নির্বাচনের আগেই প্রচারপত্রে ফলাফল! লিফলেট বিতর্কে উত্তাল চন্দ্রকোণা

 এই ঘটনায়, রাজনীতির সুর চড়িয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবির। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, হাতে ক্ষমতা রাখতে না পেরে বিভ্রান্তি ছড়াতে ওই দুটি লিফলেট তৈরি করেছে শাসক শিবির।

নির্বাচনের আগেই প্রচারপত্রে ফলাফল! লিফলেট বিতর্কে উত্তাল চন্দ্রকোণা
ভুয়ো লিফলেট, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Mar 31, 2021 | 9:50 PM

পশ্চিম মেদিনীপুর: দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে লিফলেট বিতর্কে উত্তপ্ত হয়ে উঠল চন্দ্রকোণা। বুধবার সকাল থেকে চন্দ্রকোণা বিধানসভার লক্ষ্মীপুর, শ্রীনগর-সহ বিভিন্ন এলাকায় মেদিনীপুর জেলা পুলিশের স্ট্যাম্প ও লোগো-সহ লিফলেট পড়ে থাকতে দেখা যায়। যেখানে লেখা রয়েছে ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল (TMC) ও বিজেপি (BJP) কে কোথায় এগিয়ে ও পিছিয়ে আছে। শুধু জেলা পুলিশ নয়, আরএসএসের লোগো দেওয়া এমনই আরও একটি লিফলেট পাওয়া গিয়েছে। ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

কী বলা হয়েছে সেই বিতর্কিত দুটি লিফলেটে? দুটি লিফলেটের বয়ান মোটামুটি একই। দুই ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল (TMC) এমনকী দুই মেদিনীপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিততে পারে তৃণমূলই (TMC)। দু’টি প্রচারপত্রেই জেলার দুই বিধানসভা কেন্দ্রের সমীক্ষাভিত্তিক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের প্রতীক দেওয়া লিফলেটের বয়ান অনুযায়ী, ‘১১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে কেশপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রায় ১৪-১৫ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।’

আরএসএসের লিফলেটেও চন্দ্রকোণা বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপি-র থেকে এগিয়ে রাখা হয়েছে তৃণমূলকে। এমনকি জেলায় বিজেপির খারাপ ফলের কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে। বলা হয়েছে, বিজেপির এই দুই নেতার সঙ্গে জনতার মতামত মিলছে না বলেই রাজ্যে বিজেপি-র এই দুরবস্থা। আরএসএসের নাম দেওয়া লিফলেটেও বলা হয়েছে, সমীক্ষার ভিত্তিতেই এই তথ্য এসেছে তাদের হাতে। তবে তাদের সমীক্ষার সময় ১৫-২৫ মার্চ।

২০২১-এর নির্বাচনের ‘হটস্পট’ নন্দীগ্রাম-সহ দুই মেদিনীপুরের মোট আঠারোটি আসনে নির্বাচন ১ এপ্রিল। কোনওভাবে যেন কোথাও কোনও অশান্তি না হয়, তার জন্য রীতিমতো কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। জেলা জুড়ে চলছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর রুট মার্চ। এই পরিস্থিতিতে কী করে নির্বাচনের ঠিক একদিন আগে এ ধরনের লিফলেট প্রকাশ্যে আসতে পারে তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। শুধু তাই নয়, লিফলেটে রয়েছে জেলা পুলিশের স্ট্যাম্পও। বঙ্গ নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে বারবার যখন পুলিশে রদবদল হচ্ছে, তখন কড়া প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে কী করে এমন ভুয়ো লিফলেট তৈরি হচ্ছে?

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সূ্ত্রে খবর, দুটি লিফলেট ভুয়ো। শুধু তাই নয়, এই ধরনের জাল প্রচারপত্র মাঝেমধ্যেই তৈরি করা হচ্ছে। পুলিশের প্রতীক জাল করে এই ধরনের মিথ্যা প্রচার গুরুতর অপরাধ। অপরাধীরা দ্রুত শাস্তি পাবে এমনটাই দাবি করছেন জেলা পুলিশ অধিকর্তারা।

এই ঘটনায়, রাজনীতির সুর চড়িয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবির। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, হাতে ক্ষমতা রাখতে না পেরে বিভ্রান্তি ছড়াতে ওই দুটি লিফলেট তৈরি করেছে শাসক শিবির। এমনকী আরএসএসের লোগো দেওয়া লিফলেটটিও শাসক শিবিরের কীর্তি বলেই কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। অন্যদিকে, তৃণমূলের দাবি, এই ঘটনায় ঘাসফুল শিবির কোনওভাবেই যুক্ত নয়। তৃণমূলের গায়ে কালি ছেটাতেই এই লিফলেট তৈরি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি এমনই আরও একটি ভুয়ো প্রচারের ঘটনা সামনে এসেছে। প্রশান্ত কিশোরের ভোট সমীক্ষা ফাঁস হয়েছে বলে একটি পরিসংখ্যান সামনে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে সংস্থার নামে ওই সমীক্ষাপত্রটি প্রকাশ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছিল, সেই সংস্থাই বৃহস্পতিবার টুইটারে একটি বিবৃতি দিয়ে জানায় পুরোটাই বিজেপির মিথ্যে অপপ্রচার।

আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম যেন কুরুক্ষেত্র! বিনা যুদ্ধে সূচগ্র মেদিনী ছাড়তে নারাজ মমতা-শুভেন্দু