Karar Oi Louho Kopat: রহমানের ‘কারার ওই’ শুনিনি প্রকাশ্যের আগে: কাজী অনির্বাণ
Nazrul-Rahman: "আমার দাদুর লেখা গান 'কারার ওই লৌহ কপাট' রহমান কীভাবে তৈরি করলেন, তা কিন্তু প্রকাশের আগে আমরা শুনিনি একবারও। তাই জানতামই না কী-কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল সেখানে।" সোমবার (১৩ নভেম্বর) 'পিপ্পা' ছবির টিমের বিবৃতি আসার পরই TV9 বাংলাকে সাফ জানিয়ে দিলেন নজরুল ইসলামের নাতি কাজী অনির্বাণ।
“আমার দাদুর লেখা গান ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ রহমান কীভাবে তৈরি করলেন, তা কিন্তু প্রকাশের আগে আমরা শুনিনি একবারও। তাই জানতামই না কী-কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল সেখানে।” সোমবার (১৩ নভেম্বর) ‘পিপ্পা’ ছবির টিমের বিবৃতি আসার পরই TV9 বাংলাকে সাফ জানিয়ে দিলেন নজরুল ইসলামের নাতি কাজী অনির্বাণ।
ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পিপ্পা’ ছবির একটি গানকে ঘিরে তোলপাড় দুই বাংলা। বাংলাদেশের একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধর উপর নির্মিত ছবিটিতে কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি গান ব্যবহৃত হয়েছে। এবং সেই গানটি ‘নিজের মতো করে’ কম্পোজ় করেছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সঙ্গীত পরিচালক এআর রহমান। যে নজরুলগীতির সুর বাঙালির কানে বসে গিয়েছে, সেই গানকে নিজের মতো বসিয়ে তৈরি করেছেন রহমান। পাল্টেছেন গানের কথাও। এতে দুই বাংলাই উত্তাল। ভীষণ রুষ্টও হয়েছেন রহমানের উপর। সোমবার সন্ধ্যায় পাল্টা একটি বিবৃত প্রকাশ করেছে ‘পিপ্পা’। সেখানে তারা সাফ জানিয়েছে, সমস্ত স্বত্ববিধি মানা হয়েছে। বলা হয়েছে, সমস্ত চুক্তি মেনেই গানটির রিমেক করা হয়েছে। সেই চুক্তিতে সই করেছেন নজরুল পরিবারের কল্যাণী কাজী এবং সাক্ষী হিসেবে সই করেছেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র কাজী অনির্বাণ।
কারা ওই লৌহ কপাট গানের রহমান সংস্করণ নিয়ে যখন বাংলা উত্তাল তখন TV9 বাংলা কথা বলেছিল নজরুলের আর এক নাতি কাজী অরিন্দমের সঙ্গে। ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “দু’দিন আগে হঠাৎ করে দেখলাম রহমান সাহেব যিনি একজন বড় মাপের মিউজিক ডিরেক্টর, তিনি ওই গানটির সুরই বদলে দিলেন! অবাক লাগছে! হতবাক হয়ে যাচ্ছি। প্রশ্ন জাগছে, এই কাজটি করার আগে কারও সঙ্গে কথা বলেছিলেন উনি? সুর পরিবর্তন করে ঠিক কী বোঝাতে চাইলেন তিনি? একটা বহুশ্রুত সুর, বহুদিন আগের একটা গান কোন অধিকারে তিনি বদলে দিতে পারেন, এটাই এখন আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আমরা অবশ্যই চাই, দাদুর গান দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ুক, কিন্তু এইভাবে? নজরুল ইসলামের গান শুরু থেকেই আধুনিক, তাই তাঁকে রি-অ্যারেঞ্জ করে, মডিফাই করে লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা কেন জাগল ওঁর? আমি এটা মানি না। কোথাও গিয়ে যে সংস্কৃতি বাঙালি ছোটবেলা থেকে লালন করেছে, সেই সংস্কৃতিরও মূল্য থাকল না বলেই মনে করি আমি।”
সোমবার যখন ‘পিপ্পা’র বিবৃতি পাওয়া গেল তখন ফের TV9 বাংলা যোগাযোগ করে নজরুলের দুই নাতি কাজী অনির্বাণ এবং কাজী অরিন্দমের সঙ্গে। কাজী অনির্বাণের সঙ্গে যোগাযোগের পর তিনি চুক্তিপত্রের কপি শেয়ার করেছেন TV9 বাংলার সঙ্গে। তাতে লেখা গানটি নিজের মতো করে ব্যবহার করা যাবে, নজরুলের সাহিত্য কর্মকে পুননির্মাণ করা যাবে। এডিট করা যাবে এবং রি-ফরম্যাটও করা যাবে। সেই চুক্তিপত্রে সাক্ষী হিসেবে সই করেছিলেন অনির্বাণ। তাঁর বক্তব্য, “এই চুক্তি সই করার সময় আমার মা কল্যাণী কাজী ভেবেছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের গানটিকে আরও সুন্দর করে গেয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হবে। কারণ রহমান সাহেব আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষ। সেই সরল বিশ্বাসেই কিন্তু আমার মা চুক্তিপত্রে সই করেছিলেন। আমি সাক্ষী হয়েছিলাম। আমরা কিন্তু এটা কখনওই বুঝিনি কিংবা আমাদের বোঝানো হয়নি গানের কথাগুলোই পাল্টে ফেলবেন রহমান। কিংবা তিনি সুর পাল্টে ফেলবেন। তারপর আমাদের একবারও শোনান হয়নি গানটা। কী করা হল কালজয়ী কম্পোজ়িশন নিয়ে জানতেই পারলাম না। ২০২১ সালে গানের চুক্তিপত্র হল। আমার মা কল্যাণী কাজী তখন জীবিত (২০২৩ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি প্রয়াত হয়েছে)।”
গানটিকে কেন্দ্র করে ১৬ নভেম্বর একটি সাংবাদিক বৈঠক করবেন অরিন্দম কাজী এবং তাঁর বোন খিলখিল কাজী। ‘পিপ্পা’র বিবৃতি পড়ে কাজী অরিন্দম সাফ বলেছেন, “‘পিপ্পা’র বিবৃতিটি আমি পড়েছি। কিন্তু চুক্তিপত্রে কী লেখা আছে এটা আমরা পাঁচ ভাই-বোন কিছুই জানতাম না। একমাত্র জানতেন আমার দাদা কাজী অনির্বাণ। গানটা যখন বের হল এবং চারদিকে এত হইচই শুরু হল, তিনি আমাকে সেই কাগজটা পাঠালেন। তাতে দেখলাম লাইসেন্স চুক্তিতে সই রয়েছে আমার মা কল্যাণী কাজীর এবং কাজী অনির্বাণের নাম লেখা সাক্ষী হিসেবে। আমি কিন্তু অত ভালভাবে কাগজটি পড়িনি। এই সংক্রান্ত যা-যা কাগজ আছে, আমরা সংবাদ মাধ্যমের হাতে তুলে দেব।”