Asansol Mafias : নদীর পর এবার নজর পাহাড়ে! আস্ত পাহাড় কেটে কোয়ার্টজ পাথর চুরির চেষ্টা মাফিয়াদের

Asansol Mafias : গোটা পাহাড় কেটে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে পাথর মাফিয়ারা। রীতিমত ডিনামাইট ফাটিয়ে এই পাথর কাটার কাজ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।

Asansol Mafias : নদীর পর এবার নজর পাহাড়ে! আস্ত পাহাড় কেটে কোয়ার্টজ পাথর চুরির চেষ্টা মাফিয়াদের
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 20, 2022 | 7:53 PM

আসানসোল : গোটা পাহাড় কেটে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে পাথর মাফিয়ারা। সালানপুরের দেন্দুয়া পঞ্চায়েত এলাকার ছোট্ট একটি পাহাড়। স্থানীয়রা বলেন “ধ” পাহাড়। পাহাড়টি কোয়ার্টজ পাথরে সমৃদ্ধ। তাতেই কু নজর পড়েছে মাফিয়াদের। দেন্দুয়া জল ট্যাঙ্কির পেছনে জঙ্গলের ধারে বড় ফুটবল মাঠ। সেই মাঠের শেষে খানিকটা চোখের আড়ালে এই ‘ধ’ পাহাড়। তবে এইবার আস্ত একটা পাহাড় কেটে মূল্যবান স্ফটিক পাথর চুরির অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। এবার আর শাবল গাঁইতি নয়, রীতিমত ডিনামাইট ফাটিয়ে এই পাথর কাটার কাজ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। কিছুদিন ধরেই দেন্দুয়ার বাসিন্দারা দেখতে পান রীতিমত গাঁইতি শাবল দিয়ে পাহাড় কেটে ট্রাক্টর ভর্তি করে দুষ্কৃতীরা কোয়ার্টজ পাথর পাচার করে দিচ্ছে। এমনকি ডিনামাইট বিস্ফোরণ ঘটিয়েও পাহাড় ফাটানো হচ্ছিল বলেও অভিযোগ।

গ্রামবাসীদের একাংশ মিলে এই বেআইনিভাবে পাথর চুরির প্রতিবাদ করেন। ট্রাক্টর বোঝাই করে এই পাথর চলে যাচ্ছে ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ায়। কোয়ার্জ পাথর বোঝাই ট্রাক্টর পিছু দাম দশ হাজার টাকা। এই জামতাড়ায় রয়েছে বেশ কিছু লাওপালার কারখানা। সেখানেই সড়ক পথে বা মাইথনের জলাধার থেকে নৌকা করে পাথর পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এই সাদা পাথর চুরির খবর আগেও টিভি নাইন বাংলা দেখিয়েছে। মাইথনের জলাধার থেকেও মাটি খুঁড়ে লাগাতার এই পাথর চুরি হয়। সালানপুরের দেন্দুয়া ও আল্লাডি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মাইথন বাঁধের উল্টো প্রান্তের নদের পাড় লাগোয়া এলাকায় গেলে দেখা মিলবে মাটি খুঁড়ে কোয়ার্টজ বা স্ফটিক পাথর তুলে সারি সারি জমা করে রাখা আছে। সিদাবাড়ি, বাথানবাড়ি, হদলা, কালীপাথর অঞ্চলে এই কাজে জড়িত রয়েছেন কয়েকশো মানুষ। জানা গিয়েছে, সেখানে ঝুড়ি পিছু ১০০ টাকা মজুরিতে এই পাথর তোলার কাজ করেন স্থানীয়রা। দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঝোড়া পাথর তুলতে পারলেই আয় দৈনিক প্রায় ৫০০ টাকা। ক্রাশারে এই সাদা পাথর গুঁড়ো করে বস্তাবন্দি করে নানা জায়গায় পাচার করা হয়।

কোয়ার্টজ পাথর কী কাজে লাগে ?

এই পাথর সিরামিক, টাইলস বা লাওপালা কাপ ডিশ তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মার্বেল ও মার্বেল সামগ্রী পালিশের কাজেও ব্যবহৃত হয়। আজকাল অ্যাকারিয়ামের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও এই পাথর বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই খনিজ তোলার ব্যাপারে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় কোনও সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়নি। গরিব মানুষকে এক ধরনের অসাধু মানুষ এই কাজে নামাচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় মাহাতো নামে এক যুবকের নাম উঠে এসেছে গোটা ঘটনায়। তাঁর দাবি, পাহাড়ের নিচেই তাঁর নিজস্ব জমি ছিল। সেই জমি পুকুর করে দেওয়ার জন্য কাটছিল সালানপুরের শ্যামসের বলে কেউ। শ্যামসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সে মেশিন বসিযে মাটি কেটে পুকুর তৈরি করে দেবে। ওই পুকুরে মাছ চাষ হবে। আর ওই মাটি শ্যামসের নিয়ে যাবে। কিন্তু ওই ব্যক্তি আসলে মাটির নিচের পাথর চুরির কাজ করছিল। এমনকি তাঁর জমি ছাড়িয়ে পাহাড়ের জঙ্গলও সাফ করে মাটি খুঁড়ে কোয়ার্টজ পাথর চুরি করছিল। এই বিষয়টি সঞ্জয় মাহাতোর জানা ছিল না বলে জানিয়েছেন তিনি।

ধরা পড়ার পর বাপী মাহাতো নামে স্থানীয় যুবকের দাবি, এই পাথর কাটা যে বেআইনি সেটা তার জানা ছিল না। তাই নিজের ট্রাক্টরে করে শ্যামসেরের কাছে সে পাঠাচ্ছিল পাথরগুলি। জেলাশাসক এস অরুণপ্রসাদ পুরো ঘটনার খবর নিয়ে স্বীকার করেছেন পাহাড় কেটে সাদা পাথর চুরি চলছিল। বিষয়টি জানার পরেই তিনি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। মাফিয়াদের কু নজর পড়েছে এই পাহাড়ে। তাই গ্রামবাসীরা “ধ” পাহাড়কে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছে প্রশাসনের কাছে।

আরও পড়ুন : Assansol Murder: গুলি করে ‘খুন’ খনিকর্মীকে, উত্তপ্ত কুলটি