Budget 2022: ভারতকে ৫ লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতির লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রয়োজন পরিবর্তমমূলক বাজেট – মোহনদাস পাই
Budget 2022: রাজস্ব প্রাপ্তির সমস্ত স্রোতে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। সরকার গত বছর রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগের ভাল সদ্ব্যবহার করেছে যাতে রাজকোষের ঘাটতিকে কমিয়ে ৯.৮ শতাংশ পর্যন্ত আনা যায়। সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয় তহবিলের ঋণ নিজের কাঁধে নিয়েছে, যার ফলে ভর্তুকি বেড়ে ৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। এই বছরও সরকার দুটি সাপ্লিমেন্টরি দাবি পেশ করছে, যার লক্ষ্য ছিল ৩.২৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচকে পূরণ করা।
২০২২-২৩ বাজেট নিয়ে সবদিক থেকেই একটি বড় পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে। একটি পরিবর্তনশীল বাজেটের জন্য বর্তমান পরিস্থিতিকেও সাকারাত্মক দেখাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে ভারতের বর্তমান জিডিপি ১৯৭ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ১৭ শতাংশ বেড়ে ২৩২ লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে। অর্থাৎ এতে ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে। এই হিসেবে এই বৃদ্ধি হবে ৩৫ কোটি টাকার যা ভারতে এর আগে কখনও হয়নি। এক ডলার সমান ৭৫ টাকা ধরলে এই বৃদ্ধির পরিমাণ ৪৬৬ হাজার কোটি, চলতি বছরে যা বিশ্বের যে কোনও দেশের জন্য সর্বোচ্চ। এছাড়াও রাজস্ব আদায়ে সরকারের প্রচেষ্টাও নতুন উচ্চতায় পৌঁছচ্ছে।
বাজেট অনুমান অনুযায়ী, নভেম্বর পর্যন্ত মোট গ্রস কর সংগ্রহ ২২ লক্ষ কোটি টাকা, আর তা এখনও বেড়ে চলেছে। আশা করা হচ্চে এই প্রকৃত কর সংগ্রহ ৪-৫ লক্ষ কোটি টাকা হতে পারে যা ১৮ শতাংশ বাড়বে। এটি ভারতীয় অর্থনীতির ইতিহাসে নজিরবিহীন।
কর্পোরেট ক্ষেত্র থেকে বেশি রাজস্ব আদায়ের কারণে কর সংগ্রহের স্তর বেড়েছে। কর্পোরেট ক্ষেত্র থেকে লভ্যাংশ এখন সর্বকালীন উচ্চতায় রয়েছে, সেই সঙ্গে কর কমিয়ে ২৫ শতাংশ করাতেও বেশি ফায়দা হয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন কারণে ব্যক্তিগত কর সংগ্রহও বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চ বৃদ্ধি আর আমদানি বাড়ার কারণে কাস্টম ডিউটি বেড়েছে, জ্বালানির অধিক চাহিদার কারণে এক্সাইজ ডিউটিও বেড়েছে। তবে ডিসেম্বর মাসে কর কম করার কারণে এক্সাইজ ডিউটি কিছুটা কমেছে। ঠিক তেমনিই জিএসটি নিয়ম সঠিকভাবে পালন আর পর্যবেক্ষণের কারণে জিএসটি সংগ্রহও বেড়েছে।
সরকারের রাজস্ব বেড়েছে
রাজস্ব প্রাপ্তির সমস্ত স্রোতে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। সরকার গত বছর রাজস্ব বাড়ানোর সুযোগের ভাল সদ্ব্যবহার করেছে যাতে রাজকোষের ঘাটতিকে কমিয়ে ৯.৮ শতাংশ পর্যন্ত আনা যায়। সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয় তহবিলের ঋণ নিজের কাঁধে নিয়েছে, যার ফলে ভর্তুকি বেড়ে ৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা হয়ে গিয়েছে। এই বছরও সরকার দুটি সাপ্লিমেন্টরি দাবি পেশ করছে, যার লক্ষ্য ছিল ৩.২৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচকে পূরণ করা। এর মধ্যে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা এয়ার ইন্ডিয়ার ঋণের জন্য এবং ৫৩ হাজাক কোটি টাকা রফতানি ভর্তুকির জন্য, যা গত বছর দেওয়া হয়নি সরকারের তরফে, আর বাকি অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া খাদ্য ভর্তুকি, সার ভর্তুকি, আবাসন কর্মসূচির ভর্তুকির জন্য।
