অর্গ্যান ডোনেট করলে দেহের বিকৃতি হবে, এই ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের: ডক্টর তমাল ঘোষ

স্বরলিপি ভট্টাচার্য

স্বরলিপি ভট্টাচার্য |

Updated on: Sep 23, 2021 | 12:40 PM

World Organ Donation: কী ভাবে সচেতনতা প্রসারের কাজ চলছে? অঙ্গদানের পদ্ধতিগত দিকটাই বা কেমন? TV9 বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে স্পেশ্যাল সেক্রেটারি মেডিকেল এডুকেশন, সিনিয়র স্টেট নোডাল অফিসার ফর অর্গ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ডক্টর তমাল ঘোষ।

অর্গ্যান ডোনেট করলে দেহের বিকৃতি হবে, এই ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের: ডক্টর তমাল ঘোষ

১৩ অগস্ট ওয়ার্ল্ড অর্গ্যান ডোনেশন ডে। অঙ্গদান অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমাজের সব স্তরেই সচেতনতার অভাব রয়েছে অঙ্গদান নিয়ে। কী ভাবে সচেতনতা প্রসারের কাজ চলছে? অঙ্গদানের পদ্ধতিগত দিকটাই বা কেমন? TV9 বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে স্পেশ্যাল সেক্রেটারি মেডিকেল এডুকেশন, সিনিয়র স্টেট নোডাল অফিসার ফর অর্গ্যান ট্রান্সপ্ল্যান্ট ডক্টর তমাল ঘোষ।

অর্গ্যান ডোনেশন অত্যন্ত মহৎ একটি কাজ। কিন্তু তা নিয়ে এখনও অধিকাংশের সচেতনতা নেই। আপনি দীর্ঘদিন এর উপর কাজ করছেন, সত্যিই সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে মনে হয়?

১৩ অগস্ট ওয়ার্ল্ড অর্গ্যান ডোনেশন ডে। আর ৪ নভেম্বর, ন্যাশনাল অর্গ্যান ডোনেশন ডে। অনেকে অঙ্গদান করছেন। আবার অনেকে এখনও সচেতন নন। এটা সত্যি। তার জন্য আমাদের বিভিন্ন অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম রয়েছে।

একজন অঙ্গদান করলে কতজনকে বাঁচাতে পারেন?

অর্গ্যান ট্রান্সপ্লান্ট দু’রকম হয়। একটা লাইভ আর একটা ব্রেন ডেথের পর। আমরা চাইছি লোকে ব্রেন ডেথের পর অর্গ্যান ডোনেট করুক। ব্রেন ডেথের পর যিনি অর্গ্যান ডোনেট করবেন, তার জন্য অঙ্গীকার করুক। এটা করতে গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। মানুষ মারা যাওয়ার পর তাঁকে দাহ করা হবে বা দফন করা হবে, যাই-ই হোক অর্গ্যান নষ্ট হবে। একজন ব্রেন ডেথ হওয়া পেশেন্ট আটজনের জীবন বাঁচাতে পারেন। আটটা অর্গ্যান পাওয়া যেতে পারে। লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুস, প্যাংক্রিয়াস ইত্যাদি।

world-organ-donation-day-inside-(1)-(B)

অর্গ্যান ডোনেশন নিয়ে মানুষের ভুল ধারণাও তো রয়েছে?

অর্গ্যান ডোনেট করলে দেহের কোনও বিকৃতি হবে, এই ভুল ধারণা রয়েছে মানুষের। এটা ভাঙাতে হবে। অর্গ্যানের জন্য অর্গ্যানই চাই। কোনও ফ্যাক্টারি তো নেই, যেখানে অর্গ্যান তৈরি করা যাবে। একমাত্র যদি কেউ ডোনেট করেন, তবেই পাওয়া যাবে। আর একজন লাইভ লোক কিডনি বা লিভার দিতে পারেন। কিন্তু হার্ট বা লাংস তো জীবন্ত মানুষ, অর্থাৎ লিভিং ডোনার দিতে পারে না। তার জন্য ব্রেন ডেথ হতে হবে। এই সচেতনতা গড়ে তুলতে চাইছি। যাতে আমার ব্রেন ডেথ হলে যদি অঙ্গদান করি তা হলে অন্য কেউ পাবেন, তার উপকার হবে। সমাজের উপকার হবে।

ব্রেন ডেথের পর কত সময়ের মধ্যে অঙ্গ দান করলে তা অন্য কারও কাজে লাগতে পারে?

যদি কেউ অর্গ্যান দিতে রাজি হন, ব্রেন ডেথের পর ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখতে হবে। অর্গ্যান যাতে ভায়োবেল হয়। যাতে প্রতিস্থাপন করে মানুষের কাজে লাগে। সেক্ষেত্রে ডোনারের ব্লাড সার্কুলেশন মেনটেইন করতে হবে। কিডনির জন্য আমরা বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারি। ব্রেন ডেথের পর সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। কিন্তু হার্ট এবং লিভার চার-পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে ট্রান্সপ্লান্ট করে দিতে হবে। ফলে সময় খুব কম।

world-organ-donation-day-inside-(2)-(B)

এই কম সময়ের মধ্যে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়কে বোঝানোর দায়িত্বও আপনাদেরই?

যাঁর অঙ্গদান হচ্ছে, তাঁর যদি অঙ্গীকার করা থাকে, তাঁর পরিবার যদি সচেতন থাকেন, তা হলে সমস্যা নেই। তা না হলে কাউন্সেলিং করা হয়। পরিবারকে বোঝানো হয়। আপনার আত্মীয় অন্য কারও মধ্যে বেঁচে থাকবেন। অন্য কেউ এই অঙ্গ পেলে প্রাণ ফিরে পাবেন। এটা বোঝানোর জন্য খুব কম সময় পাই আমরা। ব্রেন ডেথের পর সব কিছু অর্গানাইজ় করতে হয় দ্রুত। তার পর রিসিভারকেও জানাতে হয়। ফলে কাজটাতে অত্যন্ত বেশি ডেডিকেশনের প্রয়োজন।

বেঁচে থাকাকালীন অঙ্গীকার করে গেলেই কি অঙ্গদান সম্ভব? নাকি মৃতের আত্মীয় সেই ব্যক্তির অঙ্গীকার ছাড়াও অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?

আমাদের একটা ফর্ম সেভেন আছে। সেখানে নিজে ডিক্লেরেশন দিতে পারেন। আমার ব্রেন ডেথ হলে আমি অঙ্গদান করতে চাই। কিন্তু ব্রেন ডেথের পর হয়তো বাড়ির লোক বললেন, আমরা দেব না। এটা ঘটে। তাদের মধ্যে সচেতনতা নেই। আবার একই সঙ্গে মারা গিয়েছেন কেউ, তাঁর কোনও অঙ্গীকার করা নেই। কিন্তু বাড়ির লোক মনে করছেন, সোশ্যাল ওয়ার্ক করবেন, তখন তাঁরা যোগাযোগ করেন অন বিহাফ অফ দ্যাট, সেটা করতে পারেন।

world-organ-donation-day-inside-(3)-(B)

অঙ্গদানের অঙ্গীকার করা রয়েছে কোনও ব্যক্তির, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর পরিবার দিতে চাইছে না, এই পরিস্থিতিতে কি পরিবারের উপর জোর করা হয়?

না। জোর করার কোনও বিষয় নয়। আমাদের কাউন্সেলর আছেন। তাঁরা বাড়ির লোককে বোঝানোর চেষ্টা করেন। ফোর্স করার কিছু নেই। অঙ্গদান করলে সেটা অন্য কারও কাজে লাগতে পারত, এটা বোঝানো হয়। আপনার বাড়ির যদি কারও এমন সমস্যা হয়, অঙ্গ পেলে তবে তিনি বাঁচতে পারবেন, সেই পরিস্থিতিই অন্য পরিবারে রয়েছে। তাঁদের উপকার হবে। এটা অনেকে বোঝেন। অনেকে আবার রাজি হন না। তবে জোর জবরদস্তির কিছু নেই।

যিনি অঙ্গ পেলেন তাঁকে, অথবা যাঁর অঙ্গদান হল, তাঁর পরিবারকে কি পরিচয় জানানো হয়?

না। নিয়ম অনুযায়ী কোনও পক্ষকেই জানানো হয় না।

world-organ-donation-day-inside-(4)-(B)

অঙ্গ নেওয়ার ক্ষেত্রে কি কোনও বয়সসীমা রয়েছে?

অর্গ্যান দিয়ে তো মানুষের কাজে লাগতে হবে। ধরুন কোনও পেশেন্ট ডায়াবেটিক বা কোনও পেশেন্টের ক্যানসার আছে, অথবা লিভারে হয়তো সমস্যা আছে তার অর্গ্যান তো ভাল হবে না। এগুলো পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। আমরা ৫০, ৬০-এর মধ্যে কিডনি নেওয়ার চেষ্টা করি। কম বয়স হলে ভাল। আর কর্নিয়া ৭০-এর উপর হলেও নেওয়া যায়।

শিশুদের ক্ষেত্রে নিয়মটা কী?

শিশুদেরও অঙ্গ নেওয়া হয়। কিন্তু ধরুন একটা ১০, ১১ বছরের বাচ্চা। তার হার্টও ছোট। তেমন রিসিভার পেশেন্ট দরকার। না হলে ওয়েস্ট হবে। অনেক সময় সেই বয়সের রিসিভার পাওয়া যায় না বলে ওয়েস্টও হয়।

অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ।

Latest News Updates

Follow us on

Related Stories

Most Read Stories

Click on your DTH Provider to Add TV9 Bangla