Abdus Salam Pakistan: ভারতে এসে বাঙালি শিক্ষকের হাতে নিজের নোবেল তুলে দিয়েছিলেন পাক বিজ্ঞানী, কেন জানেন?
Nobel Prize: "মাস্টারমশাই, এই নোবেল পদক আপনার, আমার নয়", ভারতীয় অঙ্ক শিক্ষকের হাতে পাকিস্তানের প্রথম নোবেল তুলে দিয়ে বলেছিলেন পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী আব্দুস সালাম।
১৯৭৯ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পান পাকিস্তানি বিজ্ঞানী আব্দুস সালাম। ইলেক্ট্রোউইক ইউনিফিকেশন তত্ত্বে তাঁর অবদানের জন্য নোবেল পান তিনি। তাঁর এই তত্ত্ব আসলে হিগস-বোসন কণা, যা ঈশ্বর কণা নামেও পরিচিত, তার সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। সাধারণত এই ধরনের সাফল্য আজও সালামের নিজের দেশে অর্থাৎ পাকিস্তানে উদযাপিত হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক। কিন্তু, এর চার দশক পরও সালামের এই সাফল্যকে প্রায় ভুলতে বসেছে শাহবাজ শরিফের দেশ। এর পিছনে প্রধান কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে সালাম আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন, যে সম্প্রদায় এখনও পাকিস্তানে নিপীড়িত বলে মনে করা হয়। তাঁর জীবন নিয়ে ‘সালাম: দ্য ফার্স্ট ** নোবেল লরিয়েট’ (Salam, The First ** Nobel Laureate) নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছে নেটফ্লিক্স। আর এই সবের মধ্যে তাঁর জীবনের অন্যতম একটি ঘটনা, যা না বললেই নয়।
১৯৭৯-এ নোবেল জয়ের পর ড. সালাম ভারত সরকারের কাছে তাঁর শিক্ষক প্রফেসর অনিলেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়কে খুঁজে দেওয়ার অনুরোধ করেন। প্রফেসর গঙ্গোপাধ্যায় যখন লাহোরের সনাতন ধর্ম কলেজে অঙ্কের শিক্ষক ছিলেন তখন তাঁর ছাত্র ছিলেন ড. সালাম। এবং তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রফেসর গঙ্গোপাধ্যায়ই তাঁর মধ্যে অঙ্কের প্রতি ভালবাসার বীজ বপন করেছিলেন। যদিও, দেশভাগের পর প্রফেসর অনিলেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় দেশে ফিরে আসেন।
শেষ পর্যন্ত, নোবেল জয়ের প্রায় ২ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রফেসর অনিলেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের দক্ষিণ কলকাতার বাড়িতে আসেন ড. আব্দুস সালাম। মুসলিম টাইমসের চিফ এডিটর যিনি নিউইয়র্কের নামী চিকিৎসক ডা. জিয়া এইচ শাহ লিখছেন, “ড. সালাম যখন মাস্টারমশাইকে দেখতে আসেন, তখন তিনি খুবই দুর্বল ছিলেন এবং উঠে বসে তাঁকে অভ্যর্থনাও জানাতে পারেননি। ড. সালাম তাঁর নোবেল পদক হাতে নিয়ে বলেন, মিস্টার অনিলেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায় এই পদক আপনার শিক্ষা ও আমার মধ্যে আপনার বপন করা অঙ্কের প্রতি ভালবাসার ফল। এরপর তিনি ওই পদক তাঁর শিক্ষকের গলায় পরিয়ে দেন”।
যদিও নেটফ্লিক্সের ডকুমেন্টরিতে তাঁর ছেলে একটু অন্যরকম ঘটনার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাবা ভারতে তাঁর এক শিক্ষকের কাছে নোবেল পদকটি নিয়ে যান। যিনি তখন খুবই বয়স্ক। বাবার শিক্ষক বিছানায় শুয়েছিলেন, উঠতে পারছিলেন না। বাবার একটা ছবি আছে নোবেল পদকটি তাঁর শিক্ষকের হাতে দেওয়ার একটি ছবি আছে। এবং তিনি বলেন, মাস্টারমশাই, এই নোবেল পদক আপনার, আমার নয়”।
যদিও এই কাহিনির শেষ এখানে নয়। ভারতীয় সাংবাদিক সানোয়ার ফাতমার একটি টুইটার থ্রেড অনুযায়ী, সেই বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ড. সালামকে তাঁর কৃতিত্বের জন্য দেবাপ্রসাদ সর্বাধিকারী গোল্ড মেডেল দিয়ে সম্মান জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। ড. সালাম তা নেওয়ার পরিবর্তে বলেন, এই পুরষ্কার তাঁর মাস্টারমশায়ের প্রাপ্য। এরপর ১৯৮১-তেই অনিলেন্দ্রনাথের বাড়িতে পুরষ্কার প্রদানের অনুষ্ঠান করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড. আব্দুস সালামও। এরপরই ১৯৮২ সালে মারা যান প্রফেসর অনিলেন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়। এই ঘটনা কোনও শিক্ষকের প্রতি কোনও ছাত্রের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার কথা তুলে ধরে যা কোনও ধর্ম বা দেশের বাধা মানে না।