Malnutrition: মাছ-মাংস-ডিম সবই খাচ্ছে, তবুও শিশুর বিকাশ হচ্ছে না! বাচ্চার অপুষ্টির লক্ষণ নিয়ে মুখ খুললেন চিকিত্‍সকরা

বর্তমানে শিশুদের মধ্যে না খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। ফলে বিকাশ ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেটুকু খাবারের প্রয়োজন তা তাঁদের শরীরে প্রবেশ করছে না। খাওয়া নিয়ে শিশুদের মধ্যে এমন প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সুষম খাবারের বদলে বাইরের জাঙ্ক ফুডের গুরুত্ব তাদের কাছে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Malnutrition: মাছ-মাংস-ডিম সবই খাচ্ছে, তবুও শিশুর বিকাশ হচ্ছে না! বাচ্চার অপুষ্টির লক্ষণ নিয়ে মুখ খুললেন চিকিত্‍সকরা
শিশু যে অপুষ্টিতে ভুগছে, তার কিছু সতর্ককীকরণ লক্ষণ রয়েছে।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 16, 2021 | 4:59 PM

মানবশরীরের জন্য পুষ্টির গুরুত্ব কোনও অস্বাভাবিক ধারণা নয়। বরং বৃদ্ধি, বিকাশ ও ভরণপোষণের সময় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অপুষ্টি, ভারতের অত্যন্ত সুপরিচিত সমস্যা। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতা প্রচার করা হলেও এখনও হুঁস ফেরেনি অধিকাংশের। সচেতনতার অভাবে এই ধরণের সমস্যা কিন্তু আদৌও কমেনি, বরং অশিক্ষা ও যথেষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে তা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বর্তমানে শিশুদের মধ্যে না খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। ফলে বিকাশ ও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেটুকু খাবারের প্রয়োজন তা তাঁদের শরীরে প্রবেশ করছে না। খাওয়া নিয়ে শিশুদের মধ্যে এমন প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। সুষম খাবারের বদলে বাইরের জাঙ্ক ফুডের গুরুত্ব তাদের কাছে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এই বিষয় নিয়ে বাবা-মায়ের চিন্তার অন্ত নেই। পর্যাপ্ত ও সুষম খাবার না খাওয়ার ফলে বাচ্চাদের মধ্যে অপুষ্টির সমস্যা তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। শিশু যে অপুষ্টিতে ভুগছে, তার কিছু সতর্ককীকরণ লক্ষণ রয়েছে। যা অভিভাবকদের আগাম লক্ষ্য করা উচিত। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি দেখা দিলে কী কী উপসর্গ দেখা দিতে পারে, সে সম্বন্ধে সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড, আনিশ চট্টোপাধ্যায়। তিনি টিভি৯ বাংলাকে জানিয়েছেন,

মনোনিবেশ করার অক্ষমতা- দুষ্টু বুদ্ধির জন্য শিশুরা সবসময়ই এগিয়ে। কিন্তু এই দুষ্টুমি যদি কোনও কাজে ফোকাস বা মনোনিবেশ করতে অক্ষম হয়, তা এই শিশুসুলভ আচরণ হিসেবে তা নাকচ করে দেওয়া হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। মনোযোগের অভাবে ক্লান্তি ও জ্ঞানপ্রাপ্তির জটিলতা তৈরি হয়। এই বিচ্ছিন্ন আচরণের একটি প্রধান কারণ হল অপুষ্টি। আর সেইজন্য শিশুর আচরণের দিকে বিশেষ করে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

আকস্মিক ওজন পরিবর্তন- অভিভাবকরা সবসময় শিশুদের ওজন সম্পর্কে সচেতন থাকুন। কারণ শিশুর স্বাস্থ্যের অস্বাভাবিকতা ধরা পড়লে প্রথমে ওজনের হেরফের হতে শুরু করে। হাত-পা সরু হয়ে যাওয়া, পেট ফুলে যাওয়া, ত্বকের নানান সমস্যা তৈরি হওয়া এগুলি হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখা অত্যন্ত দরকার। হঠাত করে ওজন কমে গেলে বা বেড়ে গেলে তা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। পারলে কোনও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ নিতে পারেন।

খিদে না পাওয়া- যে সব শিশুরা খাবার না খাওয়া বা খাবার দেখলেই এড়িয়ে যায় তাঁদের মধ্যেই যে অপুষ্টি দেখা যায় তেমন নয়। যতটুকু খাওয়ার দরকার শিশু ঠিক ততটাই খাবে। কিন্তু কম খিদে, কম খাওয়া বা খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ না করা এগুলি অপুষ্টির অন্যতম কারণ। খিদে কমে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দিয়ে অবিলম্বে চিকিত্‍সকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

বৃদ্ধি না পাওয়া- যে বয়সে যতটা বৃদ্ধি পাওয়া দরকারস হিসেবমত বাচ্চার যদি বৃদ্ধি না ঘটে তা চিন্তার বিষয়। অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, আমার সন্তান খাচ্ছে না, আমার শিশু আর লম্বা হচ্ছে না। এমন অভিযোগ করার আগে শিশুর কোথাও পুষ্টির ঘাটতি হচ্ছে কিনা দেখুন। তবে এই সমস্যা জিনগত হলেও অপুষ্টির সম্ভাবনাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েটই একটি বাচ্চার শারীরিক, মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ডায়েরিয়া ও সংক্রামিত হওয়া- বার বার ডায়েরিয়া, শরীর অসুস্থ হয়ে যাওয়া, ইউরিনে সংক্রমণ, জ্বরে আক্রান্ত হলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এছাড়া শুষ্ক চোখ, চামড়ায় ফাটল ধরার মতো লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে হবে শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।

ওবেসিটি- গ্রামাঞ্চলে দেখা না দিলেও শহরে এই প্রবণতা দারুণ ভাবে বেড়ে গিয়েছে। কারণ বাড়ির খাবারের তুলনায় বাইরের জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে শিশুদের মধ্যে। এছাড়া অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে না পারা, শরীর সতেজ রাখতে খেলাধূলা করতে না পারা, এগুলি শরীরের উপর দারুণ প্রভাব ফেলেছে।

পাশাপাশি ডায়েটিশিয়ান ড. শুদেষ্ণা মৈত্র নাগ শিশুর অপুষ্টি দূর করার জন্য টিভি৯ বাংলাকে জানিয়েছেন, শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির ঘাটতি মেটাতে প্রথম থেকে সব খাবারের অভ্যাস তৈরি করতে হবে। বাড়িতে অভিভাবক বা বড়রা যাই খাবেন, তা দেখে শিশুরা খাবার খেতে শুরু করবে। তাই ৬ মাসের পর থেকেই শিশুকে শক্ত খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা দরকার। ৬ মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ পেলে সেই বাচ্চার অপুষ্টির লক্ষণ খুব কম দেখা যায়। শিশুর স্বাস্থ্যের স্বার্থে দুধ ছাড়াও অন্যান্য খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে নিয়মিত খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন।

শৈশবকাল থেকেই প্রোটিন ও মিনারেল জাতীয় খাবার খাওয়ালে অপুষ্টির লক্ষণ প্রকাশ পায় না। স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস বা ডায়েট মেনে শিশুকে খাওয়ানো হলে সেই সম্ভাবনা কমই হয়। তবে শিশুরা খাওয়ার সময় প্রচুর বায়না ও জেদ ধরে, খাওয়া নিয়ে ঝামেলা শুরু করে। শিশুদের ক্ষেত্রে সেই আচরণ করা স্বাভাবিক। তবে প্রথম থেকে দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে বড় বয়সে গিয়ে অপুষ্টি দেখা যায় না। তার কারণ দুধেই রয়েছে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও মিনারেলস। ফলে দুধ খেলে শিশুদের মধ্যে বিকাশ ও বৃদ্ধি সঠিকভাবে বাড়তে থাকে। শুধু তাই নয় হাড় মজবুত করতেও সাহায্য করে। তাই শিশুকালে অপুষ্টির ঘাটতি মেটাতে মাছ, মাংস, ভাত ও অন্যান্য ফাইবার ও প্রোটিন জাতীয় খাবারের পাশাপাশি দুধ খাওয়া আবশ্যিক।

তবে যে সব বাচ্চাদের মধ্যে ল্যাকটোজ ইনটোলারেন্সের সমস্যা থাকে, তাকে দুধের পরিবর্তে আমন্ড দুধ, সোয়া দুধ হিসেবে বিকল্প খাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে শিশুর পুষ্টির ঘাটতিতে যে যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, সেগুলি চিহ্নিত করে প্রথমেই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন: Dry Eyes in Winter: শুধু ত্বকই নয়, শুষ্ক চোখের সমস্যা দেখা যায় শীতকালে! চোখের এমন সমস্যা হলে কী করবেন?