Arpita Mukherjee: নামের বানানে বাড়তি একটা ‘R’-ই কাল ডেকে আনল মন্ত্রী-‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার জীবনে, দাবি নিউমেরোলজিস্টের

Partha Chatterjee: যে যশ, খ্যাতি ও অর্থ পাওয়ার জন্য বাবা-মায়ের দেওয়া নামের বানানটা পর্যন্ত বদলে ফেলেছিলেন অর্পিতা, সেই বানান-বদলই কি শেষমেশ তাকে অভিজাত জীবন থেকে এক টানে হিঁচড়ে নিয়ে গেল শ্রীঘরে?

Arpita Mukherjee: নামের বানানে বাড়তি একটা ‘R’-ই কাল ডেকে আনল মন্ত্রী-‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার জীবনে, দাবি নিউমেরোলজিস্টের
কী গোলমাল হল নামের বানানে?
Follow Us:
| Updated on: Jul 25, 2022 | 8:55 PM

স্নেহা সেনগুপ্ত

তিনি নির্দোষ, তিনি বিজেপির চক্রান্তের শিকার, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন—এসএসসি নিয়োগ-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ ধৃত অর্পিতা মুখোপাধ্যায় এই কথাগুলিই দাবি করেছেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। লাল টি-শার্ট, সাদা-কালো জ্যাকেট, চুলে বেগুনি ক্লাচার, নেইল এক্সটেনশন-করা তরুণীকে এভাবেই প্রথমবার দেখা যায় জনসমক্ষে—সৌজন্যে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার লেন্স। যে মডেল-অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে ২১ কোটির বেশি টাকা, ২০টি মোবাইল ফোন ও সোনার গয়না উদ্ধার হয়েছে, সেই অর্পিতা নিজের নামের বানান বদলে ফেলেছিলেন বলে শোনা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। ‘ARPITA’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে তিনি হয়েছিলেন ‘ARRPIETA’। দক্ষিণ কলকাতায় তাঁর বিলাসবহুল আবাসন থেকে দু’দফায় ৪০টি ট্রাঙ্কে ‘কুবেরের ধন’ উদ্ধার হওয়ার ঘটনার পর জ্যোতিষীদের একাংশের প্রশ্ন: নামের বানান পরিবর্তনের জেরেই কি অর্পিতার এহেন ভাগ্য বিপর্যয়? যে যশ, খ্যাতি ও অর্থ পাওয়ার জন্য বাবা-মায়ের দেওয়া নামের বানানটা পর্যন্ত বদলে ফেলেছিলেন অর্পিতা, সেই বানান-বদলই কি শেষমেশ তাকে অভিজাত জীবন থেকে এক টানে হিঁচড়ে নিয়ে গেল শ্রীঘরে?

এ প্রসঙ্গে TV9 বাংলা যোগাযোগ করেছিল নিউমেরোলজিস্ট অরিজিৎ শীলের সঙ্গে। তাঁর দাবি, বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অর্পিতা মুখোপাধ্যায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকুজিকুষ্ঠি নাড়াঘাঁটা করেছেন তিনি। ঠিকুজির কোনও গ্যাঁড়াকলে ফেসেছেন দু’জনেই, দাবি অরিজিতের। নিউমেরোলজিস্টের দাবি, ‘‘অর্পিতার নামে বাড়তি ‘R’ আমদানি (‘ARPITA’)-ই তাঁর জীবনে এই দুর্দিন ডেকে এনেছে।’’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভাগ্য ফেরাতে নামের বানান পাল্টানো নতুন কিছু নয়। বিশেষত বলিউড-শিল্পীদের ক্ষেত্রে এই ‘ট্রেন্ড’ খুবই পরিচিত। সেই জন্যই হয়তো অমিতাভ বচ্চনের হাতে জ্বলজ্বল করে নীলা (পাথর)। মিঠুন চক্রবর্তী ‘নসিব’-এর দোহাই দেন। নিউমেরোলজি মেনে রানি মুখোপাধ্যায় পদবি থেকে ‘H’ বাদ দেন। বিবেক ওবেরয় নামের বানান লেখেন ‘VIVEIK’। আয়ুষ্মান খুরানার নামে যুক্ত হয় বাড়তি ‘N’ও বাড়তি ‘R’। ঠিক অনেকটা আয়ুষ্মানের মতোই যেন অর্পিতার ভাগ্য-বদলের ঈপ্সা—‘ARPITA’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে তিনি হন ‘ARRPIETA’। নিউমেরোলজির মতে, এখানেই ঘটে গিয়েছে বিপদ। অরিজিৎ বলেছেন, ‘‘অর্পিতা তুলা রাশির মেয়ে। তিনি শুক্রের জাতিকা।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘শুক্রের জাতিকাদের নামে যদি বাড়তি ‘A’ ব্যবহার করা হয়, তা হলে আরও ভাল হয়। কিন্তু তিনি ব্যবহার করেছেন বাড়তি ‘R’, যেটা অর্পিতার ক্ষেত্রে ভুল হয়ে গিয়েছে। ‘R’-এর জায়গায় ‘A’ ব্যবহার করলে ফাঁসতেন না।’’

