একদিন না একদিন লাল ফিরবে, দলবদলের মরসুমে এক অনন্য চরিত্র ৭০’এর দিবাকর

প্রশংস-সমালোচনার ধার ধারেন না 'সিপিএম-দাদু'। লাল ফেরার স্বপ্নে বুঁদ দিবাকর ছুটে চলেছেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়

একদিন না একদিন লাল ফিরবে, দলবদলের মরসুমে এক অনন্য চরিত্র ৭০'এর দিবাকর
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Mar 15, 2021 | 7:06 PM

পশ্চিম মেদিনীপুর: ভোট আসে ভোট যায়। ক্ষমতার পালাবদল হয়। কিন্তু বদলায় না দিবাকরের একাগ্রতা। সেদিনের তরুণ, আজ সত্তরের বৃদ্ধ। তবু সব কাজ ফেলে আজও কমিউনিস্ট পার্টি (CPIM)- এর হয়ে একা একা প্রচার চালিয়ে যান মেদিনীপুরের দাসপুরের বামকর্মী দিবাকর আলু (Dibakar Alu)। লাল ঝাণ্ডা পাগল এই বৃদ্ধের আসল নাম জানেন না অনেকেই। তবে দাসপুর তাঁকে চেনে ‘সিপিএম দাদু’ নামে।

মাথায় মাঙ্কি টুপি, গলায় জড়ানো মাফলার। এক হাতে মোটরবাইকের হ্যান্ডেল, অন্য হাতে মাইক্রোফোন। ধোঁয়া উড়িয়ে মোটরবাইক সামনে এগোলেই সামনে ফতফত করে উড়ছে লাল ঝাণ্ডা। একুশের নির্বাচনী নির্ঘণ্ট শুরু হতেই সকাল সকাল প্রচারে বেরিয়ে পড়েছেন দিবাকর। যেখানে যাচ্ছেন জমে যাচ্ছে ভিড়। জড়ো হচ্ছেন এলাকার বাম কর্মী সমর্থকেরা। বিরোধী দলের হলেও দিবাকরের নিষ্ঠাকে সাধুবাদ জানাতে কুণ্ঠিত নন তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সম্পাদকও। টিকিট না পেলে যেখানে একের পর এক নেতা অনায়াসে শিবির বদল করেন, এই দলবদলের মরসুমে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব দিবাকর আলু  ওরফে ‘সিপিএম দাদু’।

কে এই সিপিএম দাদু?

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি। শুরু থেকেই একনিষ্ঠ বাম কর্মী। একসময়ে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কাজ করেছেন। পরে শিক্ষকতা। এখন অবসরপ্রাপ্ত মাস্টারমশাই। কিন্তু দলের কাজে অবসর নেননি দিবাকর আলু। এমনকি, ২০১১-য় পরিবর্তনের সরকার আসার পরেও নয়। বাম জামানার রমরমা অবস্থাতেও প্রতিদিন সাইকেল নিয়ে খালি গলায় প্রচার করেছেন। কখনও বাঁশের চোঙ্গা তৈরি করে সিপিএমের প্রচার করেছেন। বছরের পর বছর গড়িয়েছে। সময় বদলেছে। এসেছে ডিজিটাল যুগ। বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার রাজনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের এরিয়া কমিটির সম্পাদক ৭০ বছরের দিবাকর আলু। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিবাকরবাবুর হাতে এখন শোভা পায় একটি হ্যান্ড মাইক। সেই মাইক নিয়েই মোটর সাইকেলে চড়ে দিবারাত্র দিবাকর প্রচার করে চালাচ্ছেন। ঘাটাল বিধানসভা কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী কমল দোলইয়ের হয়ে দায়িত্ব নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সিপিএমের আঞ্চলিক কমিটির এই সদস্য।

যে মোটর সাইকেল নিয়ে সারা দিন প্রচার চালাচ্ছেন, সেটাও শুধুমাত্র দলের প্রচারে সুবিধার জন্য কেনা। ২০১৯-এর ভোটের আগে নিজের খরচেই কিনেছেন মোটরবাইক। পেট্রোপণ্যের এই দুর্মূল্যের বাজারেও নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে তেল পুড়িয়ে প্রচার চালাচ্ছেন দিবাকর। ফল কী হবে জানা নেই। কিন্তু চেষ্টার ত্রুটি নেই তাঁর। যতদিন বাঁচবেন ততদিন এভাবেই দলের হয়ে কাজ করে যাবেন বলে জানাচ্ছেন সিপিএমের এই পদাতিক।

আরও পড়ুন: ‘বিশ্বরঞ্জন আমার রাজনৈতিক গুরু,’ গত ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বীর জন্য চোখে জল সৌরভের

স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের কথায়, এই ধরনের বহু প্রবীণ মানুষ আছেন, যাঁরা শুধু ভালবেসে দলটা করেন। এঁদের হাত ধরে এবং নতুন প্রজন্মের চেষ্টাতে খুব শিগগিরই বামেরা ফিরবে বাংলায়। তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির সম্পাদক হিমাংশু বেরার কথায়, উনি দীর্ঘদিন ধরে একনিষ্ঠভাবে সিপিএম করে চলেছেন। ওঁর এই প্রচার ও দলকে ভালোবাসা দেখে আমরা অভিভূত। ‘সিপিএম-দাদু’ অবশ্য প্রশংসা-সমালোচনার ধার ধারেন না। লাল ফেরার স্বপ্নে বুঁদ দিবাকর ছুটে চলেছেন এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়।