যুদ্ধে কীভাবে শিশুরা রাতারাতি বড় হয়ে যায়, ওরাই তার প্রমাণ

Russia-Ukraine Conflict: স্লোভাকিয়ায় যখন ওই শিশুটি একটা আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে, বিধ্বস্ত খারসনে আর এক খুদে হারাতে বসেছে তার পরিবার। দক্ষিণ ইউক্রেনের খারসন পুরোপুরি রাশিয়ার দখলে। অনবরত চলছে গোলাবর্ষণ

যুদ্ধে কীভাবে শিশুরা রাতারাতি বড় হয়ে যায়, ওরাই তার প্রমাণ
বাঁদিকে স্লোভাকিয়ায় আশ্রয় নেওয়া খুদে, ডানদিকে খারসনে বম্ব শেল্টারে খুদেকে আদর মায়ের
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 06, 2022 | 6:55 PM

কিয়েভ: গত ১১ দিন ধরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে যাঁরা ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝে প্রতিদিনই ইতিহাস রচনা করছেন, তাঁরা হিরো ছাড়া কম কীসের! প্রতিদিনই এমন নানা হিরোর জন্ম হচ্ছে, মৃত্যু হচ্ছে। কারোর খবর জানা যাচ্ছে, কারোর নিঃশব্দে শ্মশানের ধ্বংসাবশেষে চাপা পড়ে রয়েছে। তবুও তাঁরা হিরো! এই যেমন ইউক্রেনের বছর এগারোর ছেলেটি। মুহূর্মুহু আছড়ে পড়া গোলা-বারুদের ভিড়ে একা ওই ছোট্ট কলিজার ছেলেটি দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনের জ়াপোরিঝঝিয়া থেকে কয়েক শো কিলোমিটার হাঁটতে হাঁটতে সীমান্ত পেরিয়ে স্লোভাকিয়ায় পৌঁছেছে। কীভাবে এল সেই ছেলেটি, তার গল্প শুনে রীতিমতো হতভম্ব স্লোভাকিয়ার সেনা জওয়ানরা। তার নাম দিয়েছে  ‘হিরো অব দ্য নাইট’।

ছেলেটির মা-বাবা ইউক্রেনে আটকে রয়েছে। হয়তো তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁদের পক্ষে এই বিধ্বস্ত এলাকা ছেড়ে বেরনো সম্ভব নয়। কিন্তু সন্তানকে তো বাঁচাতে হবে। স্লোভাকিয়ায় তাঁদের আত্মীয় রয়েছে। হয়তো সেখানেই পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ছেলেটির বাবা-মা। পিঠে একটা ব্যাগ, হাতে একটা চিরকুট-সহ পাসপোর্ট নিয়ে রওনা দেয় ছেলেটি। টানা কুড়ি ঘণ্টা প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে স্লোভাকিয়ার সীমান্তে যখন পৌঁছয়, ওই খুদের  ক্লান্ত শরীরে ভয়ের ছিটে ফোঁটা নেই। ঠোঁটের কোণে তখনও অম্লান হাসি। তাকে দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন স্লোভাকিয়ার জওয়ানরা। চিরকুটে লেখা ফোন নম্বর। সেই ফোন নম্বরে ফোন করে আত্মীয়র হাতে তুলে দেওয়া হয় ছেলেটিকে। 

স্লোভাকিয়ায় যখন ওই শিশুটি একটা আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে, বিধ্বস্ত খারসনে আর এক খুদে হারাতে বসেছে তার পরিবার। দক্ষিণ ইউক্রেনের খারসন পুরোপুরি রাশিয়ার দখলে। অনবরত চলছে গোলাবর্ষণ। শহর পুরোপুরি ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। আর যতটুকু অবশিষ্ট রয়েছে, যে কোনও দিন, যে কোনও ঘণ্টায়, যে কোনও সেকেন্ডে রুশ-ক্ষেপণাস্ত্রে ছারখার হয়ে যেতে পারে। এটা তাঁদের আশঙ্কা নয়। এটা তাঁদের বিশ্বাস। আর সেই বিশ্বাস থেকে ওই খুদের মা তাকে শেখাচ্ছেন, “আমি যদি মারা যাই, তোকেই দেখতে হবে ছোটো বোনকে।”

ওলেকসান্দ্রা ঝোভতুক নামে ওই মহিলা তাঁর দুই সন্তানকে বম্ব-শেল্টারে রেখেছেন। তাঁর কথায়, “বড় মেয়ে সাত বছরের। আশপাশে কী ঘটছে সে বুঝতে পারছে। সাইরেনের আওয়াজে মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে তার। কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা করছে কখন শান্ত হবে সব।” ওলেকসান্দ্রার ছোটো মেয়ের কাছে এ সব ভিডিয়ো গেম মনে হচ্ছে। মেয়ের এই বিশ্বাস ভাঙতে চাইছেন না তিনি। শুধু তাকে এই টুকু ওলেকসান্দ্রা বলে রেখেছে, “হ্যাঁ ভিডিয়ো গেম চলছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের নিয়ম মেনে এই গেম খেলা উচিত ছিল।”

বড় মেয়েকে ওলেকসান্দ্রা আরও শিখিয়ে রেখেছে, বাইরে অনবরত গুলি বর্ষণ হচ্ছে, কখনও যেন বোনের হাত যেন না ছাড়ে! গুলিতে যদি মায়ের মৃত্যু হয়, তবুও যেন বাইরে না বের হয় সে। বোনকে রক্ষা করাই ওই সাত বছরের খুদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। ওলেকসান্দ্রার বিশ্বাস, তাঁর মেয়ে কথা রাখবে। যুদ্ধে সব শিশুরাই বড় হয়ে যায়। যেমন আঠেরো’শো কিলোমিটার হাঁটতে হাঁটতে বড় হয়ে গিয়েছে ১১ বছরের ‘হিরো অব দ্য নাইট’।

আরও পড়ুন- হাসিই যাঁর মূলধন, শেষ হাসি হাসতে পারবেন তো!