Mamata Banerjee On R G Kar: সঞ্জয়ের ফাঁসির প্রশ্নে মমতার আরও এক ‘মাস্টারস্ট্রোক’! ঘুরিয়ে ‘চাপ’ কেন্দ্রকে
Mamata Banerjee On R G Kar: রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজা না হওয়ায় অপরাজিতা বিলকে সামনে রেখে কেন্দ্রের কোর্টেই কার্যত বল ঠেলে দিলেন মমতা। এর আগে মমতা বারবার দাবি করেছেন, কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই সিলমোহর দেয় সিবিআই।
মালদহ: আরজি কর মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন শিয়ালদহ আদালতের ফাস্ট জাজ অনির্বাণ দাস। ফাঁসির সাজা হয়নি সঞ্জয়ের। এই রায় নিয়ে ইতিমধ্যেই চর্চা শুরু হয়েছে। নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য। আরজি করের রায় নিয়ে এবার বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “কী করে বলে জাজমেন্ট? একটা জাজমেন্ট আমার পছন্দ হয়নি। কী করে বলতে পারেন যে এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়?”
কথা প্রসঙ্গে তিনি তুলে আনেন রাজ্যের অপরাজিতা বিলের বিষয়। আরজি করের নৃশংস ঘটনার পরই বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাশ করায় রাজ্য সরকার। সর্বসম্মতিতেই ‘দ্য অপরাজিতা ওয়েস্ট বেঙ্গল উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড’ (ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্রিমিনাল ল’জ়) সংশোধনী বিলটি পাশ হয় গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। সেখানে ধর্ষণের মতো অপরাধের সাজা মৃত্যুদণ্ড বলেই উল্লেখ করা হয়েছে। সেই বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলেই তা আইনে পরিণত হবে। আর জট সেখানেই। সেই অনুমোদন এখনও মেলেনি বলে এ দিন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাশ করেছি। আমরা ডেথ পেনাল্টি রেখেছি সেখানে। শাস্তি রেখেছি। অ্যাসিডেও মুখ পুড়িয়ে দেয়, সেই অপরাধেও শাস্তি রেখেছি। কিন্তু সেই বিল এখনও পাশ করায়নি কেন্দ্রীয় সরকার। ফেলে রেখে দিয়েছে। আমরা সেটা একটা মডেল তৈরি করা হোক। দেশে এটা মেনে নেওয়া হোক।” রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজা না হওয়ায় অপরাজিতা বিলকে সামনে রেখে কেন্দ্রের কোর্টেই কার্যত বল ঠেলে দিলেন মমতা। এর আগে মমতা বারবার দাবি করেছেন, কলকাতা পুলিশের তদন্তকেই সিলমোহর দেয় সিবিআই। অর্থাৎ একদিকে সিবিআইয়ের ব্যর্থতা অন্যদিকে অপরাজিতা বিল না পাশ হওয়া, এই দুইয়ের জাঁতাকলে কেন্দ্রকে বিঁধতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
তবে, আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ন্যায় সংহিতা নয়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৩ ধারায় লেখা ছিল, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কোনও আসামী যদি খুন করে, তবে তার সাজা একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হবে। কিন্তু ১৯৮৩ সালের ‘মিঠু বনাম স্টেট অফ পঞ্জাব’ নামে একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, ভারতীয় দণ্ডবিধির ওই ধারা সংবিধান-বিরোধী। তাঁদের পর্যবেক্ষণ ছিল, যদি কোনও অপরাধের শাস্তি হিসাবে একমাত্র মৃত্যু হয়ে থাকে, তা সংবিধানবিরোধী। তবে, মৃত্যুদণ্ড বিরলের মধ্যে বিরলতম কেসে দেওয়া হয়ে থাকে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরাজিতা বিল অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে। শুধুমাত্র কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে এমন আইন বলবৎ করা যায় কিনা তা আলোচনা সাপেক্ষ। মহারাষ্ট্র সরকারও এমন বিল পাশ করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠলেও এখন পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি।
আরজি করের রায় প্রসঙ্গে এদিন নিম্ন আদালতের পর্যবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনেক কেসে আমরা দেখেছি ২-৩ বছরে বেরিয়ে গিয়েছে। পে রোলে বেরিয়ে যায়। অন্যায় করলেও ক্ষমা করে দেব? এই কেসটায় আমি সত্যিই শক।” শিয়ালদহ আদালতের বিচারক অনির্বাণ দাসের পর্যবেক্ষণ, ‘বিরলতম’ ঘটনা নয় বলেই সঞ্জয়ের ফাঁসি হয়। আর সেক্ষেত্রে প্রশ্ন তুলেই মমতা বলেন, “কী করে বলে জাজমেন্ট? একটা জাজমেন্ট আমার পছন্দ হয়নি। কী করে বলতে পারেন যে এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম নয়? আমি মনে করি, এটা রেয়ার, সেনসেটিভ কেস। ক্রাইম করে যদি কেউ বেঁচে যায়, সে তো আবারও ক্রাইম করার চেষ্টা করবে। সেটাকে প্রোটেকশন করা আমাদের কাজ নয়।”
আর এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়েই নিজের আইন-প্র্যাকটিসের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমি নিজেও একজন লইয়ার ছিলাম। আমি আইনটা পড়েছি। কুমারগঞ্জে যখন, গুলি চলেছিল পার্থ সিংহ বর্মনের হয়ে, সেদিন বালুরঘাট কোর্টে ছাত্রছাত্রীদের হয়ে কোট পরে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি অনকেগুলো আদালতে কেস করেছি।”