Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

রবীন্দ্রনাথের কাছে মৃত্যু এবং জীবন যেন দিন এবং রাত্রির সংযোগস্থল: অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়

কঠিন মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে মৃত্যুকে মেনে নিতে রবীন্দ্রনাথ কোথাও হাত ধরতে পারবেন আমাদের? লিখছেন মনোবিদ তথা কবি অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়।

রবীন্দ্রনাথের কাছে মৃত্যু এবং জীবন যেন দিন এবং রাত্রির সংযোগস্থল: অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 09, 2021 | 11:24 AM

করোনা আতঙ্কের মধ্যে এখন চারিদিকে শুধুই মৃত্যুর খবর। কখনও সার্বিক। কখনও বা প্রিয়জন। প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর পেতে হবে, এই বিষয়টাতে যেন আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। এর মধ্যেই আজ ২৫শে বৈশাখ। বাঙালির মননে এই দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী। রবি ঠাকুরের জন্মদিন। এই বিপর্যয়ের মাঝে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে এ বার কোনও উৎসব, অনুষ্ঠান নেই। কিন্তু তিনি তো জীবনবোধে রয়েছেন। এই বিশেষ দিনে কি তাঁকে আরও বেশি করে মনে পড়বে সকলের? নাকি এই যাপন সারা বছরের? রবীন্দ্রনাথের বহু লেখাতে মৃত্যু ভাবনা বিভিন্নভাবে এসেছে। কিন্তু বাস্তব দুর্যোগে সেই লেখা বা গান কি আদৌ শান্তি দিতে পারবে? এই সময়ে যাঁদের মননে রবীন্দ্রনাথ, তাঁরা মৃত্যু-মিছিলের এই ভীষণ দুঃসময়ে রবীন্দ্রনাথকে কীভাবে দেখবেন? কঠিন মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে মৃত্যুকে মেনে নিতে রবীন্দ্রনাথ কোথাও হাত ধরতে পারবেন আমাদের? লিখছেন মনোবিদ তথা কবি অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়

আজ ২৫শে বৈশাখ। রবি ঠাকুরের জন্মদিন। কিছু কিছু মানুষের কাছে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের যাপন সারা বছরেরও শুধু নয়। প্রতি অনুপলের। আবার কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা হয়তো রবীন্দ্রনাথকে ওভাবে যাপন করেন না। তাঁরা হয়তো অন্য কারও সৃষ্টি বা অন্য কোনও পথ আঁকড়ে ভাল থাকার রসদ খুঁজে পান। আমি মনে করি, কাকে নিয়ে কে গোটা বছর ভাল থাকবেন, এ স্বাধীনতা তাঁর।

তবে এই বিশেষ দিনে যে মানুষগুলি সারা জীবন, সারা বছর, প্রতি মুহূর্ত রবীন্দ্রনাথকে যাপন করেন, তাঁদের হয়তো আরও একটু বেশি করে রবীন্দ্রনাথের কথা মনে পড়ে। হয়তো আরও একটু বেশি করে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। তবে সেখানে নিশ্চয়ই আমাদের ব্যক্তি অভিমত, অভিরুচির একটা ফারাকের জায়গা থেকে যায়।

Card

রবীন্দ্রনাথের কোনও লেখা বা কোনও গান, কোনও মানুষকে তাঁর জীবনের কোন পর্যায়ে সাহায্য করবে বা কোন অবস্থায় তাঁর মনের শক্তির যোগান দেবে, এটা এক একজনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বলতে পারি, আমার ক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় রবীন্দ্রনাথের কিছু গান, কিছু লেখা, কিছু উচ্চারণের একটা বিরাট ভূমিকা থেকেছে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের গানের কিছু লাইনের বিরাট ভূমিকা থেকেছে। সেখানে অনেক সময়ই যেখানে এমন একটা বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি গত এক বছরের উপর, আমার বারবার মনে হয়েছে ‘না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে, কীসের লাগি এই আয়োজন এমন কলরবে…’। এ বার এই লাইন দু’টো শুনলে অন্য একজন মানুষের একই রকম অনুভূতি হবে কি না, সেটা তাঁর নিজের জীবন, তাঁর নিজের পছন্দ, তাঁর নিজের ইতিহাসের দ্বারা কোথাও নির্মিত হয়।

আরও পড়ুন- বাস্তবে এই কঠিন সময়ে আমি তো বলব, রবীন্দ্রনাথের হাত ধরা যাচ্ছে না: ইমন চক্রবর্তী

আমার মনে হয় এই বিপর্যয়ের সময় যে-যে মানুষের লেখা, গান বা শিল্প, সাহিত্য বা অন্য কিছুর মধ্যে দিয়ে কোথাও একটু ভরসা পাচ্ছেন, আস্থা পাচ্ছেন, তাঁকেই যেন আঁকড়ে ধরেন। শুধু রবীন্দ্রনাথকেই আঁকড়ে ধরতেই হবে, এমনটা আমি বলতে পারি না। তবে হ্যাঁ, মৃত্যু চেতনা, উপনিষদের কিছু ভাবনার কথা যেভাবে রবীন্দ্রনাথের লেখায় আছে, গানে আছে, যদি সেটা কোনও মানুষের মর্মে পৌঁছয়, তাঁকে যদি কোথাও সেখানে কোনও আশ্বাস দেয়, সেটা সেই মানুষটির পক্ষে নিশ্চয়ই সহায়ক হয়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি সেটা মনে করেছি। আমার ক্ষেত্রে অন্তত সেখানে রবীন্দ্রনাথের গানের ভূমিকা অবশ্যম্ভাবী ভাবে থেকেছে। মৃত্যুকে রবীন্দ্রনাথ খুব ভয়াল রূপে কিন্তু দেখেননি। বরং মৃত্যু এবং জীবন যেন দিন এবং রাত্রির সংযোগস্থল। যেন আলো এবং অন্ধকারের মতোই সহজ এবং সতত। সেটা তাঁর গানে বারবার উঠে এসেছে। যেটা অনেক সময় ব্যক্তি স্তরে আমাকে আশ্বাস দিয়েছে।

অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।