দুধ দিয়ে মানুষের পুজো করছে আলিপুর সর্বজনীন
Durga Puja 2021: সম্পূর্ণ বেসরকারি এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে 'শিশু পুষ্টি'। ভালো পুজোয় যেমন পুজোর রীতিনীতি ভালভাবে মানা হয়, এক্ষেত্রেও তাই।
প্রীতম দে: পুজোর বাজেট কেটেছেঁটে দুধের বাজেট হল! স্নানযাত্রায় জগন্নাথকে দুধ দিয়ে স্নান করানো হয়। শিবরাত্রিতে শিবের মাথায় জলের মতো দুধও ঢালা হয়। দুর্গাপুজোয় এরকম কোনও রীতি দেখা না গেলেও আলিপুর সর্বজনীন এবার মায়ের পুজো করছে দুধ দিয়ে!
৩০০০ জন শিশুকে প্রতিদিন দুধ খাওয়াচ্ছে তারা। মহালয়া পর্যন্ত। “করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার লক্ষণীয়ভাবে বেশি হবে। তাই-ই তাদের পুষ্টি প্রয়োজন। প্রয়োজন ইমিউনিটি বৃদ্ধির। আবার করোনা আবহে দুর্গাপুজো কতটা জাঁকজমক বা আড়ম্বরে পালন করা যাবে, তা নিয়েও রয়েছে একরাশ সংশয়। তার থেকে এটাই পুজো করার শ্রেষ্ঠ পথ বলে মনে হয়েছে আমাদের। অন্যের পাশে দাড়ানোর পুজো,” বললেন শহরের অন্যতম বড় পুজো কমিটি আলিপুর সর্বজনীনের প্রধান সদস্য সাহেব দাস। তাঁরা পুজোর সম্ভাব্য বাজেট থেকে টাকা কেটে শিশু সেবায় ব্রতী হয়েছেন। পয়লা জুন থেকে প্রতিদিন এলাকার বিভিন্ন বস্তির তিনহাজার শিশুকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তাঁরা ২৫০মিলিলিটার করে দুধ পান করাচ্ছেন। কমপক্ষে মহালয়া পর্যন্ত এই প্রয়াস চলবে। তারপরেও চলতে পারে।
সম্পূর্ণ বেসরকারি এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শিশু পুষ্টি’। ভালো পুজোয় যেমন পুজোর রীতিনীতি ভালভাবে মানা হয়, এক্ষেত্রেও তাই। বাচ্চার মুখে দুধ যাতে অন্য কেউ হাত দিয়ে না নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে বেশ কঠোর নিয়মকানুন পুজো কমিটির। যে সমস্ত দরিদ্র বা নিম্নবিত্ত মা-বাবার আর্থিক সঙ্গতি নেই অথবা লকডাউনে কাজ চলে গিয়েছে, আয় নেই, তাদের খুঁজে বের করে কার্ড করে দেওয়া হয়েছে।
প্রতিদিন সকালে কোলের শিশু থেকে দ্বাদশ বর্ষীয় শিশুকে সঙ্গে নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। শর্ত একটাই: অসুস্থতার জন্য অনুপস্থিত থাকা ছাড়া অন্য শিশুর ক্ষেত্রে সামনে দাঁড়িয়েই দুধ পান করতে হবে। বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না। দুধ বাড়ির অন্য কোনও কাজে ব্য়বহার করা যাবে না। বাড়ির অন্য কাউকে তা পান করানো যাবে না। পান করাতে হবে কেবলমাত্র চিহ্নিত কার্ডধারী শিশুকেই। কারণ করোনার তৃতীয় তরঙ্গে শিশুদের বাঁচানোর একমাত্র উপায় ইমিউনিটি বৃদ্ধি। স্বাভাবিকভাবে পুজোর বাজেট হয় ৫০ লাখের কাছাকাছি। গত বছরের বাজেট একধাপে ১০ লাখে নামিয়ে আনা হয়। এবছর সেটা আরও কমবে। তার কারণ দুধের জন্য খরচ প্রতিদিন ২৫ হাজার টাকা। যে ঠাকুরকে নিবেদন করা অর্ঘ্য, সে ঠাকুর না পেলে পুজো সফল হবে কী করে?