Jubilee Diomond: রতন টাটার কোম্পানিকে বাঁচিয়েছিল কোহিনুরের দ্বিগুণ বড় একটি হিরে, জানেন সেই কাহিনি?

Jubilee Diomond: চরম সংকট এসেছিল ১৯২৪ সালে। সস্তা জাপানি ইস্পাতের সঙ্গে লড়াই করতে করতে বন্ধ হওয়ার মুখে এসে পড়েছিল টাটা স্টিল। কঠিন সময়ে একজনও কর্মচারীকে ছাঁটাই করেনি তারা। বদলে, টাটা কোম্পানিকে বাঁচাতে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লেডি মেহেরবাই এবং স্যার দোরাবজি।

Jubilee Diomond: রতন টাটার কোম্পানিকে বাঁচিয়েছিল কোহিনুরের দ্বিগুণ বড় একটি হিরে, জানেন সেই কাহিনি?
এই হিরেই বাঁচিয়েছিল টাটাদের সংস্থাকেImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Jul 08, 2024 | 10:29 PM

মুম্বই: কোহ-ই-নূর হিরের কথা সবাই জানে। তবে, কোহ-ই-নূর হিরের প্রায় দ্বিগুণ আয়তনের একটি হিরে ছিল টাটাদের ঘরে। যা একসময় তাদের ডুবতে বসা ব্যবসাকে বাঁচিয়েছিল। হিরেটি ছিল লেডি মেহেরবাই টাটার। ভারতে নারীবাদের অন্যতম আইকন ছিলেন তিনি। কথার চেয়ে বেশি বলত তাঁর কাজ। হরিশ ভাট, তাঁর ‘টাটা স্টোরিজ’ বইয়ে জানিয়েছেন, টাটাদের আর্থিক সংকটের সময় কীভাবে টাটা স্টিলকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। বা বলা ভাল লেডি মেহেরবাই টাটার কাছে থাকা জুবিলি ডায়মন্ড।

জুবিলি হিরের উৎস অবশ্য আমাদের দেশ নয়। উনিশ শতকে, দক্ষিণ আফ্রিকার জাগারফন্টেইন খনিতে পাওয়া গিয়েছিল বিশ্বের এই অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক হিরেটি। ১৮৯৭ সালে ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে প্রাপ্তির ৬০তম বার্ষিকীর সম্মানে এর নামকরণ করা হয়েছিল জুবিলি। কুশনের মতো দেখতে হিরেটির ওজন ২৪৫.৩৫ ক্যারেট। যেখানে, কোহ-ই-নূরের ওজন ১০৫.৬০২ ক্যারেট। বর্তমানে জুবিলি হিরে হল বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম হিরে। ১৯০০ সালে প্যারিস প্রদর্শনীতে এই হিরেটি প্রদর্শিত হয়েছিল। দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন টাটা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা স্যার জাসেদজি টাটার বড় ছেলে স্যার দোরাবজি টাটা। স্ত্রী লেডি মেহেরবাই টাটার জন্য উপহার হিসেবে তিনি সেই সময় ১ লক্ষ পাউন্ড দিয়ে হিরেটি কিনেছিলেন।

লেডি মেহেরবাই জুবিলি হিরেটিকে একটি প্ল্যাটিনামের চেইনে স্থাপন করেছিলেন। কোনও বড় অনুষ্ঠান হলে, তবেই চেইন-সহ বিরেটি বের করে পরতেন। এটা ছিল টাটা দম্পতির ভালবাসা এবং আশার প্রতীক। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জুবিলি হিরে ভারতের পরিবর্তনের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ভারত এক বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ঔপনিবেশিক শাসনের মধ্যেও মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছিলেন ভারতীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। টাটারা ছিলেন এই পরবর্তনের অগ্রনী নেতা। ১৯০৩-এ তাজমহল হোটেল, ১৯০৭-এ টাটা স্টিল (তখন নাম ছিল টিসকো), ১৯১০-এ সালে টাটা পাওয়ারের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্যার দোরাবজি। কিন্তু, চরম সংকট এসেছিল ১৯২৪ সালে। সস্তা জাপানি ইস্পাতের সঙ্গে লড়াই করতে করতে বন্ধ হওয়ার মুখে এসে পড়েছিল টাটা স্টিল।

স্যার দোরাবজি টাটা এবং তাঁর স্ত্রী লেডি মেহেরবাই (তাঁর গলায় প্ল্যাটিনামের চেইনে বাঁধা জুবিলি হিরে)

কর্মীদের বেতন দেওয়ার উপায় ছিল না। লিকুইড মানির অভাব ছিল। ডিবেঞ্চার পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২ কোটি টাকা। সহজ সমাধান ছিল ছাঁটাই। কিন্তু, সংস্থার নাম তো টাটা। কঠিন সময়ে একজনও কর্মচারীকে ছাঁটাই করেনি তারা। বদলে, টাটা কোম্পানিকে বাঁচাতে বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লেডি মেহেরবাই এবং স্যার দোরাবজি। নিজের ঘর থেকে জুবিলি ডায়মন্ড বের করে দিয়েছিলেন লেডি মেহেরবাই। ইম্পেরিয়াল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় (বর্তমানে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া) জুবিলি হিরে-সহ বেশ কিছু গয়না বন্ধক রেখে ১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরা। আর বাকিটা ইতিহাস। তাঁদের সেই ত্যাগের জন্য শীঘ্রই মুনাফা অর্জন করতে শুরু করেছিল টাটা স্টিল। অবশেষে দেশের বৃহত্তম এবং সবথেকে প্রভাবশালী সংস্থাগুলির অন্যতম হয়ে উঠেছিল টাটাদের সংস্থাটি। ভারতকেও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির জগতে শক্তিশালী জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল।

তবে, টাটা স্টিলের সাফল্যেই জুবিলি হিরের খেলা শেষ হয়নি। ১৯৩২ সালে মৃত্যু হয়েছিল স্যার দোরাবজি টাটার। টাটা চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে তহবিল দেওয়ার জন্য এই বিখ্যাত হিরা এবং অন্যান্য আরও সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠা হয়েছিল টাটা ট্রাস্টের। এই ট্রাস্ট পরবর্তীকালে টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল, টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস এবং টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছে। তবে, জুবিলি হিরের কথ বললে স্যার দোরাবজি এবং লেডি মেহেরবাইয়ের উদারতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, দূরদর্শিতা এবং করুণার কথাও বলতে হবে। তাঁদের জন্যই আজ জুবিলি হিরে সম্মান এবং সততার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে জুবিলি হিরে রয়েছে লেবাননের হিরে ব্যবসায়ী রবার্ট মৌওয়াদের কাছে। ফরাসি শিল্পপতি পল-লুই ওয়েইলারের কাছ থেকে তিনি এটি কিনেছিলেন।