Credit source: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 30, 2023 | 5:41 PM

দার্জিলিং: মেঘ পিওনের দেশে ক্ষণে ক্ষণে মুড বদলায়। এই রোদ্দুর, তো এই মেঘ। বৃষ্টি। আবার পরক্ষণেই রোদ্দুর। শুধু আকাশের মুডই নয়, রাজনীতির (Darjeeling Politics) মুডও বদলাতে বেশি সময় লাগে না এখানে। দুই দশক পেরিয়ে পাহাড়ে আবার পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে। দ্বিস্তরীয় ভোট। গ্রাম পঞ্চায়েত আর পঞ্চায়েত সমিতিতে। পাহাড়ের কোলে এখন জমাট বাঁধছে নানা রঙের রাজনীতির মেঘ।

শাসকের জোট বনাম বিরোধীদের মহাজোট

এবারের ভোটে দার্জিলিঙের লড়াই মূলত দ্বিমুখী। একদিকে শাসকের জোট। অন্যদিকে বিরোধীদের জোট। বাংলার ক্ষমতায় তৃণমূল। আর জিটিএ-র ক্ষমতায় অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। এই দুই শাসক শিবির একদিকে। আর তাদের বিপরীতে জোট গড়ছে বিজেপির নেতৃত্বে অন্য পাহাড়ি রাজনৈতিক দলগুলি। তৈরি হয়েছে মহাজোট। পোশাকি নাম ‘সংযুক্ত গোর্খা মঞ্চ’ বা ‘ইউনাইটেড গোর্খা অ্যালায়েন্স’।

গোর্খা সেন্টিমেন্ট ও পাহাড়ের রাজনীতি

সমতলের রাজনীতির থেকে পাহাড়ের রাজনীতি অনেকটা আলাদা। সেখানে দাবি-দাওয়া আলাদা। সমীকরণ আলাদা। ইস্যু আলাদা। আর যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পাহাড়ের ভোট রাজনীতিতে, তা হল গোর্খা ভাবাবেগ। শুধু আজ বলে নয়, পাহাড়ের ভোটে গোর্খা ফ্যাক্টর বরাবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। পাশা পাল্টাতে দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে জিটিএ কিংবা তার আগে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ তৈরি নিয়ে আপত্তি রয়েছে পাহাড়ের কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের। দীর্ঘদিন ধরে তারা দাবি করে এসেছে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের।

পাহাড়ে বদলাচ্ছে কি সমীকরণ? ভাঙছে কি চেনা ছক?

একটা সময় ছিল, যখন পাহাড়ে গোর্খাল্যান্ডের দাবির সরাসরি বিরোধিতায় কোনও জোটের কথা ভাবাই যেত না। কিন্তু সেই ট্রেন্ড এখন কিছুটা বদলাতে শুরু করেছে। পঞ্চায়েতের আসরে আরও কাছাকাছি এসে গিয়েছে অনীত থাপার দল ও তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার পৃথক গোর্খাল্যান্ডের ইস্যুর ঘোর বিরোধী। আলাদা রাজ্য নৈব নৈব চ। আর সেই তৃণমূলের সঙ্গেই এখন মাখোমাখো ব্যাপার অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা।

পঞ্চায়েতের আসরে আবার গোর্খাল্যান্ডের ইস্যু

পাহাড়ের ভোট, আর সেখানে গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ উঠবে না? তা আবার হয় নাকি? গত তিনটি নির্বাচনে (একুশের বিধানসভা ভোট, দার্জিলিং পুরসভার ভোট এবং জিটিএ ভোট) পৃথক রাজ্যের ইস্যু সেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোট হল একেবারে মাটির কাছাকাছি। আমজনতার ছোট ছোট দাবি-দাওয়া পূরণের ভোট। আর পঞ্চায়েতের ময়দানে আবারও পিছনের সারি থেকে ঠেলেঠুলে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে গোর্খাল্যান্ডের ইস্যু।

গোর্খাল্যান্ড যেন সোনার পাথর বাটি

কিছুদিন আগেই নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে বিজেপিকে খোঁচা দিয়েছেন অনীত থাপা। পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বিজেপি কী ব্যবস্থা করেছে? প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার প্রধান তথা জিটিএ চেয়ারপার্সন অনীত থাপা। পাহাড়বাসীর দাবি যে আলাদা গোর্খাল্যান্ড, সে কথাও গোপন করেননি তিনি। থাপার বক্তব্য, বিজেপি সেই আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে কিছুই করছে না। এমনকী অনীত থাপাদের দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও গোর্খাল্যান্ড ইস্যুর কথা উল্লেখ রয়েছে।

