Intersex Chinese Man: যুবকের দেহে ডিম্বাশয় এবং জরায়ু, হয় মাসিকও! জোর ধাক্কা খেলেন জন্মের ৩৩ বছর পর
৩৩ বছর বয়সী এক চিনা যুবকের দেহে পুরুষ প্রজনন অঙ্গের পাশাপাশি মিলল মহিলা প্রজনন অঙ্গও। তারপর কী করলেন তিনি?
বেজিং: ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর শরীরে কোনও সমস্যাই ছিল না। কিন্তু, তারপর থেকে প্রতি মাসে তাঁর প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাত হত, সেই সঙ্গে তীব্র পেটে ব্যথা। এর জন্য একের পর এক ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই ভেবেছিলেন, তাঁর প্রস্রাবের কোনও সমস্যা আছে। ওই রক্তপাত এবং পেটে ব্যথা কমাতে একাধিক অস্ত্রোপচারও করা হয়েছিল। কিন্তু, তাও সমস্যা যায়নি। ৩৩ বছর বয়সে এসে চিনা যুবকটি খেলেন বিরাট ধাক্কা। এই প্রথম তিনি জানতে পারলেন তাঁর শারীরিক অস্বস্তির আসল কারণ। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধরা পড়ল, তাঁর শরীরে ডিম্বাশয় এবং জরায়ুর মতো মহিলাদের প্রজনন অঙ্গ উপস্থিত। আর এই কারণেই বছরের পর বছর ধরে তাঁকে পেটে ব্যথা এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে।
চিনা সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই যুবকের বয়স ৩৩ বছর। পরিচয় রক্ষার জন্য তাঁর নাম প্রকাশ করা হয়নি। কয়েক বছর আগে, প্রস্রাবের সমস্যার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন তিনি। পেটে ব্যথার জন্য তাঁর অ্যাপেন্ডিসাইটিস গ্রন্থিও অপারেশন করে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে আরও বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু, তারপরও গত ২০ বছর ধরে তাঁর পেটে ব্যথা, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্তপাতের মতো শারীরিক অস্বস্তির লক্ষণগুলি দেখা গিয়েছে।
গত বছর, এক নতুন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন ওই চিনা যুবক। তিনিই বিভিন্ন পরীক্ষা করে ওই যুবকের শারীরিক অস্বস্তির প্রকৃত কারণ বের করেন। প্রথমে জানা গিয়েছিল, তাঁর শরীরে মহিলা সেক্স ক্রোমোজোম রয়েছে। ডাক্তার জানান, প্রস্রাবে সঙ্গে রক্তপাত এবং পেটে অস্বস্তি হওয়ার আসল কারণ হল, প্রতি মাসে রজস্রাব হত ওই যুবকের (না কি যুবতী)। যা বয়ঃসন্ধির পর প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রেই একেবারে সাধারণ ঘটনা। পরীক্ষায়, আরও জানা যায়, চিনা যুবকের দেহে গড়পড়তা পুরুষদের থেকে পুরুষ সেক্স হরমোন বা অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা কম রয়েছে। অন্যদিকে, তাঁর দেহে মহিলা হরমোন বা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার সঙ্গে তুলনীয় ছিল।
কী করে ঘটল এমনটা? জানতে ওই চিকিৎসক পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকটি মেডিক্যাল পরীক্ষা করান। জানা যায়, ওই চিনা যুবকের দেহে পুরুষ প্রজনন অঙ্গের পাশাপাশি একটি ডিম্বাশয় এবং একটি জরায়ু-সহ মহিলা প্রজনন অঙ্গও উপস্থিত। অর্থাৎ, তাঁর শরীর একই সঙ্গে একজন পুরুষের, আবার একজন মহিলারও বটে। পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষার পর, পুরুষ ও মহিলা উভয় প্রজনন অঙ্গ থাকায় তাঁকে ‘ইন্টারসেক্স’ বা ‘উভলিঙ্গ’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই, এই আবিষ্কারে জোর ধাক্কা খেয়েছিলেন ওই যুবক। শরীরে মহিলা হরমোনের পরিমাণ তুলনায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও, তিনি চিকিত্সকদের কাছে তাঁর মহিলা প্রজনন অঙ্গ বাদ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। গত ৬ জুন তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচার করা হয়। ১০ দিন পর তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।
তিনি এখন সম্পূর্ণরূপে পুরুষে পরিণত হয়েছেন। তাঁর শারীরিক অস্বস্তিগুলিরও অবসান ঘটেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রথম থেকেই একজন পুরুষ হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন ওই যুবক। কারণ, বহিরঙ্গে তিনি পুরুষই ছিলেন। তাঁর কখনও লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচারও করা হয়নি। জীবনের ৩৩টা বছর ধরে তিনি নিজেও তাঁর শরীরে মহিলা অঙ্গের উপস্থিতির টের পাননি। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিরল আবিষ্কার এবং অস্ত্রোপচারের খুব সামান্য প্রভাবই পড়বে তাঁর শরীরে। তবে, তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর বড় প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।