সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর! একই দিনে CID ও CBI পৌঁছল নন্দীগ্রামে

Post Poll Violence: নন্দীগ্রামে একইদিনে সিআইডি ও সিবিআই আধিকারিকদের তদন্তে আসার নেপথ্যে রাজনৈতিক চাল থাকতে পারে বলেই অনুমান করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। 

সেয়ানে-সেয়ানে টক্কর! একই দিনে CID ও CBI পৌঁছল নন্দীগ্রামে
অলঙ্করণ: অভিজিত্‍ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 31, 2021 | 3:42 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে ( Post Poll violence) মঙ্গলবার  সকালে বঙ্গ নির্বাচনের ভরকেন্দ্র নন্দীগ্রামে এসে পৌঁছলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা। নন্দীগ্রামের পাশাপাশি খেজুরিতেও ‘স্পট ভিজিট’ সারতে পারেন সিবিআই আধিকারিকরা এমনটাই খবর সূত্রের। অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুলিয়া বাজারে আঘাত লাগার ঘটনায় এদিনই তদন্তে এল সিআইডি।

মঙ্গলবার, নন্দীগ্রামের ১ নম্বর ব্লকের কেন্দামারী, চিল্লগ্রাম, মহম্মদপুর,গোকুলনগর-সহ একাধিক এলাকা পরিদর্শনে আসেন তদন্তকারীরা। বিজেপি কর্মী  দেবব্রত মাইতির খুনের তদন্তে এদিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এলাকা পরিদর্শন করেন। অন্য়দিকে বিরুলিয়া বাজারে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ে আঘাত লাগার ঘটনায় বিরুলিয়া বাজার চত্বর ঘুরে দেখার পাশাপাশি, স্থানীয়দের সঙ্গেও কথা বলেন সিআইডি আধিকারিকরা।

বঙ্গ নির্বাচনের ভরকেন্দ্র নন্দীগ্রামের মাটিতে  তৃণমূলের পক্ষ থেকে ছিলেন খোদ মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়, বিজেপির তরফে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শুভেন্দু অধিকারী। জমি আন্দোলনের মাটি নন্দীগ্রাম একুশের নির্বাচনেও সন্ত্রাসমুক্ত হয়ে উঠতে পারেনি। নির্বাচনের আগে প্রচারে গিয়ে বিরুলিয়া বাজারে পায়ে চোট পান মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনায় তৃণমূল সুপ্রিমো অভিযোগ করেন তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকী, নির্বাচনের পরে ঘটনায় সিআইডি তদন্ত করা হবে বলে নির্দেশও দিয়েছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী। শুধু তাই নয়, প্রথম দফা ভোটের ঠিক আগের রাতে ২৬ মার্চ  রবীন মান্না-সহ বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। সেই হামলায় গুরুতর আহত হন রবীন। তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হতে থাকায়  এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। দুই সপ্তাহ পর সেখানেই মারা যান রবীন। প্রকাশ্য জনসভায় রবীনের মৃত্যুর অনুষঙ্গ উত্থাপন করে নির্বাচনে জয় পেলেই সিআইডি তদন্ত করা হবে বলে নির্দেশ দেন মমতা। পরবর্তীতে সিআইডি আধিকারিকদের হাতে গ্রেফতার হন বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা। মঙ্গলবার, বিরুলিয়া বাজারে মুখ্য়মন্ত্রীর পায়ে চোট লাগার ঘটনার তদন্তে আসেন সিআইডি আধিকারিকরা।

অন্যদিকে, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জেরে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতিকে খুন করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, গত ৩ মে ওই বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সঙ্গে চিল্লগ্রামে বিজেপি কর্মীদের বাড়ি লক্ষ করে ব্যাপক হামলা চালানো হয়। ঘরবাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি ব্যাপক মারধর করা হয় বিজেপি কর্মীদের। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতিকে প্রথমে নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তমলুক জেলা হাসপাতালে ও পরে কলকাতা এসএসকেএমে পাঠানো হয়। ১৩ মে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত দেবব্রত ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। পরবর্তীতে মে মাসেই নন্দীগ্রামে ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের ঘটনা খতিয়ে দেখতে শুভেন্দুর সঙ্গে মৃত দেবব্রতের বাড়িতে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও।

অন্যদিকে, গত ৫ মে খেজুরির বারাতলা অঞ্চলে মালদহ ১৬২ নম্বর বুথ এলাকায় বিজেপি সমর্থক বিধবা মহিলা অপর্ণা দাসকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। এমনকী, তাঁর মুখে বিষ ঢেলে শ্বাসরোধ করে খুন করার  অভিযোগ ওঠে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে প্রথমে কমারদা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতালে ও পরে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে, তমলুকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জুন মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। মঙ্গলবার সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বিশেষ প্রতিনিধি দল অপর্ণা দাসের বাড়িতে সরেজমিনে আসেন। নির্যাতিতার পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, রাজ্যে  ১৫টি খুন ও ৬ টি ধর্ষণের মামলায় নতুন করে আরও ১০ টি এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় দিল্লিতে সিবিআই-এর সদর দফতরে ৯টি এফআইআর রুজু করা হয়েছিল আগেই। পরবর্তীতে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্য়া বেড়ে দাঁড়ায় ২১টি।রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে। দুই দলকেই আগামী ৬ সপ্তাহের মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে আদালত। সেই মোতাবেক, চার জোনে ক্যাম্প করে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (CBI)।

তবে, নন্দীগ্রামে একইদিনে সিআইডি ও সিবিআই আধিকারিকদের তদন্তে আসার নেপথ্যে রাজনৈতিক চাল থাকতে পারে বলেই অনুমান করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।  যে নন্দীগ্রামের মাটি থেকে একদা লড়াই  শুরু করেছিলেন মমতা ও শুভেন্দু, সেই মাটিতেই আজ তাঁরা যুযুধুান প্রতিপক্ষ। নির্বাচনেও একে অপরকে ‘কাঁটে কা টক্কর’ দিয়েছেন উভয়কেই। যদিও, শেষ পর্যন্ত ফোটো ফিনিশে নন্দীগ্রামের মাটিতে জয় পেয়েছেন অধিকারী পুত্র। কিন্তু, ভোটঅঙ্কে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল শাসক শিবির। সেই উভয়পাক্ষিক বিরোধ হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। এ হেন ‘যুদ্ধ শিবিরে’ একই দিনে কেন্দ্র ও রাজ্য় গোয়েন্দার প্রতিনিধিদলকে প্রেরণ যে নিছক ‘কাকতালীয়’ নয় এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে প্রথম গ্রেফতার ২, আরও ১০ টি এফআইআর দায়ের সিবিআইয়ের