Ratan Tata vs Cyrus Mistry: রতন টাটার জীবনে কালো দাগ, সাইরাসকে উত্তরসূরী বেছে তার সঙ্গেই বিশ্রী লড়াই
Ratan Tata vs Cyrus Mistry: টাটা গোষ্ঠীর নেতৃত্বে থাকাকালীন, তিনি একেবারেই বিতর্কে জড়াননি, তাও নয়। সিঙ্গুর-ন্যানো ইস্যু রয়েছে, রয়েছে টাটা টেপস, রাদিয়া টেপস ইস্যু। তবে, তাঁর জীবনের অন্ধকারতম অধ্যায় সম্ভবত সাইরাস মিস্ত্রিকে নিজে হাতেই তাঁর উত্তরাধিকারী বেছে নেওয়ার পর, তাঁকে সেই আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া। আর, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে ভারতের দুই শীর্ষস্থানীয় ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী পরিবারের আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়া। যার জেরে ভেঙে গিয়েছিল ৮০ বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবসায়িক বন্ধুত্ব।
মুম্বই: ভারতের শিল্প-বাণিজ্য জগতের সবথেকে সম্মানীয়, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি ছিলেন রতন টাটা। ব্যবসায়িক সাফল্যের পাসাপাশি, তাঁর বিভিন্ন জনহিতকর উদ্যোগ, তাঁকে এই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। তাঁর জীবনে সেই অর্থে বড় কোনও বিতর্কও নেই। তবে, টাটা গোষ্ঠীর নেতৃত্বে থাকাকালীন, তিনি একেবারেই বিতর্কে জড়াননি, তাও নয়। সিঙ্গুর-ন্যানো ইস্যু রয়েছে, রয়েছে টাটা টেপস, রাদিয়া টেপস ইস্যু। তবে, তাঁর জীবনের অন্ধকারতম অধ্যায় সম্ভবত সাইরাস মিস্ত্রিকে নিজে হাতেই তাঁর উত্তরাধিকারী বেছে নেওয়ার পর, তাঁকে সেই আসন থেকে সরিয়ে দেওয়া। আর, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে ভারতের দুই শীর্ষস্থানীয় ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী পরিবারের আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়া। যার জেরে ভেঙে গিয়েছিল ৮০ বছরেরও বেশি সময়ের ব্যবসায়িক বন্ধুত্ব। ফাটল ধরে পরিবারে।
১৯৯১ সালে যখন জেআরডি টাটার উত্তরসূরি হিসেবে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদে রতন টাটাকে নিয়োগ করা হয়েছিল, সেই সময় সেই সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিলেন সংস্থার বৃহত্তম সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডার, পালোনজি মিস্ত্রি। তাঁর সমর্থন না থাকলে, টাটা সাম্রাজ্যের সিংহাসনে আরোহনটা রতন টাটার পক্ষে মসৃণ হত না। টাটা পরিবারের সঙ্গে মিস্ত্রি পরিবারের ঘনিষ্ঠতার শুরু হয়েছিল সেই ১৯৩৬ সালে। টাটা সন্সে অংশীদারিত্ব পেয়েছিল মিস্ত্রিরা। তারপর থেকে দুই পার্সি ব্যবসায়ী পরিবারের ঘনিষ্ঠতা শুধুই বেড়েছিল।
রতন টাটাকে সিংহাসনে আরোহনে সহায়তা করা শুধু নয়, শাসনেও ভরপুর সহায়তা করেছিলেন শাপুরজি পালোনজি গ্রুপের প্রধান, পালোনজি মিস্ত্রি। সেই সময় টাটা সন্সে মিস্ত্রি পরিবারের শেয়ার হোল্ডিং ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। ততটা শেয়ার টাটা ট্রাস্টের হাতেও ছিল না। তার উপর, টাটা ট্রাস্ট ছিল এক দাতব্য সংস্থা। তাই, বোর্ডে তাদের সরাসরি ভোটাধিকার ছিল না। এক দাতব্য কমিশনার সেটা তত্ত্বাবধান করতেন। বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হয়েও ভোটে অংশ নিতে পারত না টাটা ট্রাস্ট। কিন্তু, তাদের সিদ্ধান্তকে ভোটে জেতানোর কাজটা করে দিতেন পালোনজি। রতন টাটা যখন যেভাবে টাটা সাম্রাজ্যকে পরিমার্জিত করতে চেয়েছেন, পালোনজি মিস্ত্রি তাঁকে সমর্থন করেছেন। রতন টাটার সিদ্ধান্তে কোনোদিন হস্তক্ষেপ করেননি। সংস্থায় নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর কোনও উদ্যোগও তিনি নেননি। রতন টাটার সঙ্গে পালোনজি মিস্ত্রির এই ব্যবসায়িক সুসম্পর্ক, অবশেষে পারিবারিক সম্পর্কে পরিণত হয়েছিল। পালোনজি মিস্ত্রির মেয়ে বিয়ে করেছিলেন রতন টাটার সৎ ভাই, নোয়েলকে।
