Bappi Lahiri Death: ক্যামেরা রোলের আগে মেকআপ নয়, নিজের সোনার গয়না ঠিক করে নিতেন: মীর

তাঁর গান শুনে, গানে নাচ করেই তো আমাদের বেড়ে ওঠা। পরবর্তীকালে নব্বই দশকের শেষের দিকে আমি তখন রেডিয়ো শুরু করেছি। তখন একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করতে গিয়েছি। দেখেছি বাপ্পি লাহিড়িকে।

Bappi Lahiri Death: ক্যামেরা রোলের আগে মেকআপ নয়, নিজের সোনার গয়না ঠিক করে নিতেন: মীর
গ্রাফিক্স- অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 16, 2022 | 6:07 PM

গতকাল সন্ধ্যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের চলে যাওয়াটা একটা বড় ঘা ছিল। সেই ক্ষত থেকে এখনও আমরা সেরে উঠতে পারিনি। কবে করব তা-ও জানি না। আজ সকালবেলা যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, রেডিয়োতে আমার শো-এর যিনি প্রোডিউসার তাঁর সঙ্গে আলোচনা করলাম। আমরা সব ঠিক করে রেখেছিলাম। আজ শুধু সন্ধ্যা মুখোপাধ্য়ায়কে নিয়েই কথা বলব। গানে-কথায়ও তাঁরই প্রসঙ্গ থাকবে। জানতাম, আজ খবরের কাগজগুলোও প্রচুর লেখালেখি করবে। সেখান থেকে কিছু বাছাই করা প্রতিক্রিয়া শেয়ার করব। এমনটা ভেবেই আমি প্রস্তুত ছিলাম। সকাল ৭টায় আমার শো শুরু হয়। ৭টা ৪৫ পর্যন্ত তেমনটাই চলছিল। ৭টা ৫০-৫৫ নাগাদ এই খবরটা যখন এল, আমাকে কেউ একজন মেসেজ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট ঘাঁটতে লাগলাম, ফোন চেক করতে লাগলাম। স্টেশনের টিভিটা খুললাম। যে মুহুর্তে আমি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে ঢুকছি, ঠিক সেই মুহূর্তে একটা পাথর যেন এসে আমার মাথায় পড়ল। মনে হল যেন হাজার টনের কোনও লোহার জিনিস এসে পড়েছে মাথার উপরে।

যাঁরা আমার এই স্বল্পমেয়াদি এন্টারটেইনমেন্ট কেরিয়ার অনুসরণ করেছেন, তাঁরা জানেন আমি বিখ্যাত মানুষদের মিমিক্রি করেছি। মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার রীতিমতো গবেষণার বিষয় ছিলেন বাপ্পিদা এবং এখনও থাকবেন। আমার মনে হয় না আমি কিছুই জানি লোকটার সম্পর্কে। পরবর্তীকালে কর্মসূত্রে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেছি। যেখানে তিনি গান গেয়েছেন। আদ্যপ্রান্ত ভালবাসার মতো মানুষ ছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গীতের গভীরতা মাপার মতো ক্ষমতা আমার নেই। আমি ওই প্রয়াসের মধ্যে আমি ঢুকছিও না। উনি লেজেন্ড ছিলেন, থাকবেন।

তাঁর গান শুনে, গানে নাচ করেই তো আমাদের বেড়ে ওঠা। পরবর্তীকালে নব্বই দশকের শেষের দিকে আমি তখন রেডিয়ো শুরু করেছি। তখন একটি অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করতে গিয়েছি। দেখেছি বাপ্পি লাহিড়িকে। সেই ফ্যান-বয় মুহূর্ত আমি ভাষায় প্রকাশ করে উঠতে পারব না। মিস্টার বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী এবং বাপ্পি লাহিড়ির ক্ষেত্রেই আমার এমনটা হয়েছে। এমন সদা হাস্যময়, দিল দরিয়া মানুষ খুব কম দেখেছি। তিনি জানেন তাঁকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে, ইয়ার্কি, ঠাট্টা করা হচ্ছে তিনি নিজ গুণে ক্ষমা করে দিতেন। কোনও দিন রাগতে দেখিনি। বিরূপ মন্তব্য করতে শুনিনি। কিছু মানুষ তাঁর কানে এমন কিছু কথা দিয়েও ছিলেন, কিন্তু কোনও দিন রিয়্যাক্ট করতে দেখিনি। মানুষ হিসেবে, সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে তিনি দশে দশ।

আর বাচ্চাদের মতো সোনার গয়না ভালবাসতেন। টেলিভিশনে যে কমেডি শো আমি করতাম, শটের আগে আমরা কী করি চুল ঠিক করি, মেক-আপ দেখে নিই। ক্যামেরা রোল হওয়ার আগে উনি মেক আপ আর্টিস্টকে ডেকে নিজের সোনার গয়না ঠিক করে নিতেন। ওঁর গলার চেইনটা ঠিক আছে কিনা, ‘বি’ লেখা তাঁর হারটা ঠিক দেখা যাচ্ছে কি না দেখে নিতেন। নিজের সোনার গয়নার ব্যাপারে এতটাই যত্নশীল ছিলেন তিনি। শিশুদের মতো ছিলেন বাপ্পিদা। সেটাই ‘লেজেন্ডারি স্টেটাস’ পেয়েছে। সোনার কথা মনে এলেই বাপ্পিদার ছবি মনে আসে। তাঁর কাছে সোনার গয়না কতটা আছে, সেই আলোচনা মিডিয়াতে প্রায়শই হত। কিন্তু তিনি যে ভারতীয় সঙ্গীতে গোল্ডেন জুবিলি হিট দিয়ে গিয়েছেন তা অমূল্য। তা কখনও মাপা যাবে না।

সামনা-সামনি যখন ওঁনাকে নকলও করেছি, তখন হয় তো মিটিমিটি হেসেছেন, দুষ্টু ছেলে বলেছেন। কিন্তু কখনও বিরূপ মন্তব্য করেননি। বাপ্পি লাহিড়িকে নিয়ে কেউ কিছু করতে বললে, ওটা আমার মনে হয় আমি ঘুমের মধ্যেও করতে পারব। রেডিয়োর জন্য আমি আলাদা একটি সেগমেন্ট তৈরি করেছিলাম। ‘বাপ্পিদা কা গান, বাপ্পিদা কা প্রাণ।’ আইনি কোনও জটিলতা যাতে না হয়, তাই বি ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে পি করে দিয়েছিলাম ‘পাপ্পি’। জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা যেদিন যা মুক্তি পেয়েছে, সেইগুলোতে আমি ইংরেজি শব্দ বসিয়ে দিতাম। প্যারোডি তৈরি করতাম। ইংরেজি শব্দ বসিয়ে বাপ্পিদার মতো করে গাইতাম। এমন কিছু গান রেডিয়ো স্টেশনের তরফ থেকে ওনাকে পাঠিয়েও ছিলাম। তিনি খুব মজা পেয়েছিলেন। মিমিক্রি অথবা কেরিক্যাচারকে তিনি আর্ট ফর্ম মনে করতেন। এক অন্য মানুষ ছিলেন বাপ্পিদা।

সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে লিখিত

আরও পড়ুন:Bappi Lahiri Death: মনে প্রাণে বাঙালি, মাছ প্রিয় ছিল বাপ্পিদার: স্মৃতিচারণায় জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়