‘এই দাদাভাই ওঠ না’, চোখের সামনে দাদার মৃত্যু! ঈশ্বরে বিশ্বাস টলে সায়নীর

Saayoni Ghosh: সায়নীর দাদা জন্ম থেকেই কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত ছিলেন। ভীষণ ক্রিটিকাল দ্বিতীয় হার্ট সার্জারির পর ৯ দিন ধরে বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতালে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সায়নীর কথায়, "ডাক্তার রা সব চেষ্টা করে হাত তুলে দিয়েছেন। সকালে ফোন, তাড়াতাড়ি আসুন, সুমনের BP ৬০/৩০, হার্টবিট বন্ধের পথে। শক দিয়ে রিট্রাইভ করার চেষ্টা চলছে।

'এই দাদাভাই ওঠ না', চোখের সামনে দাদার মৃত্যু! ঈশ্বরে বিশ্বাস টলে সায়নীর
কী হয়েছিল সুমনের?
Follow Us:
| Updated on: Apr 09, 2024 | 6:49 PM

কথায় বলে, ‘সময় চলিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়’। প্রবাদ এও বলে, সময় নাকি সব কিছু ঠিক করে দেয়। সত্যিই কি তাই? একসঙ্গে কাটানো সময়, খুনসুটি, জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার প্রস্তাব, ৮ জিবি মেমরি কার্ডের দাবি– এ সবই কি আজ শুধুই স্মৃতি? সায়নী ঘোষ, আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী। বরাবরই ডাকাবুকো, খোলা ময়দানে তাঁর বক্তব্য শুনতে ভিড় হয় হাজার হাজার। তাঁর ‘ডেয়ার ডেভিল’ আচরণে মুগ্ধ খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। এ হেন সায়নীর জীবনেও যে উঠেছিল ঝড়, সে হিসেব হয়তো রাখেননি কেউই। এমনিতে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুব একটা মুখ খুলতে দেখা যায় না তাঁকে। তবে অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার মৃত্যুর সময় দাদা সুমন ঘোষকে নিয়ে এমন এক খোলা চিঠি লিখেছিলেন, যা ভিজিয়ে দেবে আপনার চোখ। কী হয়েছিল সুমনের? কীভাবে চোখের সামনে দাদাকে শেষ হতে দেখেছিলেন তিনি?

সায়নীর দাদা জন্ম থেকেই কনজেনিটাল হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত ছিলেন। ভীষণ ক্রিটিকাল দ্বিতীয় হার্ট সার্জারির পর ৯ দিন ধরে বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতালে রাখা হয়েছিল তাঁকে। সায়নীর কথায়, “ডাক্তার রা সব চেষ্টা করে হাত তুলে দিয়েছেন। সকালে ফোন, তাড়াতাড়ি আসুন, সুমনের BP ৬০/৩০, হার্টবিট বন্ধের পথে। শক দিয়ে রিট্রাইভ করার চেষ্টা চলছে। একা একটা অটো নিয়ে ছুটলাম। বয়স ২২। চিকিৎসার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না, শুধু আমার দাদা বুঝি। বুঝি, মায়ের রোজ রাতে উঠে ডুকরে ডুকরে কান্না, ঠাকুর আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দাও। বুঝি বাবার সর্বস্ব টুকু বিলিয়ে দিয়ে, ছেলেকে বেস্ট ট্রিটমেন্ট দিয়ে ফিরিয়ে আনার লড়াই। Ccu – এর বাইরে দাঁড়াই। গিয়ে দেখি শক দিচ্ছে। দাদাভাই এর শরীর টা বেড থেকে ১০ ইঞ্চি উঠে যাচ্ছে এক ঝটকায়, আবার পড়ে যাচ্ছে। কোনো মতে হার্টবিট ফেরানো গেল।” তবে এখানেই শেষ নয়, বিপদ তখনও কাটেনি। সায়নী যোগ করেন, “ডাক্তাররা জানিয়ে দেন ও আর রেসপন্স করছে না। আমায় ডেকে বলে, ‘ও বাঁচবে না। যদি বাঁচেও সারাজীবন সবজির মতো হয়ে থাকবে।” সায়নীর অসহায় বাবা বুঝতে পারেননি সবজি অর্থাৎ ভেজিটেবল বলতে ঠিক কী বোঝাতে চাইছেন চিকিৎসক। বলেছিলেন, “কোথায় যেতে হবে রে? ভেজিটেবল স্টু খাওয়াতে বলেছে? আমি খাওয়াবো। আর একটু চিকেন ও দিয়ে দেব।”

তবে মিরাকল ঘটে। ভেন্টিলেটল হাজার নল, যন্ত্রপাতি, মাঝখানে রোগা, দুর্বল দাদা তখনও লড়াই করে যাচ্ছেন। সায়নীর কথায়, “ডাকলাম, দাদাভাই, এই দাদাভাই উঠে পর, কিরে মাম বলছি, বাড়ি যাবি না? মা অপেক্ষা করছে… কী রে সুমন ঘোষ, ওই লাল বাদশা, ওই শাহেনশা (অমিতাভ বচ্চনের বিশাল ফ্যান) এই দাদাভাই ওঠ? ওঠ? চোখ খোল। কোনও সাড়া নেই। সিসিউ ভর্তি লোক আমার দিকে তাকিয়ে, বেরিয়ে গেলাম। ওর পছন্দের শব্দ গুলো মনে করে ফিরে এলাম। দাদাভাই… KFC খাবি? ওর হাত টা উঠে আমার গালে লাগল। ডাক্তার নার্স সবাই ছুটে এসেছে। আমি আরো কনভিকশন নিয়ে ‘ দাদাভাই প্লেনে চড়ে বাড়ি ফিরবি?’ আবার মিরাকল। গোঙানি শুরু, শরীর কাঁপছে… যন্ত্রপাতি সিগন্যাল দিচ্ছে, ডাক্তার বলল, ‘ ও ফিরছে, হি ইজ কামিং ব্যাক’।

ফিরে এসেছিলেন সায়নীর দাদা। কোনও এক ২৯ জুলাই দাদাকে নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছিলেন ওঁরা। কিন্তু তিন দিন পরেই ম্যাসিভ এক হার্ট অ্যাটাক। এর পরেই সব। যখন ইমারজেন্সিতে নিয়ে এলেন, তখন আর কিছু করার নেই। অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। সায়নীর কথায়,” এই ঘটনার পর ঈশ্বরে বিশ্বাস অনেক নড়ে গেছিল, মা সব ঠাকুরের ছবি সরিয়ে দিয়েছিল, দাদার দেহের পাশে বাবাকে দেখেছিলাম ৩০ বছর পুরোনো মা কালির মূর্তি , যাকে না খাইয়ে বাবা অন্ন গ্রহণ করতেন না, মাটিতে মেরে একশো টুকরো করে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে আজ থেকে আমার ছেলেও নেই, আমার মা ও নেই!” এর পর কেটে গিয়েছে অনেক বছর। হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস আবারও ফিরে এসেছে একটু একটু করে। মাস দুয়েক আগে মা’কেও হারিয়েছেন সায়নী। বাবা ও তাঁর ছোট্ট সংসার। এরই মধ্যে ভোটের প্রচার চলছে পুরোদমে। যাদবপুরের মাটি কামড়ে পড়ে আছেন তৃণমূলের উজ্জ্বল তারকা সায়নী ঘোষ।