Womens Day 2022: মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথাই বলা হয় না, এক্ষেত্রে উপায় কী?

Women Mental Health: মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য (Women Mental Health) নিয়ে আমরা খুব একটা আলোচনা করি না। কিন্তু, ওনাদের প্রতিদিনের কাজকর্মের জন্যই আমাদের দিন আরেকটু ভাল হয়। তাই, আজ নারী দিবসের (Womens Day) দিন জেনে নিন, কেমন আছে তাঁরা?

Womens Day 2022: মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথাই বলা হয় না, এক্ষেত্রে উপায় কী?
Follow Us:
| Updated on: Mar 08, 2022 | 9:36 AM
মানসিক স্বাস্থ্যের (Mental Health) ক্ষেত্রে লিঙ্গ আজও একটা বিরাট তফাৎ তৈরি করে দেয়। আগের অনেক গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে যে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের (Women Mental Health) যে অভিব্যক্তি, তার বেশিরভাগটাই হয় অভ্যন্তরীণ, যা পুরুষদের ক্ষেত্রে হয় বাহ্যিক। এই অভ্যন্তরীণ আর বাহ্যিক ব্যাপারটা ঠিক কী, সেটা জানতে কয়েকটা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন মনোচিকিৎসক (Psychiatrist) শর্মিলা সরকার। ইনি প্যাভলোভ হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। ওনাকে জানতে চাওয়া হয়, মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা করার যে একটা অনিহা আছে, সেই বিষয়ে যদি তাঁর কোনও বক্তব্য থাকে।
উত্তরে ডঃ সরকার বলেন, ‘প্রথমেই বলে রাখি যে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা করার বিষয়ে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মধ্যেই একটা অনিহা রয়েছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ব্যাপারটা অসুখে পরিণত হচ্ছে বা বাড়ির অন্যান্যদের প্রভাবিত করছে, ততক্ষণ কেউ সেভাবে গুরুত্বই দেয় না।’ মহিলাদের প্রসঙ্গে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে মহিলাদের ক্ষেত্রে, সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়িতে যেটা বিশেষভাবে দেখা যায়, তাঁরা অধিকাংশই জানে না মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টা কি । উচ্চবিত্ত ও সুশিক্ষিত মহিলারা তাও বেশ কিছুটা মাত্রায় নিজেদের নিয়ে সচেতন থাকেন। সাধারণ বা নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়িতে মহিলারা ভেবেই নেয় যে বাড়িতে থাকা মানে আমাকে কিছু নির্দিষ্ট কাজ করতে হবে আর সেগুলোকেই দিনের পর দিন করে যায়।’
ঠিকই তো। আমাদের মা-কাকিমাদের কি নিজেদের জন্য সময় বের করা হয়ে ওঠে? তাঁরা কি নিজেদের কখনও প্রশ্ন করেন যে তাঁরা কেমন আছেন, নৈমিত্তিক সামাজিক অবয়বের আড়ালে? হয়তো না। হয়তো প্রতিদিনের কাজে তাঁরা এতটাই ব্যস্ত যে, সেই সময়টুকুও হয়ে ওঠে না। ডঃ সরকার বলছেন, “একজন গৃহিণীর ইন্ট্রোস্পেকশন করাটা খুব দরকার। মানে, দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে না-পড়ে একটু নিজেকে নিয়ে ভাবুন। আপনি যেখানে আছেন, সেখানেই কি থেমে যেতে চান? নিজের ইচ্ছেগুলো নিয়ে একটু ভাবুন। নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজেকে দেখার বিষয়টা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটাই কেউ করে না। নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে, নিজেদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে একজন মহিলা কিছুই বলেন না।”
Women Mental Health
এই ইন্ট্রোস্পেকশনের অভাবেই একটা সময়ের পর প্রাত্যহিক কাজকর্মগুলো বেশ কিছুটা একঘেঁয়ে হয়ে ওঠে। আর এই একঘেঁয়ে হয়ে ওঠার পর্যায় থেকে শুরু হতে থাকে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি। এই পর্যায়ে যাতে না পৌঁছয় সেজন্য ডঃ সরকার পরামর্শ দিয়েছেন যে, সংসারের কাজের পর নিজেদের পছন্দকে একটু হলেও গুরুত্ব দিতে হবে। সেটা ছবি আঁকা কিংবা সোয়েটার বানিয়ে ফেলা যাই-ই হোক না কেন। এগুলোর মাধ্যমেই গতানুগতিক জীবনধারার বাইরে বেরিয়ে নিজের মতো করে কিছুটা ভাল থাকা যায়।
মহিলাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাফিলতির দিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেই থাকে। এই নিয়ে যখন ডঃ সরকারকে প্রশ্ন করা হয় তখন তিনি একটা দারুণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তাঁর কথা মতো, এমন অনেক মহিলাই রয়েছেন আমাদের মধ্যে যাঁদের বাড়িতে কোনওরকম মতামত দেওয়ার জায়গা নেই। তাঁদের যা বলা হয়, তাই করে চলার একটা অভ্যেস তৈরি হয়ে এসেছে। তাঁদের কথা যে গুরুত্ব কখনওই পাবে না, এই ধারণাটাই তৈরি হয়ে গিয়েছে তাঁদের মনস্তত্ত্বে।
এবার, একজন মানসিক চিকিত্সকের থেকে চিকিৎসা পাওয়ার মূল ধাপই হল আপনার জীবনে কী ঘটছে বা ঘটেছে সেই সম্বন্ধে তাঁকে সবটা খুলে বলা। এখানেই সমস্যার তৈরি হয়। এই মহিলারা এতদিন পর্যন্তই অবহেলিত হয়ে এসেছেন যে তাঁরা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে একেবারে চুপ হয়ে যান। তাঁদের অসুবিধার কথা বা অস্বস্তির কথা, কিছুই বলেন না। তাহলে এক্ষেত্রে উপায় কী? এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সেই সমস্ত মহিলাদের ভাষায় বোঝাতে হবে। অর্থাৎ, তাঁদেরকে তাঁদের মতো করে সময় নিয়ে বোঝালে, একটা বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করলে আসতে আসতে তাঁরা কথা শুনতে শুরু করবে।
সুতরাং, একজন মহিলার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। প্রতিদিনের কাজ কর্মের মাঝে কোথাও গিয়ে তাঁরা নিজেদের নিয়ে চিন্তাভাবনা করা ছেড়ে দিয়েছেন বা ভুলে গিয়েছেন। আসুন, এই নারী দিবসে, আমরা তাঁদের নিয়ে একটু ভাবি। তাঁদের বলি, তোমরা ভাব, তোমাদের নিয়ে। নিজেকে নিয়ে ভাবাটা সত্যিই খুব দরকার। আপনার কাছে আপনিই সবথেকে দামি। আত্মবিহ্বল হয়ে সাংসারিক কর্তব্য পালন হয়তো করে যেতেই হবে। কিন্তু…কোনও এক শীতের দুপুরে, কুঁকড়ে যাওয়া চামড়ায় রোদের উষ্ণ প্রলেপ যখন পড়ে, তখন হঠাৎ এক প্রৌঢ়ার মনে পড়ল, খুব ভাল ছবি আঁকতেন তিনি। কাউকে ডাকুন, খাতা পেন্সিল চান…প্রৌঢ়ার কাছে খুব বেশি সময় নেই হয়তো নিজের জন্য বাঁচার, কিন্তু আপনার কাছে তো আছে। ভাবুন, নিজেকে নিয়ে, নিজের জন্য ভাবুন…