কলকাতার মানুষ মুখেও যা মনেও তাই, ডিপ্লোম্যাটিক নয়: অনুপম খের
"উকিলের ছেলে উকিল হলে, অভিনেতার ছেলে অভিনেতা নয় কেন? ', পাল্টা প্রশ্ন অনুপম খেরের।
প্রায় দু বছর পর কলকাতায় অনুপম খের। কলকাতার বুকে তাঁর উড়ান মাটি ছুঁতেই ইনস্টাগ্রামে ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন অভিনেতা। ক্যাপশনে লিখেছিলেন, ‘মেসমেরাইজিং’। কলকাতা তাঁর কাছে নতুন নয়। শহরের গন্ধ, অলিগলির সঙ্গে তাঁর আলাপ বহুদিনের।
নতুন শহরে পৌঁছে মানুষ দেখতে ভালবাসেন অনুপম । নানা ধরনের মানুষ। তাঁদের রকম-সকম। হাবভাব। তাঁর কথায়, “যে শহরেই যাই মানুষ দেখি। প্রত্যেক শহরের ভিন্ন ভিন্ন বিশিষ্টতা রয়েছে। সবাই একে অন্যের থেকে একেবারে আলাদা।” এই শহরের কী আলাদা? কী আছে কলকাতার? কেনই বা কলকাতা এসেছেন তিনি? চেনা কলকাতা কি আজ তাঁর কাছে একটু অচেনা? টিভিনাইন বাংলার কাছে মনের ঝাঁপি খুললেন অনুপম। তাঁর সাফ জবাব, “কলকাতার মানুষ যা মুখে তা মনেও, ডিপ্লোম্যাটিক নয়।”
ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ডিপ্লোম্যাটিক নয়’ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে অনুপম খেরেরও। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে মন্তব্য রেখেছেন তিনি। নাসিরুদ্দিন শাহ-র সঙ্গে জড়িয়েছেন প্রকাশ্য বাকবিতন্ডায়। হয়েছেন ট্রোল্ড। কীভাবে সামাল দেন? অনুপমের কথায়, “তাঁদেরকে ইগনোর করি। যদি আমি ভুল হই তাঁরা ঠিক হন, নিশ্চয়ই তা পরিবর্তন করব। নচেৎ শুনব না”। লকডাউনে একটা গোটা বই লিখে ফেলেছেন তিনি। বইয়ের নাম, ‘ইয়োর বেস্ট ডে ইজ টুডে’। লকডাউনে মানুষ যখন জিম-ডালগোনা কফি নিয়ে ব্যস্ত অনুপম ব্যস্ত ছিলেন বই নিয়ে। মা-ভাই করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ঘটনা থেকে শুরু করে লকডাউনের আনসাং হিরোদের কথা রয়েছে সেখানে। মায়ের সঙ্গে এক অদ্ভুত বন্ড শেয়ার করেন অনুপম।
হাসতে হাসতে বলছিলেন ‘আমার মা এখন আমার থেকেও বেশি জনপ্রিয়’। লকডাউনে মায়ের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা মজার ভিডিয়ো শেয়ার করেছিলেন অনুপম। যে কোনও সম্পর্কের গভীরতাই যে তাঁর কাছে প্রাধান্য পায় সে কথা বলতে বলতেই খানিক নস্টালজিক তিনি। বললেন,”পড়াশোনায় একেবারেই ভাল ছিলাম না। একবার ক্লাসে ৫৯ র্যাঙ্ক করেছিলাম। বাবা জিজ্ঞাসা করেছিল, ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা কত? বলেছিলাম ৬০। বাবা রেগে যাননি। তবে মা মেরেছিলেন খুব।” শিমলার কাশ্মীরী পন্ডিত পরিবার থেকে মুম্বইয়ের যাত্রা সহজ ছিল না তাঁর। দিল্লির ন্যাশানাল স্কুল অব ড্রামা থেকে পাশ করেও মুম্বইয়ে গিয়ে অথৈ জলে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। অনুপমের কথায়, “৮০’র দশকে মুম্বইয়ে পদকের থেকে চুলের স্টাইলের গুরুত্ব হাজার গুণ বেশি ছিল”। তাঁর ৩৯ বছরের কেরিয়ারে অনেক ছবি করেছেন তিনি। কখনও মনে হয়েছে ইস যদি ওই চরিত্রটা করতে পারতাম? “না, তাঁর কারণ নিজেকে টাইপকাস্ট করিনি কখনও। ভেঙেছি অনবরত”। হালকা হেসে বললেন, “এখনও তো অনেক দিন কাজ করা বাকি আছে আমার।”
আর বলিউডের নেপোটিজম-ফেভারিটিজম বিতর্ক? “উকিলের ছেলে উকিল হলে, অভিনেতার ছেলে অভিনেতা নয় কেন? ‘, পাল্টা প্রশ্ন তাঁর। তিনি যোগ করেন, “সকলেই নিজের ছেলেমেয়েকে প্রোমোট করতে চায়। তাঁর যোগ্যতা না থাকলে দর্শক গ্রহণ করবে না।” ওটিটি ভাল, তবে তা যে সিনেমা হলের রিপ্লেসমেন্ট হতে পারে তা মনে করেন না তিনি। সিনেমা হলে সিনেমা দেখা অনুপমের কাছে আজও এক উদযাপন। মানুষের মন হাল্কা করার জায়গা।
নিজেকে শুধু অভিনেতা বলতে চান না তিনি প্রযোজক, মোটিভেশনাল স্পিকার, পরিচালক এবং লেখকই হোক তাঁর পরিচয়, চান অনুপম। তবে এখানেই বোধহয় তাঁর পরিচয় শেষ হয়ে যায় না। অনুপম যে রাজনৈতিক ভাবেও সচেতন সে প্রমাণ তাঁর ইনস্টা আগেও দিয়েছে। কাশ্মীরি পন্ডিতদের নিয়ে মন্তব্য থেকে শুরু করে অন্যন্য নানা সামাজিক ইস্যু নিয়ে মন্তব্য রেখেছেন তিনি। তবে তাল কাটল এ বার। দেশজুড়ে চলা কৃষক আন্দোলন এবং সচিন তেন্ডুলকর ও আশা ভোঁসলকে নিয়ে ট্রোলিং নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলেই খানিক সাবধানী অনুপম। বই হাতে তুলে বললেন, “ওই যে বইতে লেখা আছে ইওর বেস্ট ডে ইজ টুডে। ওদের উদ্দেশ্যেও একই কথা।” কী বোঝাতে চাইলেন তিনি? খোলসা করলেন না অনুপম। শুধু আলাপচারিতা শেষ হওয়ার আগে বাংলা জানেন কি না জিজ্ঞাসা করায় ভাঙা ভাঙা বাংলায় বললেন, “আমি তোমার অপেক্ষা করবে…”। কার? অনুপমই জানেন।