Pakistan-Bangladesh: ‘পাকিস্তানই বাংলাদেশের সবথেকে বিশ্বস্ত বন্ধু!’ গণ অভ্যুত্থান লোকদেখানা ছিল? ঝুলি থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়ছে বিড়াল?
Pakistan-Bangladesh: পাথরঘাটা জগবন্ধু আশ্রমে হামলার ঘটনা যখন জানা গেল, তখন খবর এল হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ইসকনেও হামলা চালায় কট্টরপন্থীরা। গ্রেফতার করা হয় আদিনাথ ব্রহ্মচারী, রঙ্গনাথ দাসকে। মৌলভীবাজারেও নিশানায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়েও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। আহত বহু। ফকিররাও রোষের শিকার হচ্ছেন।
কলকাতা: বাংলাদেশের গণ অভ্যুত্থান কী লোকদেখানা ছিল? আর তাকে সামনে রেখে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের চিহ্নিত করে নির্যাতনের ব্লু প্রিন্ট, নির্বিচারে লুঠপাটের জমি তৈরি করা হয়েছিল? বিনা কারণে সংখ্যালঘুদের ধরপাকড়ও কী সেই কারণেই? ওপার বাংলায় কট্টরপন্থীদের টার্গেট সংখ্যালঘুদের বাড়ি, দোকান, মন্দির। তাণ্ডব চালিয়ে উল্লাস! সেই ছবিও ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠেছে জেহাদি পতাকা হাতে এই উল্লাস কাদের? অভ্যুত্থানের আড়ালে কি হিন্দু নিধনের ছক? তাই মৌলবাদীদের হাতে রক্তাক্ত হচ্ছে হিন্দুরা? আর এসবের মধ্যে রাজ্যে ডেরা বানাচ্ছে অনুপ্রবেশকারীরা? চিন্তা বাড়ছে এপার বাংলাতেও।
বাংলাদেশের ঘটনা প্রবাহ দেখে অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশে যা চলছে তার নকশা যেন অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল। বৈষম্যমূলক ছাত্র সমাজের আন্দোলনের চাপে হাসিনার বিদায়ের পর বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের নিশানা। তাদের মারধর, বাড়ি লুটপাট, বিনা কারণে গ্রেফতার, একটার পর একটা মন্দিরে হামলার অভিযোগ। আর এর বিরুদ্ধে যিনি প্রতিবাদের মুখ খুলেছিলেন, যাঁর ডাকে পথে হাজার হাজার সংখ্যালঘু পথে নেমেছছিলেন, সেই প্রতিবাদী মুখ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে হাতকড়া পরিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। জেলবন্দি সন্ন্যাসীর জন্য খাবার দিতে গেলেও গারদে পুরে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, কট্টরপন্থীদের হাতে প্রতি মুহূর্তে আক্রান্ত হচ্ছে হিন্দুরা। বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে। লাঠি হাতে চড়াও হচ্ছে কট্টরপন্থীরা। স্লোগান তুলে রে রে করে তেড়ে যাওয়া হচ্ছে। ছোড়া হচ্ছে ইট।
জেহাদি পতাকা নিয়ে আস্ফালন
পাথরঘাটা জগবন্ধু আশ্রমে হামলার ঘটনা যখন জানা গেল, তখন খবর এল হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ইসকনেও হামলা চালায় কট্টরপন্থীরা। গ্রেফতার করা হয় আদিনাথ ব্রহ্মচারী, রঙ্গনাথ দাসকে। মৌলভীবাজারেও নিশানায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়েও হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। আহত বহু। ফকিররাও রোষের শিকার হচ্ছেন। লালন সাঁইয়ের অনুসারীদের আখড়ায় হামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ভাঙা হচ্ছে পুরনো সব সুফি মাজার, রাহুল আনন্দের বাড়িতে গানের যাবতীয় যন্ত্রাংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সোজা কথায় চর্তুদিকে কট্টরপন্থীদের আস্ফালন। মৌলবাদীদের আস্ফালনের বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে জেহাদি পতাকা উড়িয়ে। তাতেই চর্চা শুরু হয়েছে গোটা বিশ্বে। সূত্রের খবর, নারায়ণগঞ্জে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। সেই আনন্দে জেহাদি পতাকা হাতে নিয়ে চলে মিছিল। হিজবুত তাহেরির নামে জঙ্গি সংগঠনের আস্ফালনের সেই ছবি সামনে এসেছে। হাসিনা জমানায় যারা নিষিদ্ধ ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের মন্তব্যে বিতর্ক
প্রশ্ন উঠেছে মৌলবাদী শক্তিকে মদত দিচ্ছে কারা? অন্তবর্তী সরকারকে তো জামাতের ‘পুতুল’ বলেও কটাক্ষ করছেন কেউ কেউ। সে কারণেই কী হিন্দু নির্যাতন নিয়ে চুপ? উঠেছে প্রশ্ন। আর কট্টরপন্থীরা কী চাইছে তার যেন একটা আঁচ পাওয়া গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের গলায়। অধ্যাপক শাহিদুজ্জমান বললেন, “পরমাণুকরণ মানে এই নয় যে আমাদের পরমাণু শক্তি হতে হবে। পরমাণুকরণ মানে পুরনো শত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব। পাকিস্তান বাংলাদেশের সবচেয়ে আস্থাভাজন শরিক। ভারত ও আওয়ামি লিগ চায় না আমরা এটা বিশ্বাস করি। এই দেখেই তো পাকিস্তানীদের বুকে আগুন জ্বলত। পাকিস্তান আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে চায় না। পাকিস্তান বাংলাদেশকে ভারতের দূত হিসাবেও দেখতে চায় না। তারা আমাদের ভারতের কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য সবকিছু করতে পারে।”
সোজা কথায়, এখন পাকিস্তান নাকি বাংলাদেশের সবথেকে বিশ্বস্ত বন্ধু। তো সেই বন্ধুদের বিশ্বাসযোগ্যতার নমুনা কী! এই তো কিছুদিন আগে পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছিল বাংলাদেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরটা করেও প্রচার চলে। তারপর কী হল? দেখা গেল পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পাঠানো পেঁয়াজের বস্তা থেকে বড় বড় পাথর বের হয়েছে। অভিযোগ, ওজন বাড়াতে পেঁয়াজে পাথরের ভেজাল মেশানো হয়েছিল! তাদেরকেই বন্ধু ভাবছে কিনা বাংলাদেশ। সেই মৌলবাদী শক্তির ভয়ে কাঁটা ওপার বাংলার সংখ্যালঘুরা। বাড়িত হামলা হচ্ছে, লুটপাট চলছে অবাধে। সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ!
চিন্তা বাড়ছে আন্তর্জাতিক মহলে
এক সপ্তাহে চারবার বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারত। মনে করিয়ে দিয়েছে তার দায়িত্বের কথা। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে কড়া বার্তা দেওয়ার দাবি উঠেছে এপার বাংলা থেকে। কিন্তু, হাসিনা বিদায়ের পর থেকে যেভাবে ধারাবাহিক অত্যাচার চালাচ্ছে কট্টরপন্থীরা, তা দেখে অনেকে বলছেন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বর্ণমালা বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। একটা জাতিকে টার্গেট করে তাদের মুছে ফেলার চেষ্টা চলছে ! যা নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরাও।