Sumanta Mukherjee: ‘‘মাস্টারমশাই, আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি; এই সংলাপ আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক,’’ বললেন অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায়

সেই সংলাপকে উপজীব্য করেই তৈরি হচ্ছে একটি ছবি। ছবির নাম 'মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি।' ছবির পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক TV9 বাংলাকে বলেছেন, "তপন সিনহাকে ট্রিবিউট দিচ্ছি এই ছবির মাধ্যমে।"

Sumanta Mukherjee: ‘‘মাস্টারমশাই, আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি; এই সংলাপ আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক,’’ বললেন অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায়
অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 17, 2021 | 4:29 PM

‘‘মাস্টারমশাই, আপনি কিছুই দেখেননি’’—প্রয়াত পরিচালক তপন সিংহের ‘আতঙ্ক’ ছবির এই সংলাপ বিখ্যাত। ছবিতে অভিনয়ের সূত্রে সংলাপটি প্রথম বলেছিলেন অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায়। বলেছিলেন ‘মাস্টারমশাই’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। বলাই বাহুল্য, ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুমন্ত। পরবর্তীকালে সংলাপটি  কার্যত প্রবাদে পরিণত হয়েছে। এবার সেই সংলাপকে উপজীব্য করেই তৈরি হচ্ছে একটি ছবি। ছবির নাম ‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি।’ ছবির পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক TV9 বাংলাকে বলেছেন, “তপন সিনহাকে ট্রিবিউট দিচ্ছি এই ছবির মাধ্যমে।” এই কথা জানার পর TV9 বাংলা যোগাযোগ করে অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। একান্ত আলাপচারিতায় সংলাপের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে অকপট  সুমন্ত।

বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যখন সংলাপটির কথা কিংবা ছবিটির প্রেক্ষাপটের কথা ভাবেন, কী মনে হয়? হালকা হেসে TV9 বাংলাকে অভিনেতা সুমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটা একজন গ্রেটম্যানের তৈরি করা সংলাপ। ফলে আমার মাঝেমধ্যেই মনে হয়, এই সময়ে দাঁড়িয়েও এই সংলাপ সমান প্রাসঙ্গিক। যে উদ্দেশ্যে ছবিতে ছেলেটি মাস্টারমশাইকে সংলাপটি বলেছিল, সে উদ্দেশ্যটা এখনও মাঝেমধ্যে চোখের সামনে দেখতে পাই। এখন হয়তো মাস্টারমশাইয়ের জায়গায় অন্য কেউ থাকেন। কিন্তু কথাটা আমার মনে হয় এখনও ভীষণরকম প্রাসঙ্গিক।”

বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতিতে, যেখানে সবকিছু দেখেও অধিকাংশক্ষেত্রেই আমরা বাস্তবে নিশ্চুপ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব, সেখানে আমরা কি নিজে থেকেই ‘কিছুই’ দেখেও দেখিনি, এই ভান করে চলেছি? সুমন্ত বললেন, “এখন কী হয়েছে, মানুষ অল্পেই সন্তষ্ট হয়ে যাচ্ছেন। বুঝতে পারছেন না যে ভবিষ্যতে কতখানি কাজ হবে। সরকারের থেকেও তো নানারকম প্রকল্পে কাজ দেওয়া হচ্ছে। তাতে মানুষ ভাবছেন, এতেই কাজ চলে যাবে। মনে করছেন, ‘এই তো পেয়ে গেলাম ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা’। আমি একটা বিষয়কে এখানে উত্থাপন করতে চাই। রেফারেন্স যাকে বলে। আমাদের আর্টিস্ট ফোরামে সরকার থেকে একটা হেল্থ ইনসিওয়রেন্স চালু করা হয়েছিল। কয়েক বছর পর থেকে কিন্তু তার প্রিমিয়াম আর দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের যাঁদের অন্য কোম্পানির সঙ্গে মেডিক্লেম করা ছিল, ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সরকার থেকে হচ্ছে যখন আর নিজেদের পকেট থেকে খরচ করব কেন। যদিও সরকারের টাকা মানে আমাদেরই টাকা।”

‘মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি’ ছবির গানের শুটিং করতেই কাশ্মীরে গিয়েছিলেন নুসরত জাহান ও যশ দাশগুপ্ত। সঙ্গে পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক।

তাঁর আরও সংযোজন, “সমস্যা হচ্ছে, অনেকগুলো বছর তাঁরা প্রিমিয়াম দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। যেহেতু আমাদের এখন অনেকটাই বয়স হয়ে গিয়েছে, নতুন করে ইনসিওরেন্স করতে পারব না। এই যে সেসময় অল্পে সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম, তার ফল পরবর্তীকালে সমস্যায় পড়লাম। যেখানে সরকারি কর্মচারীদের ডিএ দিতে পারে না, সেখানে এত টাকা কোথা থেকে আসছে বলুন! সেই প্রশ্ন কেউ করেন না। মানুষের মনে ভয়ের একটা বিষয় আছে। দেখার নজর ছোট হয়ে গিয়েছে। ফলে এই কারণেই আমার মনে হয় তাপনদার সংলাপটা এখনও সমান প্রাসঙ্গিক। মানুষের কোমর ভেঙে গিয়েছে। শঙ্খ ঘোষের কবিতাটা বার বার মনে পড়ে – হঠাৎ রাতে ঘুম ভেঙে দেখলাম একটা লোক কী খুঁজছে… চোর চোর বলে চেঁচিয়ে উঠলাম… বলল আমি চোর নই… কী খুঁজছে আপনি, শিরদাঁড়াটা… তারপর তাকিয়ে দেখলাম, আরও অনেকে খুঁজছে… শিরদাঁড়াটা খুঁজছে…”

বুধবার সকালে পুরুলিয়ার জঙ্গল থেকে ফিরছিলেন ‘মাস্টারমশাই, আপনি কিছুই দেখেননি’ ছবির পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক। কিছুদিন আগে যশ-নুসরতকে নিয়ে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন শুটিং করতে। ছবির একটি গানের শুটিং করতে গিয়েছিলেন ভূস্বর্গে। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার ছবির মহরত। তার আগেই গানের দৃশ্যের শুটিং করে ফেলেছেন। ছবি সম্পর্কে TV9 বাংলাকে শিলাদিত্য বলেছেন, “এটা সত্যি মজার, যে মহরতের আগেই কাশ্মীরে গানের শুটিং করে ফেলেছি আমরা। বাইরে ছিলাম বলে মহরত করতে পারিনি। সেই কারণেই আগামিকাল একটা পুজো আছে। সেখানেই অফিশিয়াল ঘোষণা করব আমরা। আমরা তপন সিনহাকে ট্রিবিউট দিচ্ছি। ছবিতে মাস্টারমশাইয়ের চরিত্রে কে অভিনয় করবেন, সেটা নিয়ে এখনও ভাবনাচিন্তা চলছে। অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে। কিন্তু নিশ্চিত হয়েনি। যশ-নুসরতই নিশ্চিত হয়েছে এখনও পর্যন্ত।”

শিলাদিত্য জানিয়েছেন, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে তৈরি হচ্ছে ছবিটি। বলেছেন, “‘আতঙ্ক’ ছবির মতো গল্প একেবারেই নয় আমার ছবির। কিন্তু প্রেক্ষাপট সেটাই। ২০০০ সালের গল্প। যশ ও নুসরতকে দেখা যাবে কলেজের সিনিয়র ছাত্রের চরিত্রে। ওরা রিসার্চ ফেলোর চরিত্রে। ছাত্র রাজনীতি জীবনে কী-কী প্রভাব ফেলে, সেটা নিয়েই গল্প।”

তপন সিনহার ‘আতঙ্ক’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৬ সালে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সুমন্ত মুখোপাধ্যায় ছাড়াও ছবিতে অভিনয় করেছিলেন শতাব্দী রায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। খবরের শিরোনামে উঠে আসা বিভিন্ন ঘটনা অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল ছবি। যা আজও প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন বহু মানুষ। সেখানেই ছবির সার্থকতা।

আরও পড়ুন: Prosenjit Chatterjee: জিতের প্রযোজনায় প্রথমবার প্রসেনজিৎ, শুটিংয়ের প্রথমদিনে প্রকাশ্যে তাঁর লুক; চেনাই যায় না