বাড়ি-গাড়িতে Bose-র স্পিকার, জানেন কি এক বাঙালিই এনেছিলেন শব্দজগতে বিপ্লব?
Bose Industry: ১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে বোস স্পিকার। অমর বোসের লক্ষ্যই ছিল এমন স্পিকার সিস্টেম তৈরি করার, যা একাধিক স্পিকার দিয়ে করা হবে এবং আসল শব্দ বা সাউন্ডের পাশাপাশি আশেপাশের শব্দকেও গ্রহণ করবে। কনসার্ট হলে যেমন শব্দ শোনা যায়, সেই অনুভূতিই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বোসের স্পিকারে।
নয়া দিল্লি: বাস-ট্রেন বা মেট্রোয় যাতায়াতের সময় সহযাত্রীদের দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন, সকলের কানে গোঁজা হেডফোন।বর্তমানে পোর্টেবল সাউন্ড সিস্টেম আমাদের জীবনের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে যে ইয়ারফোন ছাড়া রাস্তাঘাটে বেরিয়ে পড়লে অস্বস্তিতে ভোগেন অধিকাংশ মানুষই। ফোনে কথা বলা থেকে গান শোনা- সবকিছুতেই ভরসা হেডফোন। এই হেডফোন বা ইয়ারফোনের দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছিলেন এক বাঙালি, তাঁর কথা জানেন কি?
ভাল স্পিকার বা সাউন্ড সিস্টেমের কথা ভাবলেই প্রথমেই মাথায় আসে বোস (Bose) ব্রান্ডের নাম। জানেন কি এক বাঙালিই তৈরি করেছিলেন এই ব্রান্ড? দশকের পর দশক ধরে গ্রাহকের মনে ও ঘরে কীভাবে জায়গা করে নিল বোস, জেনে নিন তার গল্প।
সূচনা-
বোস ব্রান্ডের সূচনা হয়েছিল অমর বোসের হাত ধরে। ১৯৫০-র দশকে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটের এমআইটি-তে তিনি অ্যাকাডেমিক ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। নাসার মতো বড় বড় সংস্থা এবং মার্কিন সেনাবাহিনীতে শক্তি সঞ্চয় ও অ্যামপ্লিফিকেশন টেকনোলজি সরবরাহ করতেন তিনি। কিন্তু তাঁর বরাবরই আগ্রহ ছিল স্পিকার সিস্টেম নিয়ে। ১৯৫৬ সালে তিনি একটি স্পিকার সিস্টেম কেনেন, কিন্তু তার পারফরম্যান্সে একদমই সন্তুষ্ট ছিলেন না। কীভাবে ভাল মানের সাউন্ড সিস্টেম তৈরি করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। প্রফেসর ওয়াই ডব্লু লি-র সঙ্গে আলোচনার পর তিনি একটি হেডফোন তৈরি করেন। ম্যানিকুইনের মধ্যে সেই ইয়ারফোন লাগিয়ে তারা রেকর্ড করেন লাইভ মিউজিক। সেই শব্দ হেডফোনে কেমন শোনায়, তা নিয়েই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। সেখান থেকেই বোসের সূচনা।
১৯৬৪ সালে যাত্রা শুরু করে বোস স্পিকার। অমর বোসের লক্ষ্যই ছিল এমন স্পিকার সিস্টেম তৈরি করার, যা একাধিক স্পিকার দিয়ে করা হবে এবং আসল শব্দ বা সাউন্ডের পাশাপাশি আশেপাশের শব্দকেও গ্রহণ করবে। কনসার্ট হলে যেমন শব্দ শোনা যায়, সেই অনুভূতিই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বোসের স্পিকারে।
উত্থান-
১৯৬৬ সালে বোসের প্রথম স্পিকার বাজারে আসে। ২২টি ছোট স্পিকার দিয়ে তৈরি এই বড় স্পিকার বাজারে আসতেই মুখ থুবড়ে পড়ে। চার বছর পর এই স্পিকারের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এতে আশাহত হননি অমর বোস। এবার তিনি গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার উপরে ভিত্তি করে ১৯৬৮ সালে আনেন বোস ৯০১ স্টিরিও স্পিকার সিস্টেম। এবার লক্ষ্যভেদ হয়। বাজারে আসতেই ‘হিট’ হয় এই মডেল। ২০১৬ সাল অবধি এই মডেলের উপরে ভিত্তি করেই স্বপ্নের উড়ান নেয় বোস কোম্পানি।
স্পিকার বিক্রি করে যে লাভ হচ্ছিল, তার একটা বড় অংশই অমর বোস খরচ করেন গবেষণার উপরে। আরও ভাল স্পিকার কীভাবে তৈরি করা যায়, তার লক্ষ্য় নিয়েই আনা হয় নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন ও গাড়ির জন্য অডিয়ো সিস্টেম। বোস কোম্পানি ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ডলার আয় করে শুধুমাত্র নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন বিক্রি করে। এরপরে পাইলট ও এনএফএল কোচদের জন্যও বিশেষ হেডফোন আনে বোস। ১৯৭৩ ক্যাডিলাক সেভিলে প্রথম কাস্টম বিল্ট অডিয়ো সিস্টেম আনে বোস।
বর্তমানে সাউন্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে বোস। বাড়িতে বা গাড়িতে সাউন্ড সিস্টেমে দেখা যায় বোসের নাম।