‘মুকুল রায় হেভিওয়েট হলে কি আমি লাইট ওয়েট’! তোপ কৌশানীর, নীরব ‘চাণক্য’
গেরুয়া শিবিরের চাণক্যকে নিশানা করে এদিন কৌশানী আরও বলেন, ‘গত ২০ বছর আগেই নির্বাচকমণ্ডলীর দ্বারা উনি প্রত্যাখ্যাত। কোনও নির্বাচনে মুকুল রায় আজ পর্যন্ত জেতেননি।
নদিয়া: তাঁরা দু’জনেই প্রার্থী। একজন নবীন, অন্যজন প্রবীণ। একজন বঙ্গ রাজনীতির অধুনা ‘চাণক্য’, অন্যজন তারকা। তাঁরা কৌশানী মুখোপাধ্যায় (Kaushani Mukherjee) ও মুকুল রায় (Mukul Roy)।
বঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ঘুঁটি সাজানো প্রায় শেষ শাসক ও বিরোধী শিবিরের। তৃণমূলের কৃষ্ণনগর উত্তরের প্রার্থী হয়েছেন অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। অন্যদিকে, দীর্ঘ জল্পনার পর বিজেপির তরফে একই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন একদা জোড়াফুলের কাণ্ডারি তথা অধুনা বিজেপির সংগঠক মুকুল রায়। ফলে নির্বাচনী লড়াই হাড্ডাহাডি হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।
যদিও, নিজের বিপরীতে মুকুল রায়ের মতো বর্ষীয়ান নেতাকে ‘হেভিওয়েট’ বলতে নারাজ কৌশানী। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী স্পষ্টই বলেন, “প্রথমত, মুকুল রায়কে আমরা হেভিওয়েট নেতা হিসেবে মানি না। এটা আরোপিত। দ্বিতীয়ত, উনি হেভিওয়েট হলে কি আমি লাইট ওয়েট নেত্রী? আমাদের লড়াই সমানে সমানে হবে। ভারতের একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
গেরুয়া শিবিরের (BJP) চাণক্যকে নিশানা করে এদিন কৌশানী আরও বলেন, “গত ২০ বছর আগেই নির্বাচকমণ্ডলির দ্বারা উনি প্রত্যাখ্যাত। কোনও নির্বাচনে মুকুল রায় আজ পর্যন্ত জেতেননি। তাহলে উনি হেভিওয়েট কেন হবেন? ওঁর দল ওঁকে খাতায় কলমে হেভিওয়েট বলতেই পারে তবে আমাদের কাছে উনি কেবল প্রার্থী।” আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল (TMC) তারকা প্রার্থী আরও বলেন, “বাংলায় সরকারি চাকরির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বিজেপি হল লটারির টিকিট। ওরকম আসে যায়।”
কেন তিন দফায় বিজেপি(BJP) প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হল, কেনই বা সাংসদের ইস্তফা দিয়ে তাঁদের বিধানসভার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হল, এদিন এমন একাধিক প্রশ্ন তোলেন অভিনেত্রী। পাশাপাশি এও দাবি করেন, তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে মুখের অভাব নেই। গেরুয়া শিবিরে বরং মুখের অভাব, তাই বেছে বেছে সাংসদ ও সংগঠকদের প্রার্থী করতে হচ্ছে। যদিও কৌশানী যে হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, সেই মুকুল রায় এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি।
নদিয়ায় মোট বিধানসভা আসনের সংখ্যা ১৭টি। তার মধ্যে গত লোকসভা ভোটের (Parliament Election) নিরিখে বিজেপি এগিয়েছিল ১১টি আসনে। তৃণমূল ৬টি আসনে। ফলে সে অর্থে নদিয়া-র জন্য ‘আশাবাদী’ বিজেপি নেতৃত্ব। নদিয়ার হাল ফেরাতে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে (Mahua Moitra) দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহুয়াকেই জেলা সভাপতি করেছেন তিনি। মহুয়া চাইছেন, অন্তত ১৩-১৪ আসন যাতে নদিয়া থেকে পাওয়া যায়। এ বার মুকুল আসরে নামায় সরাসরি তাঁর টক্কর হবে মহুয়ার সঙ্গে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কৌশানী সেখানে একটি গ্ল্যামারের ‘মোহর’ মাত্র।
অন্যদিকে, শাসক শিবিরে কৌশানীকে প্রার্থী করা নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। কৌশানীর প্রচারে যোগ দেননি অনেকেই। সে বার কৌশানী জানিয়েছিলেন, মান-অভিমান মিটিয়ে সকলের সঙ্গেই কাজ করবেন তিনি। মুকুল প্রার্থী হওয়াতে সেই ‘মান-অভিমানের’ পালা ভাঙবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ওয়াকিবহাল মহলে।
যদিও, আত্মবিশ্বাসী অভিনেত্রী হার মানতে নারাজ। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘আয় মুকুল খেলবি আয়, এই মাটিতেই খেলবি আয়’, ‘চাণক্যকে’ ময়দানে আহ্বান কল্যাণের