EXCLUSIVE Bharat Kaul: হিন্দু-মুসলমান, সকলে হাত ধরাধরি করে… দল বেঁধে সিনেমা দেখতাম: ভরত কল

Bharat Kaul and His Kashmir Files: যে অন্ধকারে ‘হর সপ্না মুমকিন সা নজ়র আতা হ্যায়’, সেই অন্ধকারই আজ ভীষণ টানছে—আরও স্পষ্ট করে বললে—নস্ট্যালজিক করে তুলছে কলকাতার বিনোদন জগতের একমাত্র কাশ্মীরি পণ্ডিত ভরত কলকে। কেন?

EXCLUSIVE Bharat Kaul: হিন্দু-মুসলমান, সকলে হাত ধরাধরি করে... দল বেঁধে সিনেমা দেখতাম: ভরত কল
ভরত কলের 'কাশ্মীর ফাইলস'...
Follow Us:
| Updated on: Sep 21, 2022 | 12:30 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

“ইয়ে অন্ধেরা মুঝে পসন্দ হ্যায়/ইয়ে ওয়ালা অন্ধেরা থোড়া অলগ হ্যায়/ইস মেঁ রহসয়্য হ্যায়, উম্মীদ হ্যায়, রাহত হ্যায়/দোস্তি হ্যায় ইসসে মেরি/ইসে ম্যাঁয় অউর মুঝে ইয়ে পসন্দ হ্যায়/ইস অন্ধেরে সে মিলনে ম্যাঁয় খুদ চলা আতা হুঁ/অক্সর অকেলে, কভি কিসি অউর কো ভি সাথ লে আতা হুঁ/ইস অন্ধেরে মেঁ হর সপ্না মুমকিন সা নজ়র আতা হ্যায়…”—পিভিআর সিনেমার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি আমির ‘লাল সিং চড্ডা’ খানের মুখ দিয়ে-বলা এই প্রোমোশনাল ভিডিয়ো তথা ইউটিউব-কবিতা এতদিনে ‘অন্ধেরা’প্রিয়, থুড়ি, সিনেমাহলের অন্ধকারপ্রিয় অনেকেই কার্যত মুখস্ত করে ফেলেছেন। সত্য়িই… সিনেমাহলের অন্ধকার ‘থোড়া অলগ হ্যায়’। যে অন্ধকারে ‘হর সপ্না মুমকিন সা নজ়র আতা হ্যায়’, সেই অন্ধকারই আজ ভীষণ টানছে—আরও স্পষ্ট করে বললে—নস্ট্যালজিক করে তুলছে কলকাতার বিনোদন জগতের একমাত্র কাশ্মীরি পণ্ডিত ভরত কলকে। কেন?

৩২টা বছর ‘ভূস্বর্গ’-এর সিনেপ্রেমী দর্শক তথা সাধারণ মানুষ হলে ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে ১৮.০৯.২০২২, রবিবার। ১৯৮০ সালের পর ভূস্বর্গের প্রতিটি সিনেমা হলে তালা পড়ে যায়। কিছু সন্ত্রাস গোষ্ঠীর হুমকির কারণে হলে তালা ঝোলাতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছিলেন মালিকরা—অভিযোগ এমনটাই। সেই তালাই ভাঙা হয়েছে ১৮ সেপ্টেম্বর। সে দিন জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা দক্ষিণ কাশ্মীরে দু’টি মাল্টিপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। একটি মাল্টিপ্লেক্স পুলওয়ামায় অবস্থিত এবং অন্যটি শোপিয়ান জেলায়। একটি সরকারি প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ডোডা, রাজৌরি, পুঞ্চ, কিশতওয়ার এবং রিয়াসির সিনেমা হলগুলিও উদ্বোধন করা হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে দারুণ খুশি কাশ্মীরি পণ্ডিত ভরত কল। TV9 বাংলার মাধ্যমে তিনি ফিরে গেলেন ছোটবেলায়। যে ছোটবেলায় কাশ্মীরের সিনেমাহলে সিনেমা দেখেছেন অভিনেতা। হইহই করেছেন প্রিয়জনদের সঙ্গে—ঠিক যেন ‘অক্সর অকেলে, কভি কিসি অউর কো ভি সাথ লে আতা হুঁ’। পপকর্ন হাতে ভরত ঢুকে যেতেন প্রেক্ষাগৃহে প্রিয় তারকাদের অভিনয় দেখবেন বলে। ‘জিয়া নস্ট্যাল’ সেই স্মৃতি ভাগ করতে-করতে ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেলেন ভরত।

কাশ্মীরের সিনেমা হলে ধর্মেন্দ্রর ছবি আর কিশোর কুমারের গান

ভরত: “আমার বয়স তখন ৯ বছর। গরমের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলাম। প্রতিবারই যাওয়া হত গ্রীষ্মে। সেটাই আমাদের পরিবারের বাচ্চাদের আনন্দ ছিল সেই সময়। গরমে স্কুল ছুটি মানেই ছিল ‘কাশ্মীর চলো’। ফলে সে বছরও যাওয়া হয়েছিল। আমার আজও স্পষ্ট মনে আছে… একদিন ঠিক হল সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যাওয়া হবে। ধর্মেন্দ্রর নতুন সিনেমা রিলিজ় করেছিল। সিনেমার নাম ‘শালিমার’। ছবিটি রিলিজ় করেছিল ১৯৭৮ সালে। সেই ছবিতেই ছিল কিশোর কুমারের গাওয়া সেই বিখ্যাত গান ‘হম বেওয়াফা হরগিজ় না থে, পর হম ওয়ফা কর না সকে’… কে ভুলতে পারে সেই গান, কে ভুলতে পারে? ভূস্বর্গের এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে বয়ে গিয়েছিল সেই সুরেলা কথাগুলো। আহা… আমি কিছুই ভুলিনি। কতদিন আগের কথা…”

