EXCLUSIVE: টোটার নাচ ভাইরাল, নেপথ্যের গল্প এবার TV9 বাংলায়…
Inside Story: বাংলা ইন্ডাস্ট্রি তো চিনতেই পারল না টোটা রায়চৌধুরীর মত জাত অভিনেতাকে। এই নাচের নেপথ্যের গল্পটা অনেকেরই অজানা। সেই গল্পই এবার প্রকাশিত করছে TV9 বাংলা।
রক্তিম ঘোষ
কলকাতাঃ সদ্য মুক্তি প্রাপ্ত ফিল্ম ‘রকি অর রানি কী প্রেম কাহিনী’-তে টোটা রায়চৌধুরীর কত্থক নাচ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই নাচের ভিডিও ঘুরছে। আর তার ভিউস এখন আকাশছোঁয়া। রণবীর সিংয়ের সঙ্গে ‘ডোলা রে’ নাচ থেকে টলিউড ইন্ডাস্ট্রি অবাক। এত ভাল নৃত্যশিল্পী টোটা? অবাক হচ্ছে টলিউড। নেটিজেনদের একাংশ তো বলতেই শুরু করেছে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রি তো চিনতেই পারল না টোটা রায়চৌধুরীর মত জাত অভিনেতাকে। এই নাচের নেপথ্যের গল্পটা অনেকেরই অজানা। সেই গল্পই এবার প্রকাশিত করছে TV9 বাংলা।
আমাদের ডিজিটালের মুখোমুখি ভারতের প্রখ্যাত কত্থকশিল্পী কুমার শর্মা। যিনি এই গানের জন্য নাচের তালিম দিয়েছেন রণবীর সিংকে। এমনকি তাঁর ছাত্র ও বন্ধু ছিলেন টোটাকে কত্থক নৃত্যের তালিমের জন্য। সামনে থেকে কেমন দেখেছিলেন টোটার একাগ্রতা?
প্রশ্নঃ কোথায় আছেন?
কুমার শর্মাঃ এই মাত্র পৌঁছালাম চন্ডীগড়। আসলে এটা আমার শহর। শনিবার ব্যস্ত ছিলাম বেঙ্গালুরুতে আমার ওয়ার্কশপ নিয়ে। এখন কিছুদিন বিশ্রাম। তারপর যাব গোয়ায়।
প্রশ্নঃ শুনেছেন, কলকাতার ফিল্মপ্রেমীরা, ‘রকি অর রানি কী প্রেম কাহিনী’-তে টোটা রায়চৌধুরীর নাচ দেখে অবাক হয়ে গিয়েছে? কীভাবে সম্ভব হল?
কুমার শর্মাঃ এটা একদমই তাঁর কঠোর পরিশ্রম। আমি সরাসরি তাঁকে নাচের তালিম দিইনি। আমার অন্যতম প্রিয় বন্ধু নিকিতাকে ওঁকে নাচের তালিম দিয়েছিল। আমি প্রথম ওঁকে দেখেছিলাম সেটে। দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কলকাতায় প্রায় ২-৩ মাস নিকিতাকে ওকে কত্থকের তালিম দিয়েছিলেন। আমি ব্যস্ত ছিলাম রণবীরকে এই গানের জন্য তৈরি করতে।মুম্বইয়ে আমার সঙ্গে টোটার অনেক কথা হয়েছে।
প্রশ্নঃ কত্থকের মত নৃত্যশৈলী তো আর ২ মিনিটে নুডলস বানানো নয়। টোটা রায়চৌধুরী একজন তরুণ অভিনেতা নন। একটা বয়সের পর এত কঠিন নাচ তিনি রপ্ত করেছেন। বলা ভাল আত্মস্থ করেছেন। একজন কত্থকের গুরুজি হিসেবে এই নাচকে আত্মস্থ করার বিষয়টা কেমনভাবে দেখেন?
