দলীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়েছি, তার মানে এই নয় যে মিটিং-মিছিলে ঘুরে বেড়াব: দীপঙ্কর দে

২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজভবনে প্রথম বার মমতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর মহাকরণের উদ্দেশ্যে যে পদযাত্রা বের হয়েছিল তাতে শামিল ছিলেন দীপঙ্কর দে। সম্প্রতি তিনি হাতে তুলে নিয়েছেন দলীয় পতাকা। শুটিং সেট থেকে সরাসরি TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বললেন দীপঙ্কর দে।

দলীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়েছি, তার মানে এই নয় যে মিটিং-মিছিলে ঘুরে বেড়াব: দীপঙ্কর দে
দীপঙ্কর দে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 19, 2021 | 1:31 PM

‘হঠাৎ করে রাজনীতির ময়দানে’ নেমেছেন তিনি এ কথা মানতেই নারাজ অভিনেতা। তাঁর কথায়, “এটকে রাজনীতি বলা ঠিক হবে না। বহুকাল ধরেই ওই দলটার (তৃণমূল কংগ্রেস) সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। প্রত্যক্ষভাবে মিটিং মিছিল বা রাজনৈতিক মঞ্চে না গেলেও সম্পর্কটা বহুকালের।” এ মাসেরই গোড়ার দিকে তৃণমূল ভবনে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর কাছ থেকে দলীয় পতাকা তুলে নিয়েছিলেন দীপঙ্কর বাবু। এর পরেই প্রশ্ন ওঠে তবে কি এ বার থেকে জনসভা, সমাবেশে দেখা যেতে চলেছে তাঁকে?

এ প্রসঙ্গে দীপঙ্করবাবুর বক্তব্য, “দলীয় পতাকা হাতে তুলে নিয়েছি মানে আমি দলভুক্ত হলাম। তাঁর মানে এই নয় যে, মিটিং মিছিলে আমি ঘুরে বেড়াব, প্রত্যক্ষ রাজনীতি করব। আমি বলেছি আমার সুবিধে-সময় মতো যেমন কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে আমি থাকব।” আর আসন্ন নির্বাচনে যেখানে দুই প্রতিপক্ষ (তৃণমূল এবং বিজেপি) শিবিরেই পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে টলি তারকা যোগ সেখানে কি প্রার্থী তালিকায় থাকবে না তাঁর নাম? খানিকটা উত্তেজিত হয়েই দীপঙ্করবাবু বললেন, “আপনি পাগল হয়েছেন? কে বলল এ সব? না-না-না একদম নয়।”

দীপঙ্কর দে’র হাতে পতাকা তুলে দিচ্ছেন ব্রাত্য বসু।

দীপঙ্করবাবু ভোটে দাঁড়াতে চান না। মিটিং মিছিলেও নিয়মিত দেখা যাবে না তাঁকে জানালেন নিজে মুখেই। তা হলে কেন আনুষ্ঠানিক ভাবে দলে যোগদান? প্রসঙ্গত, গত বছর তাঁর অসুস্থতার সময় রাজ্য সরকারের তরফে হাসপাতালে তাঁর যাবতীয় খরচ বহন করা হয়েছিল। এর ঠিক পরের বছরেই দীপঙ্কর দে’র রাজনীতিতে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগদানকে (দীপঙ্করবাবুর ভাষায় ‘দলভুক্ত হওয়া’) দুইয়ে-দুইয়ে চার করে তাঁর প্রতি কটাক্ষ ভেসে আসতে থাকে একের পর এক। তাঁর ‘আনুগত্য’ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ প্রসঙ্গে টিভিনাইন বাংলাকে দীপঙ্করবাবু সাফ বলেন, “আগেও বলেছি, আবারও বলছি তৃণমূলের সঙ্গে আমার দশ-বারো বছরের যোগাযোগ তো মিথ্যে হবার নয়। এত দিনের যোগাযোগে এক পয়সাও তো আমি নিইনি দলটির থেকে। কোনও পদও আশা করিনি। আমার নেওয়ার কোনও ইচ্ছেও নেই। রাজ্য সরকার কোথাও থেকে খবর পায় আমি হাসপাতালে। তাদের তরফে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে পাঠান হয়। বলা হয়, খরচ রাজ্য সরকার বহন করবে। স্বেচ্ছায় সেই খরচ বহন করে সরকার। আমি চাইনি। আমার সঙ্গে আমার ডেবিট কার্ড ছিল।” পাশপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত তিনি। বললেন, “দলটিকে ভালবাসার কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। উনি আমার থেকে বয়সে ছোট হতে পারেন কিন্তু আমার কাছে উনি রোল মডেল।”

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজভবনে প্রথম বার মমতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর মহাকরণের উদ্দেশ্যে যে পদযাত্রা বের হয়েছিল তাতেও শামিল ছিলেন দীপঙ্কর দে। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেই অভিনেতা বলেন, “দলটিকে ভালবেসে, দলনেত্রীকে ভালবেসে হাজারে-হাজারে মানুষ মহাকরণ গিয়েছিলেন ওই দিন। আমিও ছিলাম তাঁদের মধ্যে।” পাশপাশি ব্রাত্য বসু, মণীশ গুপ্তের নির্বাচনী প্রচারেও যে বারংবার তিনি অংশ নিয়েছেন এর আগে তা-ও জানান বর্ষীয়ান অভিনেতা। “অন্য কোনও দলে যোগ দেব তো কোনওদিন ভাবিওনি”, তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি।

আরও পড়ুন- ‘জার্সি থাকলেই হিরো, খুলে নিলেই জিরো’, একদা ঘনিষ্ঠ হিরণের উদ্দেশ্যে মদনের টু-লাইনার বাণ

কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁর ইন্ডাস্ট্রির সহকর্মীদের একটা বড় অংশ যে ভাবে দলবদল, নতুন দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়া অথবা রঙবদলে মেতেছেন এবং কারণ হিসেবে একযোগে জানিয়েছেন ‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাই’—সে প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য কী? প্রথমে চুপ থেকে, তারপর হাল্কা হেসে উত্তর দিলেন দীপঙ্করবাবু, “মানুষের উপকার রাজনীতিতে যোগদান না করেও করা যায়। তবে কী জানেন, ধরুন ক্যানিংয়ে একটা আইক্যাম্প (চক্ষু শিবির) হচ্ছে। আমি দীপঙ্কর দে, লোকে আমায় চেনে। কী হবে? বড় জোর একশো, দু’শ জন লোক দাঁড়াবে। তাতে তো কাজটা সফল হবে না। আমার লোকবল দরকার। প্ল্যাটফর্ম দরকার। সে যে দলই হোক।” কথোপকথনের মধ্যেই শটের ডাক এল তাঁর। শেষ করতে হল আলাপচারিতা..