‘অ্যান্টি খবর করা যাবে না’, সাংবাদিককে ডেকে ‘চড় মারলেন’ তৃণমূল বিধায়ক

তিনি বলেন, "আমি জানাই আপনার সব মন্তব্য আমার কাছে রেকর্ডিং আছে। তারপর উনি তুই-তোকারিতে নেমে আসেন। হুঁশিয়ারি দেন, তুই কোনও খবর করতে পারবি না আজকের থেকে। এই বলে সটান চড় মারেন আমায়।"

'অ্যান্টি খবর করা যাবে না', সাংবাদিককে ডেকে 'চড় মারলেন' তৃণমূল বিধায়ক
'চড়' মারার ঠিক পরের ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 05, 2021 | 9:54 PM

জলপাইগুড়ি: সংবাদপত্রের সাংবাদিক তিনি। পেশায় ও নিষ্ঠায়। মঙ্গলবার এক্কেবারে পেশার টানেই খবর করেছিলেন, খবরের জন্য ছবি সংগ্রহ করেছিলেন তাঁর সতীর্থ চিত্র সাংবাদিকও। সে খবর কভারেজ করতে গিয়ে তলব করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এলাকার বিধায়ক। সাংবাদিক-সত্ত্বায় এগিয়েও যান তিনি। প্রথমে কয়েকটা ‘হম্বিতম্বি’ আর তারপরই ঠাঁটিয়ে থাপ্পড় গালে! এমনটাই অভিযোগ উঠল ময়নাগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেবের বিরুদ্ধে।

বেশ কিছুদিন ধরেই দলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই একাধিক মন্তব্য করে চলেছেন ময়নাগুড়ির বিধায়ক। মূলত ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে। সেই খবর সংগ্রহ করাতেই ‘গোঁসা’ হয় বিধায়কের। মঙ্গলবার ময়নাগুড়িতে একটি ‘ওপেন জিম’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে আসেন অনন্তদেব। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বিধায়ক ওই সাংবাদিককে ডাকেন। খবর নিয়েই তাঁদের মধ্যে বদানুবাদ শুরু হয়। এরপরই বিধায়ক সপাটে তাঁর গালে চড় মারেন।

সেই সময় আকস্মিকতার রেশ কাটিয়ে উঠেই সাংবাদিকের সঙ্গে থাকা চিত্র সাংবাদিকও ক্যামেরা ‘প্যান’ করেন বিধায়কের দিকে।  ময়নাগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারীর গোটা ‘কীর্তিই’ তখন লেন্সবন্দি। এগিয়ে এসেছেন সে সময় সেখানে থাকা সমস্ত সাংবাদিকরাই। এক নামী সংবাদপত্রের সাংবাদিককে ডেকে ‘চড়’ মারার খবর ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে উল্কাগতিতে।

প্রথমে চড় মারার কথা অস্বীকার করলেও চাপে পড়ে তা স্বীকার করে নেন অনন্তদেব। তাঁর সাফাই, “অনেক দিন ধরেই আমার বিরুদ্ধে একের পর এক খবর করছিল। এভাবে কী মাথা ঠান্ডা রাখা যায় বলুন!” বিধায়কের সাফাই শুনে স্তম্ভিত বিভিন্ন মহল। ভিডিয়োয় চড় মারার দৃশ্য না ধরা পড়লেও বিধায়ক এবং সাংবাদিকের মধ্যে উত্তেজিত কথাবার্তা হতে দেখা গিয়েছে।

আক্রান্ত সাংবাদিকের অভিযোগ, বিধায়ক তাঁকে ডেকে অ্যান্টি খবর না করার হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “আমি জানাই আপনার সব মন্তব্য আমার কাছে রেকর্ডিং আছে। তারপর উনি তুই-তোকারিতে নেমে আসেন। হুঁশিয়ারি দেন, তুই কোনও খবর করতে পারবি না আজকের থেকে। এই বলে সটান চড় মারেন আমায়।”

দলের বিধায়কেরই এই কাজের প্রতিবাদে সোচ্চার তৃণমূলের একাংশ। প্রাক্তন সাংবাদিক তথা উত্তরপাড়া তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল বলেন, “এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। গণতন্ত্রের পক্ষে খারাপ। এটা সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণ নেমে আসা। যদি কোনও ব্যাবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে দলের বিরুদ্ধে ভুল বার্তা যাবে। দৃষ্টান্তমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত।” তৃণমূল মুখপাত্র তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, “সাংবাদিককে যদি উনি চড় মেরে থাকেন তাহলে ঠিক করেননি। তবে তেমন কোনও প্ররোচনা ছিল কিনা সেটাও দেখা দরকার।”

জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি কিষাণ কল্যাণী জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের কাছ থেকে ঘটনাটা শুনেছি। ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। তৃণমূল সাংবাদিকদের সঙ্গে সবসময় ভাল ব্যবহার করে। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের তরফ থেকে লিখিত দেওয়া হলে, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নিন্দায় সরব বিজেপিও। এ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রবীণ সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত বলেন, “সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্রের চারটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। সাংবাদিককে আঘাত করা মানে গণতন্ত্রকে আঘাত করা। এই ঘটনার আমি তীব্র নিন্দা করছি। মনে করি যিনি একাজ করেছেন সকল স্তরের সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাঁর প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ।”

আরও পড়ুন: মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুপস্থিতির হ্যাটট্রিক রাজীবের! এলেন না পার্থ, সুজিত, অরূপরাও

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংবাদমাধ্যমের ওপর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিষোদগার বারবার প্রকাশ্যে আসছে। কিছুদিন আগেই তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলের খবর করতে গিয়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের আক্রমণের শিকার হন এক সাংবাদিক। ‘দু পয়সার সাংবাদিক’ বলে ‘অপমানিত’ করা হয় গণতন্ত্রকে। সে বারও বিতর্ক কম হয়নি। নিজের কৃতকর্মের অনুশোচনা তো নয়ই, বরং একটা টুইট করে আরও বিতর্ক বাড়িয়েছিলেন মহুয়া। বহু সংবাদমাধ্যম তাঁকে বয়কট করেছে। আবারও এক বিধায়ক। কিন্তু সমাজেই উঠছে প্রশ্ন, এবার খবর করতে গিয়ে কেন আক্রান্ত হতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমকে? উল্লেখ্য মহুয়া মৈত্রের সময়ে যখন বিকর্ত দানা বেঁধেছিল, সেসময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “সাংবাদিকরা আমাদের গণতন্ত্রের স্তম্ভ। তাঁদের অপমান মেনে নেওয়া যায় না।” তারপরও দলেরই বিধায়কের এই ঘটনায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে।