Bangladesh: ‘মার্কিনিদের বোঝান’, প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের আগে ভারতের দ্বারস্থ ঢাকা
Bangladesh seeks India's help: বাংলাদেশের নির্বাচন কতটা অবাধ এবং স্বচ্ছ হবে, এই নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকা। এই নিয়ে গত কয়েক মাসে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বাংলাদেশ-আমেরিকার। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সফরের আগে তাই ভারতের সহায়তা চাইল ঢাকা।
ঢাকা ও নয়া দিল্লি: গত কয়েক মাসে ক্রমশ খারাপ হয়েছে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক। বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন কতটা অবাধ ও স্বচ্ছ হবে, সেই বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। এই বিষয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূত পিটার হাস। তবে, বারবারই মার্কিনিদের শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। এই নিয়ে গত কয়েক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই অবস্থায় আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়ে ভারতের সহায়তা চাইল ঢাকা। বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাতে বাংলাদেশের বিষয়টি তোলেন, এই আশা নিয়েই গত কয়েক সপ্তাহে ভারতীয় নেতৃত্বের কাছে সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, এদিনই চারদিনের মার্কিন সফরে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
১২ জুন বারাণসীতে জি২০ গোষ্ঠীর ডেভেলপমেন্ট মিনিস্টারদের বৈঠক ছিল। জি২০ গোষ্ঠীর সদস্য না হলেও, বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে জি২০ গোষ্ঠীর বৈঠকগুলিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত। বারাণসীর ওই বৈঠকের সময়ই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। সূত্রের খবর, ওই সময়ই প্রথম আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ভারতের সাহায্য চায় বাংলাদেশ। তারপর থেকে গত এক সপ্তাহে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্যান্য নীচু স্তরের কর্তারাও এই বিষয়ে একের পর এক আলোচনা করেছেন।
আসলে বাংলাদেশের নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে কোনও অভিযোগই মানতে নারাজ হাসিনা সরকার। এই বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের একের পর সতর্কতা উপেক্ষা করেছে ঢাকা। এরপরই, গত মে মাসে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে নীতি বদলায়। আমেরিকা সাফ জানিয়ে দেয়, যে যে বাংলাদেশি গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করবে, তাদের মার্কিন ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত ভালভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। প্রকাশ্যেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বানকে উপেক্ষা করেছে বাংলাদেশি নেতৃত্ব। সেই দেশের উপ-বিদেশমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, “নয়া মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে আমাদের সরকার আদৌ চিন্তিত নয়।”
মুখে তাঁরা যাই বলুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানে যথেষ্টই চাপে হাসিনা সরকার। গত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লিগ। তবে, বর্তমানে অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং গণতন্ত্র হরণ নিয়ে বিএনপি-সহ বিরোধী দলগুলির বিক্ষোভের জেরে সরকারের উপর চাপ ক্রমে বাড়ছে। এই অবস্থায় নির্বাচনের বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানকে বিরোধীরা কাজে লাগাক, এটা চায় না বাংলাদেশ সরকার। আর সেই কারণেই সম্পর্ক মেরামত করতে ভারতের মুখাপেক্ষী হয়েছে ঢাকা।
এই অবস্থায় ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে স্বাধীন, উন্মুক্ত এবং সমৃদ্ধশালী রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের গুরুত্ব, আমেরিকার সামনে তুলে ধরার জন্য, ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ করেছেন ঢাকার নেতারা। শুধু তাই নয়, মার্কিন পদক্ষেপ বাংলাদেশকে ক্রমে চিনের দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে, পাল্টা চাপ সৃষ্টির চেষ্টাও করেছে বাংলাদেশ। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং এশিয়াতে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে আমেরিকা যে মরিয়া, তা বলাই বাহুল্য। এই অবস্থায় শেখ হাসিনার সঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদী কী ভূমিকা নেন, সেটাই দেখার।