Bhool Bhulaiyaa 2: ‘আসল’ মঞ্জুলিকা শোবানার কাছে বিদ্যা-কিয়ারা সত্যিই ফ্যাকাসে, কেন জানেন? ভুল ভুলাইয়া ২ দেখার আগে তাঁকে চিনে নিন

Shobana’s Nagavalli Character From Manichitrathazhu: আগামীকাল শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে কার্তিক আরিয়ান ও কিয়ারা আডবাণী অভিনীত ভুল ভুলাইয়া ২। ১৩ বছর পর ফিরছেন মঞ্জুলিকা। কিন্তু আসল মালয়ালম ছবির মঞ্জুলিকাকে চেনেন?

Bhool Bhulaiyaa 2: 'আসল' মঞ্জুলিকা শোবানার কাছে বিদ্যা-কিয়ারা সত্যিই ফ্যাকাসে, কেন জানেন? ভুল ভুলাইয়া ২ দেখার আগে তাঁকে চিনে নিন
কিয়ারা ও বিদ্যার মাঝে শোবানা।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 19, 2022 | 10:55 PM

তিনি ফিরছেন। ভোল বদলেই ফিরছেন। ঘুঙুরের সেই পরিচিত শব্দেই তিনি আবার বলতে আসছেন, “আমি যে তোমার…!” ২০০৭ সালে প্রিয়দর্শন পরিচালিত ভুল ভুলাইয়া ছবির মঞ্জুলিকা চরিত্রটি আসমুদ্র হিমাচলের মনের গহীন কোণে পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছিল। ১৩টা বছর পার করে মঞ্জুলিকা ফিরছেন। ফিরছেন সেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায়। ২০০৭ সালের সেই জনপ্রিয় ছবি ভুল ভুলাইয়া-র (Bhool Bhulaiyaa 2) সিক্যোয়েল রিলিজ় করতে চলেছে ২০ মে। সে বার মঞ্জুলিকা রূপে দেখা গিয়েছিল বিদ্যা বালনকে, আর এবার মঞ্জুলিকা কিয়ারা আডবাণী। কিন্তু ১৯৯৩ সালের আসল ছবিটা অর্থাৎ মালয়ালম যে মণিচিত্রাথাজু-র রিমেক ভু ভুলাইয়া, তার মঞ্জুলিকা চরিত্রটির মধ্যে যেন আলাদাই একটা ব্যাপার ছিল। গল্প কিন্তু এক, চরিত্রও ছিল এক। তবে তফাৎ ছিল সেই চরিত্রাভিনেতার তাকানোর ভঙ্গিমায়, আদপ-কায়দায়, ডায়লগ থ্রোয়িংয়ে। যদিও চরিত্রের নাম মঞ্জুলিকা ছিল না। কিন্তু নাগাভল্লী চরিত্রে বহু মানুষের মনে হিল্লোল জাগিয়েছিলেন অভিনেতা শোবানা (Shobana)। সে চরিত্র এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে মোহন লালের মতো সুপারস্টারেরদেরও ফ্যাকাসে লেগেছিল মণিচিত্রাথাজু (Manichitrathazhu) ছবিটিতে।

প্রায় ২৫ বছরেরও বেশি সময় আগের একটা ছবি। কিন্তু আজও যদি দেখতে বসা হয়, সেই সমান পরিমাণ ভয়ই ধরাবে। যা হিন্দি ছবির মঞ্জুলিকা চরিত্রটি হয়তো ততটাও দেখাতে পারবে না। তার থেকেও বড় কথা হল, এমনই একটা সময় সেই মণিচিত্রাথাজু ছবিটি নির্মিত হয়েছিল, তখন VFX, CGI বা স্পেশ্যাল এফেক্টস নামক শব্দগুলি ভারতীয় ফিল্মের ক্ষেত্রে একপ্রকার দিবাস্বপ্নের মতো। আর এখানেই দর্শকদের মহিমান্বিত করেছে নাগাভল্লী চরিত্রের অভিনেতা শোবানা। মণিচিত্রাথাজু ছবিটি কিন্তু কোনও দিক থেকে হরর সিনেমা ছিল না। কিন্তু সেই ডার্ক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের ইউএসপি-ই ছিল নাগাভল্লী রূপধারী শোবানা। তাঁর ছটায় ছবিতে রীতিমতো সাইডলাইনে চলে গিয়েছিলেন মোহনলাল ও সুরেশ গোপীর মতো নামজাদা তারকারা।

এক্সপ্রেশনের রানি ছিলেন তিনি। VFX এফেক্টস বা CGI – সব কিছুই যেন তাঁর কাছে ফেল। নার্ভাস গঙ্গা থেকে রক্তখেকো নাগাবল্লী – এক চরিত্র থেকে আর এক চরিত্রে শিফট করার শোবানার কায়দাটিই ছিল অবাক করার মতো। মনে হত, তিনি যেন সত্যিকারের নাগাবল্লী।

