AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Samiul Alam: ‘আবার প্রলয়’-দেখার পরেই বান্ধবীরা আর ফোন তুলছে না: সামিউল

গন্তব্য: শুটিং সেট। সেই গন্তব্যে ‘অভিনেতা’ পৌঁছন আর পাঁচজন ‘সহযাত্রী’র সঙ্গে ভিড়ে মিশে—চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে, ঘেমেনেয়ে একশা হয়ে। হাবড়া লোকাল ট্রেনে ওঠা রোগাটে গড়নের ছেলেটার জেদও যেন ভিড়ের ধাক্কায় আরও পোক্ত ওঠে। কাজল-কালো চোখ ২টোয় একরাশ স্বপ্ন... ‘আই উইল গো টু দ্য টপ, টু দ্য টপ, টু দ্য টপ।’ তবে স্রেফ ‘তারকা’ হিসেবে ‘টপ’-এ যেতে চান না কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের এই ছাত্র। ‘টপ’-এ পৌঁছতে চান ‘অভিনেতা’ হিসেবে।

Samiul Alam: 'আবার প্রলয়'-দেখার পরেই বান্ধবীরা আর ফোন তুলছে না: সামিউল
সামিউল
| Updated on: Oct 13, 2023 | 9:00 PM
Share

গন্তব্য: শুটিং সেট। সেই গন্তব্যে ‘অভিনেতা’ পৌঁছন আর পাঁচজন ‘সহযাত্রী’র সঙ্গে ভিড়ে মিশে—চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে, ঘেমেনেয়ে একশা হয়ে। হাবড়া লোকাল ট্রেনে ওঠা রোগাটে গড়নের ছেলেটার জেদও যেন ভিড়ের ধাক্কায় আরও পোক্ত ওঠে। কাজল-কালো চোখ ২টোয় একরাশ স্বপ্ন… ‘আই উইল গো টু দ্য টপ, টু দ্য টপ, টু দ্য টপ।’ তবে স্রেফ ‘তারকা’ হিসেবে ‘টপ’-এ যেতে চান না কলেজের ফার্স্ট ইয়ারের এই ছাত্র। ‘টপ’-এ পৌঁছতে চান ‘অভিনেতা’ হিসেবে।

সামিউল আলম—‘সহজ পাঠের গপ্পো’র সৌজন্যে এই বয়সেই যিনি জাতীয় পুরস্কারের গর্বিত বিজেতা। শুটিং শেষে ঘর্মাক্ত চেহারায় বাড়ি ফেরার সময়ও চোখে-মুখে দীপ্তি থেকে যায় সামিউলের—ইন্ডাস্ট্রিতে যার কোনও ‘কন্ট্যাক্টস’ নেই। তবু এই ‘অভিনেতা’ ইতিমধ্যেই কাজ করে ফেলেছেন টলিউডের প্রথম সারির তারকা এবং পরিচালকদের সঙ্গে। আজকের কলেজ-পড়ুয়া সামিউল রোজকার মতো স্কুলে গিয়েছিল একদিন… তার পরের গল্পটা ভবিষ্যতের কোনও নিউকামার-এর জন্য হয়তো একদিন হয়ে উঠবে ‘সহজ পাঠের গপ্পো’… যে ‘গপ্পো’টা স্রেফ ‘গল্প’ নয়… বরং ‘গল্প হলেও’ ভীষণভাবে ‘সত্যি’।

অভিনয়ে এলেন কী করে?

ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়তাম। স্কুলে কী হয় প্রতি বছর নতুন করে টিচার আসেন। এমনই একদিন স্কুলে গিয়েছি। এখনও মনে আছে ১২ নম্বর রুমে দু’জন অচেনা মানুষ এসে ঢুকলেন হঠাৎ। আমিও গিয়ে ওই রুমে উঁকি মারতেই দেখি ওঁদেরই মধ্যে একজন আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমিও ভয় পেয়ে সরে গিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেলাম।

তারপর?

আমি তো ভেবেছি উনি স্যর। আমি উঁকি মারছি, তাই আমার শাস্তি হবে। দৌড়চ্ছি, হঠাৎ করেই দেখি হেডস্যর ডাকছেন। আমি তখন ভয়ে শেষ। হঠাৎ করেই স্যর জিজ্ঞাসা করেন, ‘কী রে তুই নাটক করিস পাড়ায়’? আমি তো ‘না না’ করে মাথা নেড়ে যাচ্ছি। স্যরও ছাড়বার পাত্র নন। আমায় বললেন নীচে গিয়ে দাঁড়াতে। গিয়ে দেখি চার পাঁচ জন দাঁড়িয়ে আছে। আমার তো ভয় হচ্ছে। ভাবছি উঁকি মারার জন্য স্যর শাস্তি দেবেন। এমন সময়েই কাকু এসে জিজ্ঞাসা করলেন ‘তুমি সিনেমা করবে’?

