‘ভ্যাকসিন হিরো’: রোজ ২০০ মানুষকে টিকা দেওয়া যাঁর সংকল্প, যে লাইনে ক্ষোভ নেই, আছে আশ্বাস
অন্যান্য অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে যখন টিকা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ চলছে তখন এখানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। যেন খুশির টিকাকরণ। সৌজন্যে সমাজকর্মী আশিস কুন্ডু।
মালদহ: তিনি এখন সবার কাছে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ (Vaccine Hero)। এই নামেই তাঁকে ডাকছেন সবাই। ভ্যাকসিনেশন নিয়ে যখন এলাকায় এলাকায় বিস্তর অভিযোগ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ একরকম নাজেহাল প্রশাসন, তখন তাঁর একার উদ্যোগে এলাকায় সুষ্ঠুভাবে চলছে টিকাকরণের কাজ। রোজ ২০০ মানুষকে টিকা দেওয়া যেন তাঁর সংকল্প। নাম আশিস কুন্ডু। একসময় ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান। তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর। যদিও এখানে তিনি রাজনৈতিক গণ্ডির বাইরে এসে কাজ করছেন। মালদহের রামকৃষ্ণ পল্লীর ধীরেন সাহা স্কুলে টিকাকরনের ব্যবস্থা হয়েছে সম্পূর্ণ ভাবে এই আশিস কুন্ডুর উদ্যোগে।
গত একমাসের বেশি সময় ধরে আশিস বাবু চালাচ্ছেন ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্যাম্প। এমনিতেই বিভিন্ন সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত তিনি। তবে করোনা আবহে তাঁর দায়িত্ব যেন শতগুণ বেড়ে গিয়েছে। লক্ষ্য, সবাইকে টিকা দিয়ে অতিমারির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ভ্যাকসিন নিয়ে চরম সঙ্কটের মধ্যে কার্যত একা লড়ে চলেছেন এই ব্যক্তি। যাঁর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মালদহ জেলা প্রশাসনও এবার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। টিকা সরবরাহের ব্যবস্থা করছে।
মালদার রামকৃষ্ণ পল্লীর ধীরেন সাহা স্কুলে টিকাকরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভাবে আশিস কুন্ডুর উদ্যোগে। না, কোনও সংস্থা বা রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। উদ্যোক্তা তিনি একা। পরিচালনাতেও একা। সব থেকে বড় বিষয় হল সমাজের প্রান্তিক মানুষরাই টিকা পাওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন তাঁর কাছে। রিকশাচালক, টোটোচালক, অটোচালক থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ, পরিবারের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে যাঁদের এই অতিমারিতে বাইরে বেরতেই হয়, তাঁরা আগে টিকা পাচ্ছেন আশিসবাবুর সহযোগিতায়। আর সেই সব টিকা পৌঁছচ্ছে রাজ্য সরকার থেকে জেলা প্রশাসনের মারফত তাঁর হাত ধরে। এই এলাকায় তাই টিকা নিয়ে তেমন ক্ষোভ-বিক্ষোভ নেই।
ভোর হলেই তিনি খুলছেন ক্যাম্প। সারাদিন ধরে সেখানে চলছে টিকা দেওয়ার কাজ। তবে শুধু ভ্যাকসিন দিয়েই দায়িত্ব সারছেন না আশিসবাবু, মানুষকে করোনা নিয়ে সচেতনও করছেন তিনি। নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজের ফোন নম্বর, যাতে টিকা নিতে হলে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন এলাকার মানুষ।
আরও পড়ুন: বাড়িতে খিল দিল পরিবার, করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধাকে হাসপাতালে পাঠাল রেড ভলান্টিয়ার
রোজ বিভিন্ন পেশার মানুষ ছুটে আসছেন এই ক্যাম্পে। কোনওদিন শিক্ষক, কোনওদিন আইনজীবী, কোনওদিন পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত মানুষ, কোনওদিন শ্রমিক। এভাবেই বিভিন্ন ভাবে ভাগ করে সুষ্ঠু ভাবে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন আশিস কুন্ডু। ভিড় হচ্ছে খুব। কিন্তু সেই লাইনে মানুষের কোনও ক্ষোভ নেই। নিয়ম মেনে যত্নের সঙ্গে টিকা দেওয়া হচ্ছে। খুশি সাধারণ মানুষ।
অন্যান্য অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে যখন টিকা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ চলছে তখন এখানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। যেন খুশির টিকাকরণ উৎসব। যে লাইনে নেই ক্ষোভের ছিঁটেফোঁটা, রয়েছে ভালো থাকার আশা ও আশ্বাস। সৌজন্যে সমাজকর্মী আশিস কুন্ডু।