Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Durga puja: উৎসবকে কেন্দ্র করে এই গান তৈরির চল সারা ভারতে আর কোথাও নেই: দেবজ্যোতি মিশ্র

অতিমারিতেও পুজো আসে। বাতাসে ভেসে বেড়ায় শিউলির গন্ধ, স্বচ্ছ আকাশ জানান দেয় মা আসছেন... আর পুজো মানেই পুজোর গান। তার জন্য নিরন্তর প্রতীক্ষা... একরাশ উন্মাদনা। টিভিনাইন বাংলাও এবার তার দর্শকদের জন্য নিয়ে এসেছে আনকোরা এক পুজোর গান। আমাদের জন্য এবারে পুজোর গান বেঁধেছেন সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? হাইটেক দুনিয়ার নিউ জেনারেশনের কাছে পুজোর গান কি আজও বয়ে আনে সেই চেনা উন্মাদনা? অকপট সুরকার...

Durga puja: উৎসবকে কেন্দ্র করে এই গান তৈরির চল সারা ভারতে আর কোথাও নেই: দেবজ্যোতি মিশ্র
দেবজ্যোতি মিশ্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 20, 2021 | 11:36 AM

‘পুজোর গান’ বললেই স্মৃতি উস্কে দেয় ছোটবেলার কোন ঘটনা?

তখন বেশ খানিকটা ছোট। গান নিয়ে কেরিয়ার শুরু হয়নি। পুজো আসত। পুজো এলেই গানের প্লাবনে ভেসে যেতাম। সেই গানের প্লাবনে ভিড় করতেন সলিল চৌধুরী, লতা মঙ্গেশকর, আর ডি বর্মন, আরতি মুখোপাধ্যায়… অপেক্ষা করতাম সুধীন দাশগুপ্তর গানের জন্য। একদিন কিশোর কুমারের এক কালজয়ী গান শুনলাম: “আকাশ কেন ডাকে, মন ছুটি যায়…” পুজোর গানকে চিনতে পারা প্রথম এই গানের মধ্যে দিয়ে। পুজোর গান নিয়ে আমার প্রথম বেলার স্মৃতি খানিক ওরকমই।

তারপর?

বড় হয়ে উঠলাম। ভায়োলিনে বাজাতাম গান, পুজোতে দেখতাম চারিদিকে গান বাজছে। তখনও জানতাম না শুধুই পুজোকে কেন্দ্র করে এত রকমের গান তৈরি হয়। ক্রমে বেতার জগত পেরিয়ে গ্রামোফোনের গানের ডালি এল। সেখানে আগে থেকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হত কী কী গান আসছে, কার সুরে কে কী গান গাইতে চলেছেন ইত্যাদি… অনন্য সব শিল্পী। অবাক হই, শুধুমাত্র একটি উৎসবকে কেন্দ্র করে এই যে গান বাঁধার চল তা আমাদের এখানে ছাড়া সারা ভারতে আর কোথাও নেই।

নিজের কেরিয়ারে প্রথম পুজোর গানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কীভাবে?

বয়স এগোতে লাগল। ক্রমে আশিতে আসিলাম আমি। নিজে যুক্ত হলাম সলিল চৌধুরীর সহকারী হিসেবে। আমি ফ্লোরে কাজ করছি, আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গান গাইছেন, “আর দূর নেই দিগন্তের বেশে দূর নেই…”। আমি সলিল চৌধুরীর সহকারী আবার একই সঙ্গে ফ্লোর কন্ডাক্টর।

(একটু থেমে…)

কী সব আইকনিক গান… সুবীর সেন, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এই তিনজনের সঙ্গেই আমার পুজোর গানের জার্নি শুরু বলা যেতে পারে এবং অবশ্যই একইসঙ্গে সবিতা চৌধুরীর পুজোর গান, সেটির কথাও এখানে উল্লেখ করতে হবে। সরস্বতীর বরপুত্র তাঁর সহকারী আমি… পুজোকে কেন্দ্র করে একের পর এক গান বের হচ্ছে… শুরুটা খানিক এভাবেই।

আর নিজের বানানো প্রথম পুজোর গান…?

আমার একটা ব্যান্ড ছিল… ওই ৮৩-৮৪ নাগাদ। সেখান থেকেই এক অ্যালবাম প্রকাশ পেয়েছিল। নাম ছিল ‘বাইসাইকেল’। পুজোর সময়ই অ্যালবামটা রিলিজ করেছিল, মনে আছে। আমি গান লিখেছিলাম, সুরও দিয়েছিলাম আমি। মজার কথা কী জানেন, গানটি পুজোতে বের হওয়ার কোনও কথাই ছিল না। কিন্তু পুজোতেই বের হয়েছিল পাকচক্রে। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে ‘ঘুম নেই’ বলে একটি অ্যালবামকেই আমার সেই অর্থে নিজের বানানো পুজোর গান বলা যেতে পারে।

লোকে বলে, এক নারকেল তেলের ব্র্যান্ডের জন্য আপনার তৈরি সেই আইকনিক পুজোর গান অন্তত একবার না শুনলে নাকি পুজো পুজো ভাবটাই আসেনা…

(হাসি) দু’বার ওই ব্র্যান্ডের জন্য পুজোকে মাথায় রেখে গান বানিয়েছিলাম। একবার মৈত্রেয়ীকে দিয়ে করানো হয়েছিল। পরবর্তীকালে সমস্ত শিল্পীদের দিয়ে গাওয়ানো হয়েছিল। কোনও একটা লাইন গাইছে শ্রীকান্ত, কোনও একটা লাইন গাইছে লোপা… কোনও একটা লাইন গাইছে রূপম ইসলাম… হঠাৎ ব্রততী পাঠ করে উঠলেন… আক্ষরিক অর্থেই পুজোর গান।

টিভিনাইন বাংলার জন্য এবারের গান বেঁধেছেন আপনি, সংবাদমাধ্যমের জন্য পুজোর গান বাঁধতে কি আলাদা প্রস্তুতি লাগে? নাকি পুজোর  গান সার্বজনীন? সব ক্ষেত্রে, সব মাধ্যমেই এক?