কাকু কে?

পরিচালক মানস মুকুল পাল। আমার গুরু। যে আমাকে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আলাপ করিয়েছেন।

প্রথম দেখাতেই ছবির অফার পেয়েছিলেন তবে?

(হাসি) হ্যাঁ বলতে পারেন। কিন্তু ওই শুনে আমি আরও ভয় পেয়ে যাই। গ্রামের ছেলে, বাবা-মা বলেছে বাইরে কেউ কিছু দিলে খাবি টাবি না। ভাবলাম সে রকমই কেউ নাকি… যখন আশ্বস্ত হলাম তখন ভয়টা ভাঙল।

বাকিটা ইতিহাস?

ইতিহাসই বটে… মানসকাকু আমাকে সিলেক্ট করে। সেখান থেকে শুটিং, সেট, সিনেমা, সহজ পাঠের গপ্পো ও জাতীয় পুরস্কার।

ওই সময়ে বুঝেছিলেন জাতীয় পুরস্কারের মর্মটা?

সত্যি বলতে কিছুই বুঝিনি। স্বপ্নের মতোও লাগেনি। এখন লাগে। কারণ যে বয়সে ওই অ্যাওয়ার্ড পাই তখন জানতামই না সেটা কী জিনিস, কী করতে হয় ওটা নিয়ে।

‘আবার প্রলয়’-এ অভিনয় করেছেন, সেখানে আবার আপনি ‘দুষ্টু ছেলে’, রাস্তাঘাটে লোকজন কী বলছেন?

বেশ একটা মজার ব্যাপার হয়েছে। বন্ধুরা তো ওই সিরিজ দেখার পর থেকেই টোন-টিটকিরি কাটতে শুরু করে। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখি বান্ধবীরা আর ফোন ধরছে না। আমি তো অবাক! কী হল কিছুতেই বুঝতে পারছি না। এ তো ভাল জ্বালায় পড়া গেল। পরে শুনতে পেলাম ওই সিরিজে আমি কিডন্যাপ করেছি, ‘সোনার চোখে জল কেন’ করেছি, তাই আমায় ভয় পেয়ে ওরা আর ফোন ধরাই বন্ধ করে দিয়েছে।

আপনি থাকেন কোথায়?

বেড়াচাঁপার থেকেও ভিতরে ঝিকড়া বলে একটা গ্রামেই বড় হয়ে উঠেছি আমি।

বাবা-মা কী করেন?

আমার বাবার ব্যবসা আছে। সেলাইয়ের ব্যবসা আছে। মা হাউজওয়াইফ।

ছেলে এত ভাল কাজ করছে, কতটা খুশি তাঁরা?

দারুণ খুশি। কেউ তো ভাবেননি আমি শুটিং করব, এক বছর ধরে ‘সহজ পাঠ…’ সিনেমা হলে চলবে। তবে আমার সামনে না আনন্দটা দেখায় না। ধরুন আমার একটা ছবি বের হল, আমায় কিছু বলবে না। অন্যদের দেখিয়ে বেশি আনন্দ পাবে।

আগামী দিনে অভিনয় নাকি অন্য পেশা?

নানা, অন্য পেশা নয়। অভিনয় নিয়েই এগবো। আমি থিয়েটার করি না। কারণ, অতদূর থেকে অভিনয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

অভিনয় যদি ঠিক করে কাজ করতে পারি তাহলে দর্শকই ঠিক করে দেবেন পাঁচ বছর পর তাঁরা আমাকে কোথায় দেখতে চান। সিক্স প্যাক বানিয়ে কী হবে? একটা সিক্স প্যাক বানালাম, দুটো বোতাম খুলে রাখলাম। তাতে দিনের শেষ লাভটা কী হবে? পাঁচটা লোক তাকাবে, সেলফি নেবে। কিন্তু সেটাও বা কতদিন? আসল অভিনয়টা ঠিক করে করা। মানসকাকু আমায় রোজ শেখাচ্ছেন। ভাল করে অভিনয়টা করব। তারপর বাকিটা দর্শক যেখানে রাখবেন সেখানেই না হয় থেকে যাব।