প্রথমে মণিচিত্রাথাজু ছবিটিকে পুরনো দিনের হরর ফিল্ম সেটে মধ্যেই আটকে আছে বলে যে কারও মনে হতে পারে। কেরালার একটি পুরনো বাড়িতে থাকতে এসেছেন এক নবদম্পতি, যা ভূতেদের জন্য আদর্শ পরিবেশ। স্থানীয়রা যথেষ্ট সতর্ক। কারণ, তাঁরা মনে করেন যে বাড়িটি সম্পর্কে এমনই রহস্যজনক কিছু রয়েছে। কিন্তু নকুলান এবং গঙ্গা তাঁদের যৌক্তিক এবং যুক্তিযুক্ত চিন্তাভাবনা দিয়ে স্থানীয়দের অস্বস্তি এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেন। তারপরই সবকিছু উথালপাতাল হতে শুরু হতে থাকে। ছবির মুখ্য দুই চরিত্র উন্নিথান এবং দাসপ্পনের সঙ্গে একজন মহিলাকে ঘরের মধ্যে হেঁটেও যেতে দেখা যায়, যাঁকে লম্বা চুলের এলোকেশী লুকে যথেষ্টই সন্দেহজনক বলে মনে হয়। ভয়ের সেই শুরু। পরের দিন জানা যায়, ওই মহিলা আসে গঙ্গা।

আর তারপরই আমরা গঙ্গার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আর একটি বিশ্বাসঘাতকতা এবং হৃদয়বিদারক গল্প দেখতে পাই – নাগাবল্লীর গল্প। এমনই এক নারী, যাঁকে তাঁর প্রেমিক রামানাথনের সঙ্গে থাকতে দেওয়া হয়নি। গঙ্গার মধ্যেই আমরা নাগাবল্লীর আত্মা উপস্থিতি টের পাই, বিশ্বাসও করতে শুরু করি। কিন্তু ছবির পরিচালক ফাজিলের সেই কৌশলে পা দিয়ে আমরা বেমালুম বোকা বনে যাই। অন্য ফাঁদে পড়ে বিনয় প্রসাদের শ্রীদেবীকে সন্দেহ করতে শুরু করি আমরা। ভাবতে শুরু করি, সে কি গঙ্গাকে আক্রমণ করবে? কারণ, তাঁর জীবনেও যে প্রেমিককে না পাওয়ার দুঃখটা রয়ে গিয়েছে। আর সেই প্রেমিক যে খোদ নকুলানই।

নকুলানের মতোই আমাদেরও দিকভ্রান্ত হয়ে যাই মাঝপথে। কী বিশ্বাস করব আর কী করব না – এই দ্বন্দ্বই কাজ করতে থাকে। এর মধ্যেই আবার জানা যায়, ডিসোসিয়েটিভ আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন গঙ্গা। নাগাভল্লীর গল্পের সঙ্গে নিজের জীবনের মিল খুঁজে পেতে থাকেন তিনি। কারণ, দুজনেই জীবনের একটা পর্যায়ে চরম নির্যাতিত হয়েছিলেন। ছবির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মোড় তখনই নিতে শুরু করে, যখন গঙ্গা অতিমানবীয় শক্তি প্রদর্শন করেন এবং নকুলানও তাঁকে উত্তেজিত করতে একপ্রকার বাধ্যই হন। পরক্ষণেই আবার তিনি নিজের জগতে ফিরে আসেন। তাঁকে আরও ভীত দেখায়, দেখায় বিভ্রান্তও।

চাপা টেনশনটা যেন এর পরেই বাড়তে থাকে। দ্বিগুণ হয়ে যায়, যখন ছবির অন্যতম ভৌতিক গানটি দেখানো হয় – ওরুমুরাই ভান্ধু পার্থায়া। এই গাননি মালয়ালম সিনেমার দুনিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় গান। শোভানাকেও দেখা যায় দুটি চরিত্র দুর্দান্ত ভাবে স্যুইচ করতে – অনবদ্য এক পারফর্মার এবং তাঁর শীতল ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ণ ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে গিয়ে দানবীয় উন্মত্ততায় বিভোর থাকতে। উভয় পরিস্থিতিতেই তিনি একই মনোমুগ্ধকর তাগিদ দিয়ে নাচছেন। তবে তাঁর বন্য, বিরক্তিকর অভিব্যক্তি এবং চোখের মণি যেন শ্রোতাদের হৃদয়হরণ করে নিয়েছে। সেই দৃশ্য যে শুধুই শোভানার অভিনয় দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে এমনটা নয়, তাঁর নৃত্য দক্ষতার প্রমাণও হাতেনাতে দিয়েছে।

ছবিটির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন মালয়ালম অভিনেতা শোবানা। কিন্তু এই একই ছবির হিন্দি রিমেকের জন্য বিদ্যা বালন জাতীয় পুরস্কার পাননি। যা নিয়ে সে সময় তীব্র বিতর্ক দানা বাঁধে। বিদ্যা নিজেও তাঁর অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। যদিও দক্ষিণী ছবির ভক্তরা দাবি করেছিলেন, শোবানা যা অভিনয় করেছিলেন, বিদ্যা তার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেনি। আর সেই কারণেই মোহনলাল, সুরেশ গোপীর মতো প্রথিতয়শা দক্ষিণী অভিনেতারাও এই ছবিতে একপ্রকার সাইড কর্নার্ড হয়ে গিয়েছিলেন। সেই কারণেই ভুল ভুলাইয়া যতই হোক, যতই তার রিমেক হোক, আর যতই তার সিক্যোয়েল হোক না কেন – মঞ্জুলিকা এবং নাগাবল্লীর তুলনা চলতেই থাকবে। আর যেই মঞ্জুলিকা অভিনয় করবেন, তাঁর থেকে দর্শক কয়েক ভাগ এগিয়ে রাখবেন শোবানাকে।