আবার পাল্টা বক্তব্য রয়েছে বিজেপি শিবিরেরও। দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা যেমন অনীত থাপাদের দলকে বিশ্বাসঘাতক বলে খোঁচা দিয়েছেন। সাংসদের অভিযোগ, অনীত থাপারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য গোর্খাদের ভাবাবেগের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। স্মরণ করিয়ে দেন, অতীতে যখন গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড় অচল করা হয়েছিল, তখন এই অনীত থাপারাই জোর করে আবার সব চালু করেছিলেন।

বিজেপি নেতৃত্বে মহাজোট

এককালে পাহাড়ের রাজনীতিতে যুযুধান দুই পক্ষ ছিল জিএনএলএফ ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে রাজনীতির সমীকরণ। তৃণমূল আর অনীত থাপাদের জোটকে ধরাশায়ী করতে বিজেপির নেতৃত্বে এক ছাতার তলায় এসেছে মন ঘিসিংয়ের জিএনএলএফ, বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টিও এসেছে বিজেপির পাহাড়ের মহাজোটে। সব মিলিয়ে আটটি দল রয়েছে শাসক জোটের বিরুদ্ধে এই সংযুক্ত গোর্খা মঞ্চে। যদিও বিরোধীদের এই জোট পঞ্চায়েতের আগের নির্বাচনী সমঝোতা। এর সঙ্গে যে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের কোনও যোগ নেই, তাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

বিরোধীদের জোটে সমর্থন বিনয় তামাংদেরও

তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন বিনয় তামাং। এখন পঞ্চায়েত ভোটের আগে তিনি সরাসরি কোনও জোটের সঙ্গে যুক্ত হননি। তবে পঞ্চায়েতে বিরোধীদের জোটকে সমর্থন জানাচ্ছেন তিনি। বিনয় তামাং তাঁর সমর্থকদের বার্তা দিয়েছেন, যে সব জায়গায় তাঁর অনুগামীরা প্রার্থী হচ্ছেন না, সেসব জায়গায় জোটকে সমর্থন করার জন্য। তবে তাঁরও অবস্থান স্পষ্ট, এই সমর্থন শুধু পঞ্চায়েতের কথা মাথায় রেখেই। বললেন, ‘একদিকে শাসকের জোট তৈরি হয়েছে। আর অন্যদিকে বিরোধীরা সবাই এককাট্টা হচ্ছে।’ দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন গড়ে তুলতেই এই জোট বলে দাবি তামাংয়ের।

পাহাড়ে এমন শান্তি কখনও ছিল না, দাবি অনীত থাপার

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বেশ আত্মবিশ্বাসী অনীত থাপার দল। জোট নিয়েও বেশি চিন্তিত নন থাপা। বলছেন, ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সঙ্গে মানুষের জোট রয়েছে। আর মানুষের জোট যাদের সঙ্গে থাকে, তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক কম। উল্লেখ্য, গতকালই রাজু বিস্তার নেতৃত্বে বিরোধী মহাজোটের প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন। অশান্তির আশঙ্কা করছেন। ভোটের পরেও যাতে বাহিনী থাকে, সেই আবেদন করেছেন। তবে জিটিএ চেয়ারপার্সন বলছেন, পাহাড়ে সব ঠিকঠাকই রয়েছে। উৎসবের মেজাজে ভোটের কাজ চলছে।

গোর্খাল্যান্ডর ইস্যু ছাড়াও দাবি-দাওয়া আছে অনেক

দুই দশক পেরিয়ে পাহাড়ে আবার পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে। গোর্খাল্যান্ডের ইস্যু আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কিন্তু এসব ছাড়াও অনেক ছোট ছোট সমস্যা, দাবি দাওয়া রয়েছে পাহাড়বাসীর। বিশেষ করে পাহাড়ের গ্রামীণ এলাকাগুলিতে। চা বাগান, সিঙ্কোনা বাগান, পাহাড়ি বস্তি এলাকাগুলিতে। পঞ্চায়েত ভোট দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে সেই সবে অনেক সমস্যা হত এতদিন। রাজনৈতিক দলগুলির কেউ কেউ নিজেদের ইস্তাহারেও সেসব কথা বলছে। কিন্তু গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মাতামাতির চক্করে সেই সব দাবি-দাওয়াগুলি অনেক জায়গাতেই চাপা পড়ে যাচ্ছে। ভোটের পর ইস্তাহারের সেই সব প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণ হবে তো? সেই আশা নিয়েই আপাতত পাহাড়ের কোলে গণতন্ত্রের উৎসবে সামিল সাধারণ মানুষ।