গানের জন্য প্রয়োজন হয় ভাবনা, যে ভাবনার মধ্যে হাওয়ায় ভাষা টুকরো কিছু কথা নয়। এমন কিছু কথা যা আমাদের ভেতরকে নাড়া দিয়ে যেতে পারে…।

এই গানের ক্ষেত্রেও কি ঠিক এমনটা হয়েছে?

আমি প্রথম যখন এই লেখাটা পেলাম, মুগ্ধ হয়েছিলাম।  ”বাতাসে কাশের দোলা, মনে মনে শোনো উতলা… বাঁশি খানি কার বাজে…”। এই যে ‘বাঁশি খানি কার বাজে…’ এই কথাটা বারেবারে আমাদের রবীন্দ্রনাথের কাছে নিয়ে যায়। TV9 বাংলার এই গানটির কথা যদি কেউ ভাল করে লক্ষ্য করেন, এক জায়গায় রয়েছে, ”দু’চোখে আজ শিশির খোঁজো…”– এই লাইনটি আমাকে ভীষণ ভাবে বিহ্বল করেছিল। শিশির যেন বলে দেয় ভোর, এমন এক ক্রান্তিকাল যা জানান দেয় নতুন সকালের। নেওয়া নতুন ভোরের শপথ।

(খানিক ভেবে)

আরও এক লাইন আছে, ‘বন্ধুকে নিই চেনে …’। জীবনের এই যাত্রাপথে শেষপর্যন্ত যা আমাদের জীবন উজ্জীবনের সামনে এনে দাঁড় করায়, তা হল বন্ধুত্ব। সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সঠিক বন্ধুকে চিনে নেওয়া, এটার থেকে বড় কোনও বার্তা বোধহয় আর নেই। লেখাটা এত ভাল লাগে যে সেখান থেকে আমি গাই… সুর তৈরি করি… আমার সঙ্গে বিভিন্ন শিল্পীরা যুক্ত হন।

এই গানে আপনার সঙ্গে যাঁরা  রয়েছেন, তারা বেশিরভাগই জেন-ওয়াই, প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নিয়ে না গাইয়ে কলেজে পড়া এক ঝাঁক তারুণ্যকে বেছে নেওয়ার পিছনে কি কোনও বিশেষ কারণ রয়েছে?

ওদের তারুণ্য আমাকে তরুণ রাখে। আমরা তো চামড়ায় তরুণ হব না। আমরা মগজে তরুণ হব। সেই তারুণ্যেরই উদাহরণ তিতাস, অরিত্র, সৌরিমা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলোজফি নিয়ে পড়ছে তিতাস। সৌরিমা পড়ছে প্রেসিডেন্সিতে… অন্যান্য যারা রয়েছে সবাই ভীষণ ইয়ং, আর এই সবুজ-কাঁচার আহ্বানটাই আমার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। ওদের যে শুধু উজ্জীবিত গলার জন্য ওদেরকে দিয়ে গাইয়েছি, এমনটা নয়। ওদের ওই তরুণ মনটাও পেয়েছি গোটা গানে। এভাবেই যেন পুরাতনের সঙ্গে নতুনের এক গল্প তৈরি হয়।

সৌরিমা-তিতাসদের জেনারেশন অর্থাৎ নিউএজ কি এখন পুজোর গানের সঙ্গে মন থেকে কানেক্ট করতে পারে? ভার্চুয়াল জগতে পুজোর গানের গুরুত্ব আজ কতটা প্রাসঙ্গিক?

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহুকিছু বদলে যাবে… কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের অবলম্বন হল ভালবাসা। ভালবাসা যে গানের মধ্যে রয়েছে, সেই গানের কাছে মানুষ সমর্পণ করবেই। একটা উদাহরণ দিই, মেয়েরা পুজোর সময় শাড়ি পরতে ভালবাসে। শাড়ি পরছে বলে তাদের মধ্যে কী উত্তেজনা। ম্যাচিং ব্লাউজ কী হবে, কীভাবে সাজবে সব নিপুণভাবে গোছানো রয়েছে তাঁদের। শাড়ি তো আজকের পোশাক নয়। ঠিক তেমনই পুজোর গানের সঙ্গেও ওই একই ভাবে রিলেট করতে পারে তাঁরা। তারা হয়তো রেডিয়োতে বসে গান শুনছে না, মোবাইলে শুনছে, কিন্তু তারা মহালয়ার গান জানে… শোনে। আমি নিশ্চিন্ত আমাদের উত্তরাধিকারীরা সঠিক গানের মর্ম বোঝে।

সবশেষে TV9 বাংলার দর্শকদের এই পুজোর গান নিয়ে সুরকার দেবজ্যোতি মিশ্র কী বলবেন?

একটাই কথা বলব… এই গানটার একটা কাব্য আছে। গানটার মধ্যে একটা কমিউনিকেশন রয়েছে। ছন্দ শেষ কথা নয়, শেষ কথা হল মানুষের মনকে ছুঁয়ে দেখা, সেটা এই গানের কথার মধ্যে ছিল। তাই সুরের মধ্যেও আমি ওই একই জিনিস রাখার চেষ্টা করেছি। মানুষের কাছে পৌঁছক… এটাই চাওয়া।