একসময় ট্যাক্সি-অটোয় চেপে বেলঘরিয়া থেকে টলিপাড়ায় অভিনয় করতে যাওয়া অর্পিতা নিমেরোলজির আশ্রয় নিয়েছিলেন। নামের বানান পাল্টে ফেলেছিলেন। তাহলে বাড়তি ‘E’ নয়, বাড়তি একটা ‘R’-ই মন্ত্রী ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার জীবনে—যিনি একসময় বাংলা, দক্ষিণী ও ওড়িয়া ছবিতে অভিনয় করেছিলেন—কাল ডেকে আনল? অর্পিতার ঠিকুজি ঘেঁটে সেই কারণও ব্যাখ্যা করেছেন অরিজিৎ। তাঁর দাবি, ‘‘বাড়তি ‘R’ থাকার ফলে রাহুর কুপ্রভাব পড়েছে বেশি। নিউমেরোলজির নিয়ম অনুযায়ী, নামে বাড়তি ‘R’ যুক্ত হলে প্রচুর অর্থ আসে হাতে। মানুষ কল্পনাও করতে পারে না, এরকম পয়সা আসে। সেটা অর্পিতাও পেয়েছিলেন। কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি ওই বাড়তি ‘R’-এর কারণেই। মান-সম্মান মাটিতে মিশে গিয়েছে সেই কারণেই।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘অর্পিতার জীবনে শুক্র গ্রহের বিরাট প্রভাব রয়েছে। যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি নাচানাচি করতেন, সেটা দেখে আমার বারবার তাই-ই মনে হয়েছে। আমার মনে হয় অর্পিতা কোনও অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর পরামর্শ নেননি। যিনিই ওকে ওই বাড়তি ‘R’ যোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন, তিনি এক্কেবারে ভুল করেছেন।’’ জ্যোতিষীর সাফ কথা, ‘‘পয়সা, আরও পয়সা এবং অনেক-অনেক পয়সা চেয়েছিলেন অর্পিতা। কিন্তু ওই বাড়তি ‘R’-ই তাঁকে ডুবিয়ে দিল। ইডি, হেফাজত… এসবই ওই ‘R’-এর কারণে হচ্ছে। মাটিতে এক্কেবারে মিশিয়ে দিয়েছে অর্পিতাকে।’’

কেবল অর্পিতা নন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঠিকুজিও খুঁটিয়ে দেখেছেন নিউমেরোলজিস্ট—দাবি অরিজিতের। পার্থ নিজের ইংরেজি নামের বানান লেখেন ‘PARTHA’। অরিজিতের দাবি: সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী, তাঁর ব্যবহার করা উচিত ‘PARTHO’। অর্থাৎ ‘T’ আর ‘H’ এর পর ‘A’-এর জায়গায় ‘O’। নিউমেরোলজিস্টের দাবি, ‘‘তাই-ই যদি তিনি ব্যবহার করতেন, তাহলে এই বিপদ থেকে অনেকটাই নিস্তার পেতেন। তিনি এসএসসি দুর্নীতিতে ফাঁসতেন না, ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে ২১ কোটি ২২ লাখও উদ্ধার হত না এবং জেলও হত না।’’

জ্যোতিষীর হিসেব অনুযায়ী, মন্ত্রী বৃশ্চিক লগ্ন, ধনু রাশি ও রাক্ষস গণ। অরিজিতের সংযোজন, ‘‘রবি খুবই শক্তিশালী। একাদশ ঘরেই রবি বসে আছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ছকে। তৃতীয় ঘরে জেল হেফাজত যোগ রয়েছে তাঁর।’’ আর? অরিজিতের দাবি, ‘‘এই মুহূর্তে রাহু-মঙ্গল যোগ চলছে পার্থবাবুর। খুব খারাপ একটা যোগ চলছে। ওর দুর্ঘটনার যোগ চলছে। প্রাণে মারার চেষ্টাও হতে পারে। ছক দেখে যা বুঝছি, ৩ অগস্ট থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত খুব, খু-উ-উ-উ-ব খারাপ সময় চলবে পার্থবাবুর। গ্রেফতার হওয়া, ফেঁসে যাওয়া এসব রাহু-মঙ্গল যোগের কারণেই হচ্ছে।’’

অর্থাৎ অরিজিতবাবুর হিসেব অনুযায়ী: অর্পিতা এবং পার্থ—দু’জনেরই ভাগ্যে কুনজর দিয়ে বসে আসে রাহু। গত বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকে পার্থ-অর্পিতাকে নিয়ে সিনেমার চেয়েও টানটান যে বাস্তব-চিত্রনাট্যে বুঁদ সবাই, তাঁদের একাংশের মনে এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে: ভাগ্য ফেরাতে ‘অক্ষরজ্ঞান’ থাকাটা কতটা জরুরি?