অপ্রত্যাশিত সমস্যায় TCS, টাটার সংস্থা থেকে দলে দলে ইস্তফা মহিলাদের
Mass resignation of female employees in TCS: অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস (TCS)। দলে দলে মহিলা কর্মীরা টিসিএস-এর চাকরি থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। কেন এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে?
নয়া দিল্লি: অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস (TCS)। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈচিত্র্যকে অগ্রাধিকার দেয় এই সংস্থা। তাই টিসিএস-এ মহিলাদের অসংখ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে। কিন্তু, বর্তমানে মহিলা কর্মীরা দলে দলে টিসিএস-এর চাকরি থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। কেন এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে? টিসিএস-এ কাজ করতে কোথায় অসুবিধা হচ্ছে মহিলাদের? সম্প্রতি, সংস্থার পক্ষ থেকে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা বাড়ি থেকে কাজ করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর তিন বছর পর সকল কর্মীদের অফিসে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সংস্থার এই নয়া নীতি মহিলা কর্মীরা ভালভাবে নেননি। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বন্ধ করে দেওয়াটাই দলে দলে মহিলা কর্মীদের পদত্যাগের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে সংস্থার মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ।
টিসিএস-এর মানব সম্পদ উন্নয়নের বিভাগের প্রধান মিলিন্দ লক্কড় জানিয়েছেন, তাঁরা দেখেছেন যে, সংস্থা কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া বন্ধ করার পর, মহিলা কর্মীদের পদত্যাগের প্রবণতা আরও বেড়েছে। লক্কড় জানিয়েছেন, মহিলা কর্মীদের চাকরি ছাড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে, প্রাথমিক কারণ সম্ভবত ওয়ার্ক ফ্রম হোম বন্ধ করে দেওয়া। তাহলে কি টিসিএস-এ লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মহিলারা? মিলিন্দ লক্কড় এই সম্ভাবনা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। স্পষ্ট জানিয়েছেন, মহিলা কর্মচারীদের পদত্যাগের পিছনে লিঙ্গ বৈষম্যের কোনও ভূমিকা নেই। তিনি বলেছেন, “সাধারণত টিসিএস-এ পুরুষদের তুলনায় কম হারে পদত্যাগ করেন মহিলারা। আমরা কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈচিত্রে বিশ্বাসী। কোথাও কোনও বৈষম্য নেই। তবে বর্তমানে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের পদত্যাগের সংখ্যা অনেক বেশি।”
সংস্থার নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, টিসিএস-এ বর্তমানে ৬ লক্ষের বেশি মানুষ কাজ করেন। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ মহিলা কর্মী। এছাড়া, সংস্থার শীর্ষস্থানীয় পদগুলির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পদে আছেন মহিলারাই। ২০২২-২৩ আর্থিক বছরে টিসিএস-এর মোট কর্মশক্তির ২০ শতাংশ চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। মহিলা কর্মীদের মধ্যে ৩৮.১ শতাংশকে ধরে রাখতে পেরেছিল টিসিএস। কিন্তু, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বন্ধের নির্দেশ আসার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের মধ্যে প্রায় গণ হারে ইস্তফা দেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
মহামারি শুরু হওয়ার পর, গোটা বিশ্বেই লকডাউন জারি করতে হয়েছিল। ওই অবস্থায় ওয়ার্ক ফ্রম হোমই ছিল ব্যবসা চালু রাখার একমাত্র উপায়। সব সংস্থাই সেই পথে হেঁটেছিল। তারপর থেকে বাড়ি থেকে কাজ করা শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। শিল্প ক্ষেত্রের বহু নেতাই জানিয়েছেন, ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বা ‘হাইব্রিড ওয়ার্কস্পেস’ অর্থাৎ, আধা বাড়ি আধা অফিস খেরে কাজ করার পরিবেশ তৈরি হলে, আরও অনেক মহিলা কর্মশক্তির অংশ হয়ে উঠতে পরেন। তবে, মহামারির বিপদ কেটে যাওয়ার পর, প্রায় প্রতিটি সংস্থাই ধাপে ধাপে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ বন্ধ করে দিয়েছে। যে যে সংস্থা এই পথে হেঁটেছে, সেই সংস্থাগুলিতেই ইস্তফার সংখ্যা বাড়তে দেখা গিয়েছে। এক সমীক্ষা অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ার্ক ফ্রম হোম বন্ধ হওয়ার পর, ২৫ শতাংশ কর্মীই আর অফিসে ফিরতে চাইছেন না। বর্তমানে, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সংস্থাই কর্মচারীর অভাবের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।