AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

অধীর গড়ে তৃণমূলের থাবা, ‘হাত’ ছাড়া মালদহও

Assembly Election Result 2021 একদিকে বিজেপি থেকে কোণঠাসা করা, অন্যদিকে কংগ্রেসকে সাফ —একুশের ভোটে নিঃসন্দেহে এই দুই জেলায় 'ক্যারিশ্মা' দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

অধীর গড়ে তৃণমূলের থাবা, 'হাত' ছাড়া মালদহও
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ।
| Updated on: May 03, 2021 | 5:59 PM
Share

কলকাতা: রাজ্যে এক সময় কংগ্রেসের (Congress) দুই গড় ছিল মুর্শিদাবাদ ও মালদহ। ৩৪ বছরের বাম শাসন থেকে তৃণমূলের উত্থানপর্ব, এই দুই জেলায় হাত দিতে পারেনি কেউ। একদিকে গনি খানের পরিবার আগলে রেখেছে মালদহ। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ সামলেছেন সেখানকার ‘রবিনহুড’ অধীর চৌধুরী। কিন্তু সময়ের স্রোতে পরিবর্তন যে অবসম্ভাবী। কালের এই অমোঘ সত্যিকে টলাবে কে! একুশের বিধানসভা ভোটে এই দুই জেলায় তাই বোধ হয় ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল কংগ্রেস। শুধু তাই নয় গত লোকসভা ভোটে যে বিজেপি মালদহের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে ছিল, এবার সেখানেও তৃণমূলের থাবা।

রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর একটু একটু করে মালদহ, মুর্শিদাবাদে সাংগঠনিক শক্তি বাড়াচ্ছিল তৃণমূল। তবে অধীরের গড় বা নবাবের জেলায় ঢুকে পড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য মোটেই ততটা সহজ ছিল না। এই দুই জেলা হাতে পেতে মমতা এগিয়ে দেন তাঁর দলের এক সময়ের নেতা, যোগ্য সৈনিক শুভেন্দু অধিকারীকে। শুভেন্দু-ম্যাজিকে এরপর পঞ্চায়েত ভোট, বিধানসভা নির্বাচন, লোকসভা ভোটে তৃণমূল মালদহ, মুর্শিদাবাদে খাতা খুলতে থাকে।

২২ বিধানসভা আসনের মুর্শিদাবাদ জেলায় ২০১৬ সালে ১৪টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। এবার ২০ আসনে ভোট হয়েছে। শূন্য ‘হাত’। ২টি বিজেপি, বাকি তৃণমূল। এভাবে যে অধীরকে নিজের জেলা হারাতে হবে তিনি নিজেও বোধহয় ভাবেননি। অন্যদিকে তৃণমূলের কাছেও এ জয় নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, অধীরের জেলায় ঢুকে সংগঠন বাড়ানো মমতার কাছেও চ্যালেঞ্জ ছিল। এ লড়াইয়ে তিনি ভরসা রেখেছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর উপর।

আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটে গেরুয়া কেতন উড়েছিল জঙ্গলমহলে, ঘাসফুলের দাপটে এবার সে সব অতীত

এদিকে শুভেন্দু ভোটের কয়েক মাস আগে তৃণমূল ছাড়তেই দিকে দিকে ‘দাদার অনুগামী’দের ভিড়। মনে হয়েছিল এবার বোধহয় মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের কঠিন লড়াই। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা গেল ‘দাদার অনুগামী’দের উপর ‘দিদির অনুপ্রেরণা’ই বেশি খেটে গেল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুর্শিদাবাদে ব্যক্তিগতভাবেও শুভেন্দু যে সংগঠন তৈরি করেছিলেন, তাতেও বিজেপি মাত্র দুই। এ তো শুভেন্দুর সাংগঠনিক দূরদর্শিতাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়।

একই ছবি দেখা গিয়েছে মালদহেও। এ জেলার ১২ আসনের মধ্যে চারটিতে বিজেপি। বাকি সবকটাতেই তৃণমূল জয়ী হয়েছে। এমনকী এ জেলার যে একটি মাত্র আসনে ২০১৬ সালে বিজেপি জিতেছিল, সেই বৈষ্ণবনগরও খুইয়েছে। সেখানেও তৃণমূলের জয়। হবিবপুর ও গাজোল, এমন দু’টি আসন যেখানে দলবদলের রাজনীতি পুরনো। একদিকে খগেন মুর্মু, অন্যদিকে দিপালী বিশ্বাস। ভোটের মুখে ‘দাদার অনুগামী’ সিপিএম ও তৃণমূল ঘোরা দিপালী যোগ দিলেন বিজেপিতে। খগেন মুর্মুও এক সময় লাল ঝান্ডা বয়েছেন। পরে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন। এ দু’টিতে বিজেপি জিতেছে। সঙ্গে ইংলিশবাজার, মালদহেও বিজেপি জয়ী। লোকসভা ভোটেও এ দুই আসনে এগিয়ে ছিলেন মোদী-শাহের সমর্থকরা। লোকসভায় এগিয়ে থাকলেও হারাতে হয়েছে মানিকচক। বাকি চাঁচল, মালতিপুর, মোথাবাড়ি, সুজাপুর কংগ্রেসের হাত থেকে জিতে নিয়েছে তৃণমূল।

একদিকে বিজেপিকে কোণঠাসা করা, অন্যদিকে কংগ্রেসকে সাফ —একুশের ভোটে নিঃসন্দেহে এই দুই জেলায় ‘ক্যারিশ্মা’ দেখিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাথায় রাখতে হবে, এই মালদহের দায়িত্বও ছিল শুভেন্দু অধিকারীর উপরই। এ জেলাতেও তৃণমূলের সংগঠন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে নিজের একটা শক্তি বাড়িয়েছিলেন তিনি। তবে এখানেও ‘দাদার অনুগামী’রা অনুপ্রাণিত হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খেলা’তেই। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, মমতার এই দুই জেলায় ‘খেলাও হল, জেতাও হল’।