Pradip Mukherjee Death: ‘কাজ করলেও আজকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সম্মান না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন প্রদীপদা,’ ইন্দ্রাশিস আচার্য

Indrashis Acharya: কিছুদিন আগে একটা বিজ্ঞাপনের কাজ করতে মুম্বই গিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার কথাও ভাগ করেছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে।

Pradip Mukherjee Death: ‘কাজ করলেও আজকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে সম্মান না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন প্রদীপদা,’ ইন্দ্রাশিস আচার্য
'পার্সেল' ছবির সেটে প্রদীপ মুখোপাধ্যায় এবং ইন্দ্রাশিস আচার্য
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 02, 2022 | 10:02 AM

মহুয়া দত্ত

“বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি শিল্পীদের সম্মান করতে ভুলে গিয়েছে, আক্ষেপ ছিল প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের”, বললেন ইন্দ্রাশিস আচার্য। ‘বিলু রাক্ষস’, ‘পিউপা’, ‘পার্সেল’ ছবির  পরিচালকের মুক্তি পাওয়া তিনটি ছবিতেই অভিনয় করেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। গত কাল বর্ষীয়াণ অভিনেতার প্রয়ানে পুরনো  কথা স্মৃতিপাতার থেকে তুলে আনলেন পরিচালক ইন্দ্রাশিস TV9 বাংলার সঙ্গে কথা বলার সময় । অদ্ভুতভাবে তাঁর প্রথম দেখা প্রিয় প্রদীপদার সঙ্গে। তাঁর নিজের অফিসের রিশেপশনে প্রথম দেখেছিলেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু তখন সেলিব্রিটি বলে আলাপ করতে যাননি। তবে তাঁকে দেখে একটা ভাল লাগা তৈরি হয়। তাই যখন প্রথম ছবি ‘বিলু রাক্ষস’ তৈরি করবেন বলে ঠিক করেন পৌঁছে যান তাঁর সেই দেখা হওয়া, না আলাপ করা অভিনেতার কাছে। প্রথম আলাপেই একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় দুইজনের মধ্যে, যা মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত ছিল।

শুধু কাজ নয়, দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। ভাই দাদাকে তাঁর পরের দুটো ছবিতেও রেখেছিলেন। অন্যদিকে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেছিলেন প্রথম ছবিতেই প্রদীপবাবু। কারণ হিসেবে বলেছিলেন, “তুমি মানুষকে সম্মান করতে জানো, এই ইন্ডাস্ট্রির অন্যদের মতো নও। তুমি পারবে না এখানে টিকতে। কাজ করি ঠিকই, কিন্তু এখন এখানে কেউ সম্মান করতে জানে না”, স্মৃতির পাতা উল্টে ইন্দ্রাশিস ফিরে গেলেন কয়েক বছর আগে। আজ দাদার কথার মানেও বুঝছেন। “তিনটে ছবি করেছি। প্রসংশিতও হয়েছে সেই ছবি। পুরস্কৃতও হয়েছে। তার পরও ছবি করার জন্য প্রযোজক পাই না, আর কত অর্ধশিক্ষিত পরিচালকরা টাকা পাচ্ছেন ছবি করতে”, কিছুটা আক্ষেপের সুরে বললেন ইন্দ্রাশিস।

