বড় চমক! তৃণমূলে এককালের প্রবাদপ্রতিম বিজেপি নেতা
তৃণমূলের পথপ্রদর্শক হবেন যশবন্ত, তৃণমূল ভবনে বললেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
কলকাতা: ভোটের মুখে বড় চমক। তৃণমূলে যোগদান করলেন ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা প্রাক্তন বিজেপি (BJP) নেতা যশবন্ত সিনহা। শনিবার তৃণমূল ভবনে এসে জোড়াফুলের পতাকা হাতে তুলে নেন তিনি। ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তৃণমূলে যোগ দিয়েই অটল বিহারী বাজপেয়ীর অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা বলেন, “আপনারা হয়ত ভাবছেন, কেন এই বয়সে আমি দলীয় রাজনীতিতে ফিরলাম। আসলে দেশ এক অদ্ভূত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্র বিপদে আছে। গণতন্ত্র যথাযথ মর্যাদা পাচ্ছে না। আমি অত্যন্ত আফশোসের সঙ্গে বলছি, দেশের বিচার ব্যবস্থাও দুর্বল হয়ে গিয়েছে। আমাদের দেশের জন্য তা অত্যন্ত বিপজ্জনক।”
বাজপেয়ী আমলে বিজেপির শীর্ষ নেতা হিসাবে নাম উচ্চারিত হত যশবন্ত সিনহার। বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার অর্থমন্ত্রক সামলানোর ভার ছিল তাঁর উপর। সামলেছেন বিদেশ মন্ত্রকও। কিন্তু বাজপেয়ী-জমানার পর থেকে দল নিয়ে অভিযোগ বাড়তে শুরু করে প্রবীণ এই নেতার। বিভিন্ন সময় নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের সমালোচনা শোনা যায় তাঁর গলায়। এরপরই ২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল বিজেপির সঙ্গে সবরকম সম্পর্ক ত্যাগ করেন।
সেদিন পটনায় বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করে যশবন্ত বলেছিলেন, তিনি রাজনৈতিক সন্ন্যাস নিচ্ছেন ঠিকই। তবে ‘বিপন্ন গণতন্ত্র’ রক্ষার লড়াই তিনি চালিয়ে যাবেন। এদিন কলকাতায় তৃণমূল ভবনে বসেও চার বছর আগের সুরই শোনা গেল তাঁর গলায়।
তিনি বোঝালেন, গণতন্ত্রের অর্থ শুধুই ভোটাভুটি নয়। যাঁরা ভোট দিয়ে কাউকে ক্ষমতায় আনছে, তাঁদের প্রতি কর্তব্য পালনও গণতন্ত্রেরই অঙ্গ। এ প্রসঙ্গে দিল্লির কৃষকদের প্রসঙ্গ তুলে যশবন্ত বলেন, “কৃষকরা আজ বিপন্ন। যাঁরা আমাদের মুখে খাবার দেন, আজ তাঁরা রাজধানীর রাস্তায় বসে। যে শ্রমিকরা রুটিরুজি খুঁজতে গিয়েছিলেন, আমরা দেখেছি তাঁরা কী ভাবে খালি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবই আজ বিপন্ন। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের এসব নিয়ে চিন্তা নেই। শাসকদলের একটাই লক্ষ্য, ভোট জেতা। সে যে ভোটই হোক।”
এআইএস যশবন্ত সিনহা ১৯৮৪ সালে চাকরি ছাড়েন। সে বছরই জনতা দলের হাত ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। এরপর ভারতীয় জনতা দলে যোগদান, একের পর এক গুরুভার সামলানো। বাজপেয়ীর অত্য়ন্ত ঘনিষ্ঠ যশবন্ত ‘মোদী-শাহদের বিজেপির’ সঙ্গে খুব একটা মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। দলে থেকেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিতেন মাঝেমধ্যেই। এরপরই দলত্যাগ। রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ।
এদিন যশবন্ত সিনহা বলেন, “বাংলার বিধানসভা ভোট অত্য়ন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শুধু এ রাজ্যের জন্যই নয়, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি তৃণমূল সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে এবারও ক্ষমতায় আসবে। সেই সংখ্যা গরিষ্ঠতাকে আরও গরিষ্ঠ করাই আমাদের কাজ। মোদী-শাহ দিল্লিতে থেকে যা করছেন তা মানুষ মানবেন না। দিল্লির পরিবর্তন বাংলাই লিখবে।”