২০০০ সালে, সংস্থার পরিচলন পদ্ধতিতে এক বড় সংস্কার এনেছিলেন রতন টাটা। চাপ দিয়ে সরকারি আইন সংশোধন করিয়েছিলেন। যার ফলে, টাটা সন্সের বোর্ডে টাটা ট্রাস্ট সম্পূর্ণ ভোটাধিকার পেয়েছিল। ফলে, টাটা সন্স এবং টাটার অন্যান্য সংস্থাগুলির উপর টাটা ট্রাস্টের প্রভাব ফিরে আসে। পালোনজি মিস্ত্রির সমর্থনের প্রয়োজন ফুরোয়। ২৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর, ২০০৫ সালে টাটা সন্সের বোর্ড থেকে অবসর নেন পালোনজি। তাঁর পর তাঁর জায়গা নেন তার ছেলে, সাইরাস মিস্ত্রি। তাঁর সঙ্গেও রতন টাটার ব্যক্তিগত সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল। এতটাই যে, ২০১১ সালে, নিজের পরিবারের কোনও সদস্যকে নয়, সাইরাসকেই বেছে নিয়েছিলেন রতন টাটা।
তবে, অবসরে যাওয়ার আগে, আরেকটি কাজ করে গিয়েছিলেন রতন টাটা। টাটা সন্স-এর অ্যাসোসিয়েশনের বিধিগুলি সংশোধন করে, টাটা ট্রাস্টকে ভেটো অধিকার এবং ডিরেক্টর মনোনীত করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ফলে, টাটা সন্সের উপর টাটা ট্রাস্টের সম্পূর্ণ প্রভাব কায়েম হয়েছিল। টাটা সন্স থেকে অবসর গ্রহণের পরও, টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন রতন টাটা। ফলে, সাইরাস মিস্ত্রির কাজকর্ম তত্ত্বাবধান করার সম্পূর্ণ অধিকার তাঁর ছিল। এককথায় রতন টাটার কথায় ওঠা-বসা করতে বাধ্য ছিলেন সাইরাস। প্রাথমিকভাবে এতে কোনও অসুবিধা না হলেও, পরের কয়েক বছরে রতন টাটা এবং সাইরাস মিস্ত্রির সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। ফলে, ২০১৬ সালে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সাইরাসকে সরিয়ে দিয়েছিলেন রতন টাটা।
এরপরই শুরু হয়েছিল আইনি লড়াই, যা গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছিল। ২০১৬-র ডিসেম্বরেই টাটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন সাইরাস। টাটাদের বিরুদ্ধে কর্পোরেট অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করেন তিনি। একইসঙ্গে অভিযোগ করেছিলেন সংস্থার সংখ্যালঘু শেয়ারহোল্ডাররা নিয়মিত জুলুমবাজি করে। এই আদালতের লড়াই চলেছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। প্রাথমিকভাবে মামলাটি কোম্পানি আইন আপিল ট্রাইব্যুনালে দায়ের করেছিলেন সাইরাস মিস্ত্রি। কিন্তু, এরপর তা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। সাইরাসের করা মামলাকে দেশের শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছিল টাটা সন্স। ২০২১-এ টাটা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে করা সাইরাসের অভিযোগগুলি খারিজ করে দেয়। আইনি জয় পেয়েছিল টাটারা। কিন্তু, একইসঙ্গে হারিয়ে ছিল আট দশকের বিশ্বস্ব ব্যবসায়িক ও পারিবারিক বন্ধুকে।
২০২২-এর জুনে পালোনজি মিস্ত্রির প্রয়াণ ঘটে। তার কয়েক মাস পরই, ওই বছরের সেপ্টেম্বরে এক পথ দুর্ঘটনায় অপ্রত্যাশিতভাবে মৃত্যু হয় সাইরাসেরও। পরপর দুটি মৃত্যুর পরও রতন টাটা একটিও কথা বলেননি। সামান্য শোকবার্তাটুকুও দেননি। যে রতন টাটা, সংস্থার কোনও সামান্য কর্মী অসুস্থ জানলেও মুম্বই থেকে পুনে ছুটে যেতেন, তাঁর এই আচরণ ছিল একেবারেই অচেনা।