Singer KK Death: ‘আমরা আমাদের সেরাটা করেছি’, কেকে-র মৃত্যুতে শেষমেশ সাফাই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার
Singer KK Death: কেকের মৃত্যুর চার দিনের মাথায়, শুক্রবার ফেসবুকে একটি বিবৃতি দিয়েছে 'ব্ল্যাকআইড ইভেন্ট হাউজ়'। ধেয়ে আসা কিছু প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিয়েছে তারা।
কলকাতায় লাইভ পারফর্ম করতে এসে আকস্মিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে। ৩১ মে (গত মঙ্গলবার) নজরুল মঞ্চে গুরুদাস কলেজের সেই শোয়ে মাত্রাতিরিক্ত দর্শকের ভিড় হয়েছিল। হলের এসি ঠিক মতো কাজ করাও নাকি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে ‘ব্ল্যাকআইড ইভেন্ট হাউজ়’-এর ভূমিকা নিয়েও, যে সংস্থা সেদিন আর্টিস্ট কোঅর্ডিনেশন-এর দায়িত্বে ছিল। কেকের মৃত্যুর চার দিনের মাথায়, শুক্রবার ফেসবুকে একটি বিবৃতি দিয়েছে ‘ব্ল্যাকআইড ইভেন্ট হাউজ়’। ধেয়ে আসা কিছু প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিয়েছে তারা।
‘ব্ল্যাকআইড ইভেন্ট হাউজ়’র জবাবদিহি:
আমাদের আয়োজিত শোয়ের শেষে কেকে স্যরের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুকে ঘিরে এত দেরিতে পোস্ট করার জন্য আপনাদের কাছে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিছু নিয়মমাফিক পদ্ধতি চলছিল আমাদের। যে কোনও শোয়ে আমাদের কাজ ‘আর্টিস্ট কো-অর্ডিনেট’ করা। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে কেকে স্যরের সঙ্গে আমাদের খুবই মধুর সম্পর্ক ছিল। তাঁর আকস্মিক প্রয়াণে আমরা ‘শকড’ হয়েছি। কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে আমাদের। সেই প্রশ্নের উত্তর আমরা দিলাম:
এসি কি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল?
না, এসি বন্ধ করা হয়নি। পুরোদমে এসি চলছিল। নজরুল মঞ্চে দর্শকের বসার জন্য নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। কিন্তু অডিটোরিয়ামে জোর করে দর্শক ঢুকে পড়েছিল। ফলে একটা সময় পর অডিটোরিয়ামের এসি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। জায়গাটির নির্বাচন করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে আমাদের কিচ্ছু করার ছিল না।
কেউ কি জোর করে ঢোকার চেষ্টা করেছিল? কেন সেই ভিড় সামলানো গেল না?
হ্যাঁ, দর্শক জোর করেই অডিটোরিয়ামের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। বাইরের গেট থেকে শুরু করে অডিটোরিয়ামের গেট পর্যন্ত পুলিশ ও বাউন্সার ছিল। কলেজের স্টুডেন্ট ইউনিয়নও ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু মাত্রতিরিক্ত ভিড় হয়েছিল সেদিন। অডিটোরিয়ামের মধ্যে ঢোকার জন্য দর্শক ঢিল ছুড়েছিল ভলেন্টিয়ারদের দিকে। ভদ্রভাবে পুলিশও সেই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিল।
কেকে-কে কি পারফর্ম করতে বাধ্য করা হয়েছিলেন?
না, ওঁকে কেউ বাধ্য করেনি। কেকে স্যরের কিংবা তাঁর ব্যান্ড পারফর্মাদের পক্ষ থেকেও কেউ পারফরম্যান্স বন্ধ করার আবেদন জানাননি। অনুষ্ঠানের শেষলগ্ন পর্যন্ত কেকে স্যর নিজের সেরাটা উজাড় করে পারফর্ম করেছিলেন। তাঁর ম্যানেজার ও অন্যান্যরা তাঁকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেছিলেন।
নজরুল মঞ্চ থেকে কেন কেকে স্যরকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না?