কাশ্মীর ও লন্ডনের সিনেমা হলে কোনও ফারাক ছিল না

ভরত: “তা ঠিক হল সিনেমা দেখতে যাওয়া হবে। বাড়ির ছোটরাও যাবে সঙ্গে। হইহই করে টিকিট কাটা হল ‘রিগ্যাল’ (সিঙ্গল স্ক্রিন)-এ। যে ‘রিগ্যাল’-এর বাইরে সন্ত্রাসবাদীরা পরবর্তীকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। সিনেমা হলটা ছিল লাল চক-এ। আমরা ছোটরা পপকর্ন-চিপসের প্যাকেট নিয়ে হলের মধ্যে গিয়ে বসলাম বড়দের পাহারায়। ছবিতে শুধু ধর্মেন্দ্র ছিলেন না। ছিলেন জ়িনত আমান, শাম্মি কাপুরও। আমরা তো হাঁ করে ছবিটা গিলছিলাম। সেই সময় কাশ্মীরে সকলেই এরকম দল বেঁধে সিনেমা দেখতেন। হিন্দু-মুসলমান, সকলে হাত ধরাধরি করে। কোথাও কোনও সমস্যা হত না। পরবর্তীকালে আমি যখন লন্ডনে গিয়েছিলাম, সেখানকার সিনেমা হল দেখে মনে হয়েছিল, এ তো আমার কাশ্মীর… একই রকম সুন্দর দু’টো জায়গার সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা। কেবল মানুষের চেহারাগুলো আলাদা।”

১৯৮০-র পর পাল্টে গেল সবটা, বোম পড়ল হলের বাইরে

ভরত: “কিন্তু পরবর্তীকালে সব কেমন পাল্টে গেল। কাশ্মীরে সিনেমা দেখা হয়ে গেল অতীত। ১৯৮০ সালের পর বলা হল সিনেমা দেখাটা কাফেরদের কাজ। আর যদি দেখতেই হয়, ইসলাম বিষয়ক জিনিস দেখতে হবে। লাল চকের ‘রিগ্যাল’-এর বাইরে বোম পড়ল। ভয়ানক ব্যাপার। আমার চেনা ভূস্বর্গ পাল্টে যাচ্ছিল ক্রমশ… লোকে ভয়ে কাশ্মীরে সিনেমা হলে যাওয়াই বন্ধ করে দিল। বড়-বড় তালা ঝুলতে শুরু করল হলের বাইরে।”

কাশ্মীরের সিনেমাপ্রেমীদের বিকল্প উপায় 

ভরত: “আসলে ভয়ে কেউ কিছু বলত না কাশ্মীরে। কিন্তু আমরা জানি হাজার একটা উপায় ছিল সিনেমা দেখার। পাইরেটেড সাইটগুলো ছিল। সেই সাইটে নিশ্চুপে সিনেমা দেখতেন এবং দেখেন কাশ্মীরিরা। সিনেমা দেখেছেন পঞ্জাবের সিনেমা হলে গিয়ে। অনেকে আবার দিল্লির সিনেমা হলে গিয়েও সিনেমা দেখেছেন। এভাবেই মনোরঞ্জনের কাজ করেছেন কাশ্মীরিরা। কিন্তু সবটাই লুকিয়ে।”

চাই নিরাপত্তা

ভরত: “৩০ বছর পর আবার সিনেমা হল ফিরে পেয়েছে কাশ্মীর। এটা খুবই আনন্দের সংবাদ। খুব ভাল খবর। কিন্তু আমার একটা আর্জি আছে সরকারের কাছে: হলের বাইরে যেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় কাশ্মীরে। এটা কিন্তু খুবই প্রয়োজন।”

প্রতিবেদনটি শুরু হয়েছিল পিভিআর সিনেমার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি আমির ‘লাল সিং চড্ডা’ খানের মুখ দিয়ে-বলা এক প্রোমোশনাল ভিডিয়োর কবিতা দিয়ে। কবিতাটি লিখেছেন ভিনীত পঞ্ছি। ভরত কল-এর কাশ্মীর-সিনেস্মৃতি পড়তে-পড়তে কি আপনার আরও একবার মনে পড়ে যাচ্ছে কি ওই কবিতার শেষের লাইনগুলো: “কুছ অলগ সা অন্ধেরা হ্যায় ইয়ে/ইস অন্ধেরে মেঁ খুশি হ্যায়, জশন হ্যায়, জ়িন্দেগি হ্যায়/ইস অন্ধেরে মে বহুত রোশনি হ্যায়”? ঘটনাচক্রে যে আইনক্স-এর তরফে স্ক্রিন উপহার পেল ভূস্বর্গ, তাতে—আপাতত যা খবর—প্রথম যে ছবি দেখানোর কথা, তার নাম ‘লাল সিং চড্ডা’। সত্য়িই… ‘ইয়ে ওয়ালা অন্ধেরা থোড়া অলগ হ্যায়’…