Bangladesh: মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে নতুন পন্থা, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চিনা ব্যাঙ্কের সাহায্যে রাশিয়ার ঋণ পরিশোধ করবে বাংলাদেশ
Bangladesh: রাশিয়ার ঠিকাদারের সাহায্যে বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এই রাশিয়ার সংস্থার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। তাই এই প্রকল্প নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে।
ঢাকা: বাংলাদেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প হল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। আর এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে অর্থ ও কারিগরি সাহায্য দিচ্ছে রাশিয়া। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজের ঠিকাদার সংস্থা হল রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রোসাটম। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ করতে বাধ সেধেছে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রোসাটমসহ কয়েকটি সংস্থার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার জেরে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে বেশ কিছুদিন ধরেই কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। অবশেষে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা শেষে একটি সমাধানে উপনীত হয়েছে দুই দেশই।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল ঠিকাদার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রোসাটমের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে মদত দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই মস্কো ও রাশিয়ার একাধিক সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছিল আমেরিকা। পুনরায় গত ১২ এপ্রিল নতুন করে কয়েকটি রাশিয়ার সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা। সেই তালিকায় থাকা দুই প্রতিষ্ঠান হল রোসাটম এবং সহযোগী সংগঠন নিকিট এটমস্ট্রোয় জেএসসি। ওয়াশিংটনের তরফে এই নয়া তালিকায় ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে পাঠানো হয়। তারপরই মার্কিন দূতাবাসের তরফে বাংলাদেশ সরকারকে এই বিষয়ে জানানো হয়। এর মধ্যে রোসাটমের সঙ্গেই অতীতে লেনদেন করেছে বাংলাদেশ। তাছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের মূল ঠিকাদার সংস্থাই হল এই রোসাটম। ফলে এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞা চাপালেও রূপপুরের চলমান ও আগামী দিনে লেনদেন ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে কীভাবে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র? এ বিষয়ে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নীতি লঙ্ঘন না হলে রূপপুরের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির জন্য নেওয়া ঋণ বাংলাদেশ কীভাবে পরিশোধ করল, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই আমেরিকার। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা ও মস্কোর মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে চিনা মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে পদ্মা নদীর পাড়ে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এর জন্য দুই দফায় রাশিয়া থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২৮ বছরের মধ্যে এই ঋণ শোধ করতে হবে। শুরুর দিকে রাশিয়াকে ঋণের অর্থ ডলারেই পরিশোধ করা হচ্ছিল। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে গত বছর মার্চে মস্কোর সঙ্গে ঢাকার লেনদেন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের কমিটমেন্ট ফি প্রায় ১০৫ কোটি টাকা। যা এখনও পরিশোধ করা হয়নি।
এ ছাড়া প্রথম দফা ঋণের ৩১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের কিস্তি মুলতবি রয়েছে। জটিলতা দূর করতে মস্কো ডলারের পরিবর্তে তাদের মুদ্রা রুবলে কিস্তি শোধ করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু ঢাকা নানা অনিশ্চতায় এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। পরে চিনা মুদ্রা ইউয়ানে ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়ে সম্মত হয় দুই দেশ। চিনের একটি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বাংলাদেশ কিস্তি পরিশোধ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর চিনের ক্রস-বর্ডার ইন্টারব্যাঙ্ক পেমেন্ট সিস্টেমে মস্কো অর্থ বুঝে নেবে। তবে এই প্রকল্পে আশার আলোও দেখা যাচ্ছে। এত কিছুর মধ্যেও এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি এগিয়েছে। ২০২৪ সালের শেষ দিকেই প্রথম ইউনিট উৎপাদন হতে পারে। দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে ২০২৫ সালে।