কুমার শর্মাঃ আমি নিয়মিত জিম করি। সেখানে আমার এক বন্ধু এসে বলে, রণবীর কি অসাধারণ কত্থক নেচেছে। সে জানত, আমি রণবীরকে ট্রেনিং করিয়েছিলাম। তারপর সে বলল, তাঁর মাস্টারজিও দারুণ নেচেছেন। যখন আমি বললাম, উনিও প্রথমবার কত্থক শিখে নাচলেন। বিশ্বাস করুন, সে আমার কথা বিশ্বাসই করেনি। এটাই বোধহয় সাফল্য। এটাই বোধহয় নিষ্ঠা।
কী প্যাশন। কী ডিটেলিং। বাপ রে বাপ। কঠোর পরিশ্রমের যে কোনও বিকল্প হয়না, টোটা রায়চৌধুরী তাঁর উদাহরণ।
প্রশ্নঃ মুম্বইতে চূড়ান্ত মহড়ার আগে টোটার সাথে কথা হয়েছিল?
কুমার শর্মাঃ না। এই গোটা প্রোজেক্টের চিফ কোরিওগ্রাফার ছিলেন বৈভবী মার্চেন্ট। তিনিই কলকাতায় নিকিতার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। যিনি সরাসরি টোটাকে অনুশীলন করাতেন। আর আমাকে যোগাযোগ করতেন রণবীর সিংয়ের জন্য। আমার ছাত্র রাহুল শর্মা ‘ডোলা রে’ অংশটার প্রস্তুত করেছিলেন টোটা রায়চৌধুরীকে। যোগাযোগ আমার সবার সঙ্গে ছিল। কিন্তু প্রথমবার ফাইনাল মহড়ার আগে আমি দেখলাম টোটা রায়চৌধুরীকে।
প্রশ্নঃ শুটিংয়ের আগে টোটার সঙ্গে কথা হয়েছিল?
কুমার শর্মাঃ একদম । অনেক কথা হয়েছে। ও আমাকে নাচের প্রতিটা ডিটেলিংয়ের জন্য কথা বলেছে আমার সঙ্গে। আমাদের মধ্যে ভঙ্গিমার প্রতিটি খুঁটিনাটি নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে। টোটাতো আমাকে বলেছিলেন, তিনি অনেকদিন ধরে টলিউডে কাজ করছেন। অনেকগুলো কাজ করেছেন। অভিনেতার থেকেও আমি মানুষ টোটা রায়চৌধুরীকে বেশি পছন্দ করি। কথা বলার পরে খুব পছন্দ হয়েছে ওনাকে। কী ডেডিকেশন!
প্রশ্নঃ তরুণ নয়। বয়স হয়েছে। এমন একজন মানুষ যখন নিখুঁত কত্থক নাচেন ক্যামেরার সামনে। এবং সেটা প্রথমবার শিখে। একজন কত্থক গুরু হিসেবে এই বিষয়টাকে কী বলবেন?
কুমার শর্মাঃ মুম্বইতে আসার পর যখন ফাইনাল রিহার্সাল চলছিল, তখনই আমার সরাসরি কথা শুরু হয় টোটাজীর সঙ্গে। কত্থক নাচ ওনার ‘কাপ অফ টি’ ছিল না। এটা বুঝুন। আর পর্দায় উনি যা করেছেন, আমার ধারণা এত ভাল কেউ করতে পারত না। প্রতিমুহূর্তে কত্থকের প্রতিটি খুটিঁনাটি নিখুঁত করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। কী পরিশ্রমটাই না করেছেন।
যার ফল দেখুন। প্রত্যেকে তাঁর প্রশংসার পঞ্চমুখ। এটাই তো একজন শিল্পী চান। এই প্রশংসাগুলোই তো প্রাপ্তি।
প্রশ্নঃ যখন ক্যামেরা রোল হতে শুরু করল। নাচের আগে কী অবস্থা ছিল টোটা রায়চৌধুরীর?
কুমার শর্মাঃ আমি ওই দুর্গাপুজোর সেটে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে অভিনেতারা বাদে ২০০ জন নৃত্যশিল্পী উপস্থিত ছিলেন। এত নৃত্যশিল্পীর সামনে এই পারফরম্যান্স মুখের কথা নয়। বুঝুন, যেটা আপনি রোজ করেন না, সেটা যদি করতে হয় এত মানুষের সামনে কতটা কঠিন ভাবুন। আর তিনি কী করছেন? কত্থক নাচ। কাদের সামনে করছেন। সবাই নামজাদা নৃত্যশিল্পী। মুখের কথা নয়। সেটা কী সুন্দর ফুটিয়ে তুললেন।
বৈভবী ম্যামও টোটাজীর নাচ দেখে মুগ্ধ। আসলে আমরা সবাই এখন মুগ্ধ।