সরকার নিজের রাজকোষের ব্যালেন্স শিট এমনভাবে ঠিক করছে, যাতে এটা সুনিশ্চিত করা যেতে পারে যে বাজেটের বাইরে কিছু বাকি না থাকে। গত বছর আর এই বছর যে কেউই এটা দেখতে পারেন যে সরকারের অর্থিক হিসেব নিকেশ পরিস্কার রয়েছে। এমনটা আশা করা হচ্ছে যে রাজকোষের লোকসান ৬.৮ শতাংশ হতে পারে, তবে গণনাকৃত রাজস্ব ঘাটতি (Calculated Fiscal Deficit) এর চেয়েও কম হতে পারে। এখন পর্যন্ত ডিসইনভেস্টমেন্ট ফ্রন্টে বিশেষ কিছু ঘটেনি। এর মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার কম কর সংগ্রহ হয়েছে। কিন্তু যদি এলআইসির আপিও বাজারে আসে, তাহলে এই কর সংগ্রহল ১.২০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে, তবে বাজেটে এর ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকার অনুমান করা হয়েছিল। করহীন (Non TaX) রাজস্ব (লাইসেন্স শিটের মাধ্যমে টেলিকম শিল্প থেকে পাওয়া অর্থ আর বিভিন্ন লভ্যাংশ) ফ্রন্টে আরবিআই প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে, যা বাজেটের অনুমানের তুলনায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। একইভাবে পাব্লিক সেক্টর কোম্পানিগুলির কাছ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ৫৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে, যার মধ্যে ৪০ হাজার কোটি টাকা আগেই সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর অর্থ, করহীন রাজস্ব বৃদ্ধি পেতে পারে। এর কারণ টেলিকম কোম্পানিগুলির তরফে ভবিষ্যতে পেতে চলা লাইসেন্স শিটের পেমেন্ট আর আরবিআই এবং পিএসইউ দ্বারা বেশি লভ্যাংশ দেওয়া। এর ফলে বিনিয়োগ থেকে হওয়া কম সংগ্রহকে ব্যালেন্স করা যেতে পারে। সবমিলিয়ে আশা করা যেতে পারে যে খরচ আর রাজস্ব বাড়া সত্ত্বেও রাজকোষের লোকসান ৬.৮ শতাংশ কম হতে পারে।
বন্ডের বাজারেও কিছু চিন্তার লক্ষণ দেখা গিয়েছে, কারণ ১০ বছরের G-sec দর বেড়ে প্রায় ৬.৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে, যা কিছু মাস আগেও ৬ শতাংশের কম ছিল। এর কারণ সরকারের বৃদ্ধি পাওয়া ঋণ এবং করোনা সংক্রান্ত আশঙ্কা। আগামী বছর বৃদ্ধির দর ৯ শতাংশের উপর থাকতে পারে, ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে আমরা ন্যূনতম ভিত্তিতে প্রায় ১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি হাসিল করতে পারি। এই কারণে উন্নতির শক্তিশালী সম্ভবনার কারণে এই বাজেটে পরিবর্তন আনার মতো বড় উপায় খোঁজা হতে পারে। গত পাঁচটি ত্রৈমাসিকের কর্পোরেট লাভ দেখলে এর মধ্যে ত্রৈমাসিক দর ত্রৈমাসিক আধারে বৃদ্ধি দেখতে পাওযা গেছে। এর মধ্যে কোমোডিটির ক্ষেত্র সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, এর কারণ মূল্যবৃদ্ধি। তবে অটো ক্ষেত্রে তত ভাল প্রদর্শন দেখা যায়নি সেমিকন্ডাক্টরের অভাবের কারণে। এনপিএ নিয়ন্ত্রণ আর ঋণের মূলধন কম হওয়ার কারণে মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। অন্য শিল্পগুলিও ভাল প্রদর্শন করছে, তবে কিছু শিল্পে এখনও উন্নতি হওয়া বাকি রয়েছে।
আরও পড়ুন: Budget 2022: করোনাকালে চাহিদা বাড়লেও ব্যবসায় ভাগ বসাচ্ছে চিন, বাজেট থেকে কী আশা রাখছে সাইকেল শিল্প?