BJP Clash in Singur: বিজেপির কর্মসূচিতে ‘আমন্ত্রিত নন’ মাস্টারমশাই, ‘নিজে কেন আসেননি?’, প্রশ্ন দলের

BJP in Singur: পাল্টা পদ্মনেতাদের দাবি, রবীন্দ্রনাথবাবুকে আমন্ত্রণ করা হলেও তিনি জানিয়েছিলেন, শারীরিক অসুস্থতা মিটলে তবেই ধরনা মঞ্চের কর্মসূচিতে যাবেন। কিন্তু, অসুস্থ অবস্থায় তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছিলেন মাস্টারমশাই।

BJP Clash in Singur: বিজেপির কর্মসূচিতে 'আমন্ত্রিত নন' মাস্টারমশাই, 'নিজে কেন আসেননি?', প্রশ্ন দলের
সিঙ্গুরে কি দানা বাঁধছে গোষ্ঠীকোন্দল? নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 14, 2021 | 7:00 PM

হুগলি:  মঙ্গলবার থেকে সিঙ্গুরে তিনদিনের ধরনা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। এই ধরনা ঘিরে ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। গত রবিবারই মঞ্চ বাঁধতে গিয়ে রাজ্য পুলিশের বাধার মুখে পড়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপির স্থানীয় নেতারা। যদিও ধরনা নিয়ে দল যে এক পা পিছু হঠবে না মঙ্গলবার সে বার্তাই দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু, এই ধরনা মঞ্চে অনুপস্থিত রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (Rabindranath Bhattacharjee) ওরফে ‘মাস্টারমশাই’। পাল্টা, পদ্মশিবিরের দাবি, জমি-আন্দোলনের নেতা হয়ে কেন নিজেই উপস্থিত হলেন না রবীন্দ্রনাথ? ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপির অন্দরেই কার্যত বিরোধের ছবি দেখছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

কেন অনুপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ? বর্ষীয়ান নেতার কথায়, “বিজেপির পক্ষ থেকে কোনওরকম আহ্বান আসেনি। কী করে জানব, কোন কর্মসূচি হচ্ছে? আমার কাছে কোনও খবর আসেনি।” এরপরেই ‘মাস্টারমশাই’-এর তাত্‍পর্যপূর্ণ উক্তি, “সিঙ্গুর কৃষকদের জমি। সেখানে চাষিদের জন্য কেউ কিছু করলে, যাতে কৃষকদের কল্যাণ সাধিত হয়, সেই রাজনৈতিক দলকে আমার স্বাগত।”

অন্যদিকে, পাল্টা পদ্মনেতাদের দাবি, রবীন্দ্রনাথবাবুকে আমন্ত্রণ করা হলেও তিনি জানিয়েছিলেন, শারীরিক অসুস্থতা মিটলে তবেই ধরনা মঞ্চের কর্মসূচিতে যাবেন। কিন্তু, অসুস্থ অবস্থায় তাঁর পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছিলেন মাস্টারমশাই। কিন্তু, মাস্টারমশাইয়ের নিজ উক্তি তো এর বিপ্রতীপ! তাতে অবশ্য গেরুয়া শিবিরের দাবি, একজন বর্ষীয়ান জমি আন্দোলনের নেতা, যিনি সিঙ্গুরে  পরিচিতই হন বাম শাসনের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আন্দোলন করে, সেখানে কেন বিজেপির কর্মসূচিতে তিনি নিজে এলেন না? বিশেষ করে যেখানে কৃষকদের পক্ষে সাত দফা দাবিতেই এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে?

এক বিজেপি নেতা অবশ্য সাফাইয়ের সুরে বলেছেন, “মাস্টারমশাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু, মাস্টারমশাই কেন বলছেন তিনি জানেন না তা বলতে পারব না। তবে শুনেছিলাম ওঁ অসুস্থ, তাই আসতে পারবেন না। রাজ্য নেতৃত্বের তরফ থেকে ওঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।” যদিও, রবীন্দ্রনাথের অনুপস্থিতি নিয়ে মুখ খোলেননি বিজেপির উচ্চ নেতৃত্ব।

প্রসঙ্গত, একুশের বিধানসভা নির্বাচন আবহে, তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর ভোটেও বেচারামের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্বিতা করেন। কিন্তু জয় মেলেনি। অন্যদিকে, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে দলের অন্দরেও ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকেই কার্যত দলীয় কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি বর্ষীয়ান নেতাকে। কার্যত, নিজেকে অনেকটা সরিয়েই রেখেছেন তিনি। এদিন, রবীন্দ্রনাথেরে অনুপস্থিতি ও তাঁর মন্তব্য বেশ তাত্‍পর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ট্রেন্ড বলছে, নির্বাচন আবহে যাঁরা ‘ফুলবদল’ করেছিলেন, ফল ঘোষণার পর পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুলে এসেছেন তাঁরা। সেই তালিকায় মুকুল রায় থেকে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বাদ নেই কেউ। তাহলে ফের ওই তালিকা কি দীর্ঘ হতে পারে? প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের। যদিও, এইধরনের কোনও সম্ভবনার উল্লেখ করেননি রবীন্দ্রনাথ নিজে। বিজেপি বা তৃণমূলের তরফেও এমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।

২০০৬ সালে সিঙ্গুরের সংগ্রামে মমতার সঙ্গী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সিঙ্গুরের কৃষিজমি বাঁচাতে মমতা, ২৬ দিন আমরণ অনশন করেছেন। বিডিও অফিসে মার খেয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছিল তাঁকে। সেই জমি রক্ষা আন্দোলনের পীঠস্থানে ২০১৬সালে বিধায়ক পদে লড়়তে চেয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কিন্তু রাজি হননি রবীন্দ্রনাথ, অন্তত এমনটাই জনসভা থেকে দাবি করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। ততদিনে যদিও বয়সের কারণে টিকিট না পেয়ে ‘অভিমানে’ দলত্যাগ করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

তৃণমূল প্রার্থী বেচারাম মান্নার সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় মমতা বলেছিলেন, ‘‘ভেবে পাই না মাস্টারমশাই কী করে বিজেপির হয়ে দাঁড়ান!’’ তৃণমূল নেত্রীর আরও সংযোজন ছিল, “মাস্টারমশাইকে আমি সম্মান জানাই। তাঁর বয়সটাকে সম্মান জানাই। আমি তো এত দিন তাঁকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছি। চার বার জিতিয়েছি। দু’বার আমাদের সময়েই। আমি নিজে বলেছিলাম, ‘মাস্টারমশাই আপনি আমাদের সকলের থেকে বয়ঃজ্যেষ্ঠ। তাই আপনি আমাদের অ্যাডভাইস করুন। আপনাকে কোনও একটা উপদেশ কমিটির চেয়ারম্যান বা কিছু করে দেব। সেখান থেকে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। আর আগামী পাঁচ বছরের জন্য বেচাকে (বেচারাম) এখানে কাজ করতে দিন। বেচা এখানকার লোকাল ছেলে। হরিপালে বিধায়ক ছিল। তাই ওখানে ওর বউকে দাঁড় করিয়েছি। মাস্টারমশাইকে আমি আজও সম্মান জানাই।”

যদিও, মুখ্যমন্ত্রীর সেই আবেদনে কার্যত সাড়া দেননি রবীন্দ্রনাথ। এ বার, কি বদলাতে পারে সমীকরণ? সেটা অবশ্য সময়ই বলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

আরও পড়ুন:  Locket Chatterjee in Singur BJP Protest: ‘আরেকটু পরে করলে ভাল হত, এখন যেতে পারব না…’