‘মৃত্যুর রাজনীতি করছেন, ক্ষমা চান মমতা’, শীতলকুচি নিয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়াতেই তোপ শাহের
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে 'মত কা সওদাগর' বলেছিলেন ইন্দিরা। আর এককালের কংগ্রেস নেত্রীর বিরুদ্ধে 'মৃত্যুর রাজনীতির' অভিযোগ করলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।

শান্তিপুর: গণতন্ত্রের উৎসব ভোট। সেই ভোট-চতুর্থীতেই বলি ৫টা তরতাজা প্রাণ। ঠিক যেন ‘মৃত্যুপুরী’ শীতলকুচি। প্রথমে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় প্রথম ভোটার আনন্দ বর্মনের। এরপর কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে মৃত্যু হয় ৪ জনের। শীতলকুচিতে এই মৃত্যুর ঘটনায় গতকালই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) পদত্যাগ দাবি করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনসভা থেকে বলেছিলেন, “অমিত শাহ ইউ রিজাইন।” পাল্টা নরেন্দ্র মোদী এই মৃত্যুর জন্য কাঠগড়ায় তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উস্কানিকে। শান্তিপুরে শাহ এসেও একই সুরে বিঁধলেন মমতাকে। বরং আরও তীক্ষ্ণ আক্রমণ করে অভিযোগ করলেন ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু রাজনীতি নিয়ে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই মন্তব্যের সঙ্গে মিল খুঁজে নিচ্ছেন ইন্দিরা গান্ধী এক মন্তব্যের। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘মত কা সওদাগর’ বলেছিলেন ইন্দিরা। আর এককালের কংগ্রেস নেত্রীর বিরুদ্ধে ‘মৃত্যুর রাজনীতির’ অভিযোগ করলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ।
শান্তিপুরে জমজমাট রোড শো সেরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনায় তাঁর প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সে বিষয়ে তিনি গতকালের দুঃখজনক ঘটনা সম্পর্কে জানান, এক বুথে কয়েকজন অজ্ঞান পরিচয় ব্যক্তি হামলা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতিয়ার লুঠ করার চেষ্টা করছিলেন, তখন কেন্দ্রীয় বাহিনী হাতিয়ার বাঁচানোর জন্য গুলি চালায়। তাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনাকে যেভাবে রাজনীতি করা হচ্ছে তা দুঃখজনক।
বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি আরও বলেন, “আমি মমতার বিবৃতি দেখেছি। উনি ৪ জনকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন, আনন্দ বর্মনকে নয়। মৃত্যুতেও তোষণের রাজনীতি করছেন তিনি। আমাদের প্রত্যেকের মৃত্যুতেই দুঃখ। আনন্দ বর্মন যেহেতু রাজবংশী তাঁর ভোটব্যাঙ্কের নয়, তাই তাঁর মৃত্যুতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নেই।” মমতার কাছে শাহের প্রশ্ন, “৪ জনের মৃত্যুর জন্য আপনার ভাষণ দায়ী নয়?’ আপনি উস্কানি না দিলে তাঁরা হামলা করত না। এখনও সময় আছে আনন্দ বর্মনকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিন।”
শীতলকুচিতেই জনসভা করে ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার’ নিদান দিয়েছিলেন মমতা। শাহ সেই কথা মনে করিয়ে সরাসরি তাঁর দিকে আক্রমণ করে বলেন, এই উস্কানিই গতকালের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তাই মমতাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আর শান্তিপুরে রোড শো সম্পর্কে তিনি বলেন, “জগন্নাথ সরকারকে জেতানোর জন্য পুরো শান্তিপুর রাস্তায় নেমে এসেছে। আমার পুরো ভরসা আছে ২ মে এখানে পদ্ম ফুটবে।” শীতলকুচির ঘটনা ছাড়া বিধানসভা নির্বাচনের চতুর্থ দফা শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলেই দাবি অমিত শাহর। তিনি বলেন,”এটা বাংলার জন্য একটা নতুন সূত্রপাত। বাংলার কাছে আমার আবেদন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক, বাংলায় সেই নতুন ইতিহাস তৈরি হোক।” ২ মে-এর পরে বিজেপি সরকার গড়লে রাজনৈতিক হিংসা আজীবনের জন্য বন্ধ হবে বলে আশ্বাস দিয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য় প্রত্যেককে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম মেনে চলার আবেদন করেন তিনি।
অমিত শাহর এই মন্তব্যের পাল্টা সৌগত রায় বলেন, “অমিত শাহর ক্ষমা চাওয়া উচিত। ও ফ্যাসিস্ট, তাঁর কোনও কথা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে চাই না, পদত্যাগ করা উচিত।”
আরও পড়ুন: ‘নন্দীগ্রামের মতো এটাও গণহত্যা, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিল না’, ‘জেদ’ দেখালেন মমতা