এই শিক্ষার বিষয়েও কথা বলতেন প্রদীপ মুখোপাধ্যায়। প্রায়ই যখন গল্প হত, তিনি সত্যজিৎ রায়ের সময়ের কথা বলতেন। সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরেই সিনেমায় আসা। অনেক ছবিতেও কাজ করেছেন। “বারবার সেই সময়কার কথা বলতেন প্রদীপদা। বলতেন তখনকার কাজের ধরন থেকে মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ছিল। তখন শিক্ষিত মানুষেরা কাজ করতেন। আজকের ইন্ডাস্ট্রির মানুষ ভাবতেই পারবেন না সেই সময় কেমন ছিল। কাজের থেকে আনুষঙ্গিক বিষয়ে বেশি নজর বলেই, আজকের সিনেমার এমন অবস্থা”, দাদার কথা তুলে ধরলেন ‘পার্সেল’ ছবির পরিচালক।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায় টাকা নয়, সম্মান চাইতেন। তা এই সময় কাজ করলেও পেতেন না। সেই আক্ষেপ ছিল। কয়েকদিন আগে তাঁর জন্মদিন ছিল। শেষ ছবি ‘দত্তা’ সেটে তাঁর জন্মদিনের আয়োজন করা হয়। (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তও সেই জন্মদিনের কথা স্মৃতিচারণে ভাগ করেছিলেন) ইন্দ্রাশিস সেদিন গিয়েছিলেন স্টুডিয়োতে নিজের কাজে। দেখা হয় তাঁর সঙ্গে। খুব খুশি হয়েছিলেন এমনভাবে জন্মদিন পালন করে। বলেওছিলেন, ‘দেখো এরা কী করেছে’।

কিছুদিন আগে একটা বিজ্ঞাপনের কাজ করতে মুম্বই গিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার কথাও ভাগ করেছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে। জানিয়েছিলেন যে প্রথমবার কাজ করতে গিয়ে কত সম্মান পেয়েছিলেন সেখানে। তাতে যেমন হয়েছিলেন খুব খুশি, ঠিক তেমনই এখানে এতদিন কাজ করেও আজকে সেই সম্মান পাননি বলে ছিল দুঃখও।

কথা বলতে বলতে ইন্দ্রাশিস ফিরে গেলেন তাঁর প্রথম ছবি একটি শুটিংয়ের সময়ে। “ওঁর সিওপিডি ছিল। ঠাণ্ডা লেগে যেতে তাড়াতাড়ি। তাই বাইরে যাও নিয়ে বাড়ি থেকে আপত্তি করত। আমার প্রথম ছবি ‘বিলু রাক্ষস’-এর শুটিং করতে নর্থ বেঙ্গল যাওয়ার সময় বলেছিলেন আমায় ছাড়ত না বাড়ি থেকে তুমি আছো বলে ছেড়েছে। খুব ভরসা করে আমার বাড়ির লোকজন তোমাকে”। পরিচালক আরও কিছু ঘটনা সেই শুটিংয়ের সময়ের ভাগ করলেন। জানালেন, একটা নদী ধারে ‘সজনী সজনী রাধিকা’ গানের শুট চলছিল। তিনি শুটিং শেষে বলেছিলেন, “তোমার কাজ বাকিদের থেকে আলাদা। আমায় আবার পুরনো সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে। এত ভাল কাজ করছো, কিন্তু এখন যা হয়েছে ইন্ডাস্ট্রি তাতে তোমার মতো মানুষ এই পরিবেশে কাজ করতে পারবে না। তাই হঠকারিতা করে চাকরি ছেড়ো না যেন”।

ইন্দ্রাশিসের জীবনে একটা আক্ষেপ থেকে যাবে, সেই কথা দিয়েই শেষ করলেন স্মৃতিচারণ। সেটা হল প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ‘জন অরণ্য’ পড়ে কেমন হয়েছিল সেটা বলা হল না। “খুব সাহসী আত্মজীবনী প্রদীপদার। ছেলেবেলা থেকে সিনেমায় আসা সব কিছু আছে সেখানে। তিনি বলেছিলেন পড়ে জানাতে কেমন হয়েছে। অনেকেই আমাকে বলেছেন খুব সাহসী লেখা। সেই নিয়ে আলোচনা হলেও পড়ে আর বলা হল না”, দাদা সম্মানের আক্ষেপ নিয়ে গেলেন, আর তাঁর ভালবাসার ভাইয়ের রয়ে গেল এই আক্ষেপ।