অসুস্থতার কোনও লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়নি কেকে স্যরের মধ্যে। তিনি শেষ পর্যন্ত নিজের সেরা দিয়ে পারফর্ম করেছিলেন। এর আগেও আমরা বড়-বড় শিল্পীদের তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে পারফর্ম করতে দেখেছি। এতে বোঝা যায় না কোনও শিল্পী মঞ্চেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কি না। এটাকে অসুস্থতার উপসর্গ হিসেবে গ্রাহ্য করা হয় না। প্রত্যেক শোয়ের পরই শিল্পীরা ক্লান্তি অনুভব করেন এবং তাঁদের তাড়াতাড়ি সেই জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যে ভিডিয়ো মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, তা দেখে অনেকের মনে হয়েছে, কেকে স্যরের বুকে ব্যথা শুরু হয় বলে তাঁকে তড়িঘড়ি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এটা কিন্তু এক্কেবারে মিথ্যা। ভিডিয়োটি ৩১ তারিখের শোয়ের কোনও মতেই নয়।
কেকে স্যর হোটেলে ফিরে গিয়েছিলেন। অসুস্থ হওয়ার আগে তিনি সেখানে গিয়ে সেলফিও তুলেছেন অনুরাগীদের সঙ্গে। ওঁর ম্যানেজারও একই কথা বলেছেন। কেকে স্যরের চলে যাওয়া আমাদের সকলের কাছেই অপূরণীয় ক্ষতি। বিশেষ করে আমাদের কাছে আরও বড় ক্ষতি। এর কারণ, অনেক বছর ধরে আমরা তাঁর সঙ্গে কাজ করছি। আমাদের সঙ্গে কেকে স্যরের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। ফলে একজন কাছের মানুষ চলে যাওয়ায় খুবই শোকাহত আমরাও। তাই আপনারা দয়া করে আমাদের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করুন। আমাদের নিয়ে ‘হেট ক্যাম্পেন’ করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এটা করে যদি আপনারা শান্তি পান, আমরা সেই ঘৃণায় পুড়ে যেতে খুশি।
‘আর্টিস্ট কোঅর্ডিনেশন’ আমাদের দায়িত্ব। আমরা আমাদের সেরাটা করেছি।” এই পোস্টের পর বহু নেটিজ়েন কমেন্ট করেছেন। নজর কড়েছেন গায়িকা লোপামুদ্রা মিত্রও। তিনি লিখেছেন, “একজন শিল্পী হয়ে বুঝতে পারছি বিষয়টা।”
কিন্তু অধিকাংশ মানুষই পাল্টা বিতর্ক ছুড়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পড়ে একজন লিখেছেন, “ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁরা যথেষ্ট পদক্ষেপ নেননি। হেব্বি মজার পোস্ট। মাধ্যমিকের ফল এল… প্রশ্ন-উত্তর বিচিত্রা…”
এর উত্তরে ‘ব্ল্যাকআইড ইভেন্ট হাউজ়’ লিখেছে, “কলেজ স্টুডেন্ট বাদেও অন্য লোক এর-ওর হাত ধরে বা অন্য কোনও উপায়ে ঢুকেছিল। তাদের জন্যই ভিড় বেশি হয়েছিল। সেই জন্যই সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কলেজ শোটা কলেজের স্টুডেন্টদেরই দেখতে দেওয়া উচিত। ফ্রি-তে ঢুকে কলেজ স্টুডেন্টদের অধিকার নষ্ট করে বহিরাগতরাই বেশি সমস্যা তৈরি করেছিল।”
এরপর সেই ব্যক্তির মন্তব্যের সমর্থনেই পরপর কমেন্ট আসতে থাকে। বিরূপ মন্তব্য করেন আরও অনেকেই।