লোকসভার ভোটের খেলায় টলিপাড়া কোথায় দাঁড়িয়ে এই মুহূর্তে?
আবার একটা নির্বাচন। এবার কী সর্বক্ষণের রাজনীতিকরাই পাবেন টিকিট? নাকি চমক হিসেবে থাকবে টলিপাড়ার ভিড়। গ্রামগঞ্জের ভোটারদের মন বুঝতে শুরু করেছে এ রাজ্যের সবদলই। আদৌ গ্রামবাংলার মানুষের কাছে ভোটের রাজনীতিতে রুপোলি পর্দার মুখ কী গ্রহণযোগ্য? নাকি স্বাদ বদলাচ্ছে গ্রামগঞ্জ?
সামনে ভোট। লোকসভা নির্বাচন। অতীতে এই বঙ্গে বেশ কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী টিকিট পেয়েছিলেন। তবে রুপোলি পর্দা রাজনীতিতে মিশে যাওয়ার ঘটনা গত ১০ বছরে বঙ্গে বেড়েছে বেশ। সে লোকসভা হোক বা পুরসভা অথবা বিধানসভা। টলিপাড়ার সঙ্গে বঙ্গ রাজনীতির যোগ বেড়েছে, বাড়ছেও। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পেয়েছিলেন গায়ক কবীর সুমন, অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়রা। ২০১৪ সালে সেই সংখ্যা বেড়েছে আরও। বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়িয়েছেন অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। বাবুল তো বিজেপির টিকিটে আসানসোল থেকে সাংসদও হয়েছিলেন। সেই বছরই বাঁকুড়া থেকে তৃণমূলের সাংসদ হয়েছিলেন অভিনেত্রী মুনমুন সেন। ঘাটাল থেকে সাংসদ হয়েছিলেন দেব। তবে শ্রীরামপুর থেকে বিজেপির টিকিটে হার হয়েছিল গায়ক বাপ্পি লাহিড়ির। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যা বেড়েছে হু-হু করে। তৃণমূলের টিকিটে মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহানরা পৌঁছে গিয়েছেন সংসদে।
একই বছর বিজেপির টিকিটে সাংসদ হয়েছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রী। ২০১৪ সালের পর ২০১৯ সালেও লোকসভা নির্বাচনে জিতেছিলেন দেব ও বাবুল সুপ্রিয়। তবে হার হয়েছিল মুনমুন সেনের।মাঝে ৫ বছর এ বাংলায় রাজনীতির পট পরিবর্তন হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের পর শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, যশ দাশগুপ্ত, হিরণ, তনুশ্রী চক্রবর্তীরা দলে দলে যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। কিন্তু ২০২১-এর ফলে বিজেপির ফল আশানুরূপ না হওয়ায় আবার টলিউডের তারকাদের গেরুয়া শিবির ছাড়ার হিড়িক শুরু হয়ে যায়। স্পষ্ট একটা ধারণা তৈরি হতে থাকে তখন থেকেই। ঘোলা জলে মাছ ধরার লক্ষ্যে টলিউড এসে দাঁড়িয়েছিল রাজনীতির ঘাটে। কিন্তু ফল উল্টোলেই মুখ ফেরানো স্রেফ ২ মিনিটের খেল! সবাই কী তাই? না একেবারেই নয়। অনেকেই থেকে গিয়েছেন বিজেপিতে। তেমনি ২০১৯ নির্বাচনের পর তৃণমূলের কঠিন সময়ের পর হাত ছাড়েননি অনেক টলিউড অভিনেতা-অভিনেত্রীই।
এবার আবার একটা নির্বাচন। এবার কী সর্বক্ষণের রাজনীতিকরাই পাবেন টিকিট? নাকি চমক হিসেবে থাকবে টলিপাড়ার ভিড়। গ্রামগঞ্জের ভোটারদের মন বুঝতে শুরু করেছে এ রাজ্যের সবদলই। আদৌ গ্রামবাংলার মানুষের কাছে ভোটের রাজনীতিতে রুপোলি পর্দার মুখ কী গ্রহণযোগ্য? নাকি স্বাদ বদলাচ্ছে গ্রামগঞ্জ? ২০২১ সালের পর বিজেপি যখন এ রাজ্যে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল, তখন পদ্ম ছেড়ে অন্য দলে বা রাজনীতি ছেড়ে দেননি যাঁরা, তাঁদের মধ্যে রয়েছে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ,অঞ্জনা বসুর মতো অভিনেত্রী। তাঁরা কি টিকিট পাবেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে? বিজেপি অন্দরের খবর, এখনও চূড়ান্ত হওয়ার সময় আসেনি। আগামী লোকসভায় অভিনেত্রী অঞ্জনা বসুকে দেখা যাবে কি না, সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। বিজেপির টলিউড ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র অবশ্য বলছে, শুধুমাত্র অঞ্জনার নিজের ইচ্ছেয় কিছু হবার নয়। তিনি টিকিট পাবেন কি না, এখনই বলা সম্ভব নয়। TV9 বাংলাকে অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষের মন্তব্য, “সময় আছে। আগামী দিনেই পরিষ্কার হয়ে যাবে টলিপাড়ার কেউ ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন কি না।” কারণ, জল যে অনেক গড়াবে, পরিস্থিতি যে ভোটের আগে অনেক বদলাবে। তা জানেন দুঁদে রাজনীতিবিদরা।
টলি অন্দরে খবর, বিজেপি সাবধানে পা ফেলতে চাইছে। ২০২১ নির্বাচনের আগে যাঁরা হাসিমুখে দলবদল করে বিজেপির পতাকা নিয়েছেন রাজ্য দফতরে, তাঁরাই ভোট মিটতে সরে দাঁড়িয়েছেন। কেউ আবার প্রকাশ্যে বলেছেন, রাজনীতি আমাকে আরও বুঝতে হবে। অজুহাত খুঁজে সরে দাঁড়ানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছিল টলিউডে। তাই দলের মুখ যেন না পোড়ে, তার জন্য বিজেপি ধীরে চলো নীতিতে চলেছে। ভোট ঢের দেরি। তাই দৌড়ে কে থাকবেন, আর কে সাইডলাইন হবে-তার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে বাংলার রাজনৈতিক মহল।