কার্গিল যুদ্ধের ২৫তম বার্ষিকী, এই যুদ্ধ-নায়কদের সম্মান জানাল News9

News9 25th Kargil honours: ভারত এবং পাকিস্তান - দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আর এই দুই দেশের মধ্যেই হয়েছিল কার্গিল যুদ্ধ। তাও আবার বিশ্বের অন্যতম প্রতিকূল ভূখণ্ডে, হিমালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ে। বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) কার্গিল যুদ্ধের ২৫তম বার্ষিকী উপল্ক্ষ্যে, কার্গিল বীরদের সম্মান জানাল News9। কারা সেই বীর সেনানি, আসুন তাঁদের চিনে নেওয়া যাক

কার্গিল যুদ্ধের ২৫তম বার্ষিকী, এই যুদ্ধ-নায়কদের সম্মান জানাল News9
কার্গিল বীরদের সম্মান জানাল নিউজ৯Image Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Jul 19, 2024 | 12:13 AM

নয়া দিল্লি: ভারত এবং পাকিস্তান – দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। আর এই দুই দেশের মধ্যেই হয়েছিল কার্গিল যুদ্ধ। তাও আবার বিশ্বের অন্যতম প্রতিকূল ভূখণ্ডে, হিমালয়ের সুউচ্চ পাহাড়ে। ভারতের উপর এই যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। পাক বিমান ও নৌবাহিনীকে অন্ধকারে রেখে, এই যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন সেনাপ্রধান, জেনারেল পারভেজ মুশারফ। জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের মধ্যে একমাত্র সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল তারা। তবে, হিমাঙ্কের নীচে থাকা সেই যুদ্ধক্ষেত্রে, পাকিস্তানের এই আক্রমণের যোগ্য জবাব দিয়েছিল নয়া দিল্লি। বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) কার্গিল যুদ্ধের ২৫তম বার্ষিকী উপল্ক্ষ্যে, কার্গিল বীরদের সম্মান জানাল News9। কারা সেই বীর সেনানি, আসুন তাঁদের চিনে নেওয়া যাক –

লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহিন্দর পুরি

১৯৬৬ সালের জুনে তৃতীয় গোর্খা রাইফেলসের পঞ্চম ব্যাটালিয়নে কমিশন পেয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহিন্দর পুরি। তাঁর নেতৃত্বাধীন বিখ্যাত ৮ মাউন্টেন ডিভিশন, কার্গিল সেক্টরে সেনাবাহিনীর আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার দখল পুনরুদ্ধার করেছিল।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াই কে জোশী

কার্গিল যুদ্ধের সময়, দ্রাস সেক্টরে জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসের ১৩তম ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াই কে জোশী (তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল)। তাঁর ব্যাটালিয়ন চারটি জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছিল। সবথেকে সফল অভিযান ছিল পয়েন্ট ৪৮৭৫। ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রার আত্মবলিদানের পর, এই পয়েন্ট এখন বাত্রা টপ নামে পরিচিত। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াই কে জোশীর ইউনিট বীরত্বের জন্য মোট ৩৭টি পুরস্কার পেয়েছিল। এই ব্যাটালিয়নকে ‘সাহসীদের মধ্যে সাহসীতম’ উপাধিতেও ভূষিত করা হয়।

এয়ার মার্শাল পিএস আহলুওয়ালিয়া

কার্গিল অপারেশনের সময় গোয়ালিয়র এয়ার ফোর্স স্টেশনের এয়ার অফিসার কমান্ডিং হিসাবে, এয়ার মার্শাল পিএস আহলুওয়ালিয়া (তখন এয়ার কমোডর), মিরাজে বেশ কয়েকটি ট্রায়াল রান করেছিলেন। যা কার্গিলে এই যুদ্ধবিমানের সফল ব্যবহারে সহায়ক হয়েছিল।

ব্রিগেডিয়ার উমেশ বাওয়া

কার্গিল যুদ্ধের সময় ১৭ জাট ব্যাটেলিয়নের নেতৃত্বে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার উমেশ সিং বাওয়া। পরে তাঁকে বীর চক্রে ভূষিত করা হয়। তার ইউনিটের উপর মাশকোহ উপত্যকায় পিম্পল কমপ্লেক্স, পয়েন্ট ৪৮৭৫-এর অংশ দখল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

ব্রিগেডিয়ার দেবিন্দর সিং

কার্গিল যুদ্ধের সময় ব্রিগেডিয়ার দেবিন্দর সিং বাটালিক সেক্টরে ৭০ পদাতিক ব্রিগেডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এমনিতে পদাতিক ব্রিগেডের অধীনে তিনটি ব্যাটেলিয়ন থাকে। কিন্তু সেই সময়, ৭০ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনে ১১টি ব্যাটেলিয়ন ছিল। পয়েন্ট ৫২০৩-এর যুদ্ধের পাশাপাশি, কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম কঠিন অভিযান, জুব্বার কমপ্লেক্সে আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

কর্নেল রাজীব কুমার

মুশকোহ উপত্যকায় ১৮ গ্রেনেডিয়ারের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল রাজীব কুমার সিং। ১৬,২৫০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পিম্পল কমপ্লেক্সের একটি অংশ, পয়েন্ট ৪৮৭৫ দখল করার দায়িত্ব ছিল এই ব্যাটালিয়নের উপর। এই ব্যাটালিয়নকে একটি পরম বীর চক্র, দুটি মহা বীর চক্র, ছয়টি বীর চক্র, একাধিক সেনা পদক এবং সেনাপ্রধানের প্রশংসা পত্র-সহ ৫২টি সম্মানে ভূষিত করা হয়।

৫ প্যারা রেজিমেন্ট

অপারেশন বিজয়ের অংশ হিসাবে জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারতের দশটি প্যারাসুট রেজিমেন্ট ব্যাটালিয়নের মধ্যে সাতটিকে মোতায়েন করা হয়েছিল। ৬ প্যারা এবং ৭ প্যারা, ১প্যারা বাহিনী যখন মুশকোহ উপত্যকা পুনরুদ্ধার করছিল, তখন ৫ প্যারা ছিল বাটালিক সেক্টরের যুদ্ধে। ১০ প্যারা ছিল খালুবার রিজ অভিযানে। আর ৯ প্যারা ছিল কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম কঠিন অভিযানে। ল্যান্ড মাইন পেরিয়ে এবং সেগুলি পরিষ্কার করে সুউচ্চ জুলু রিজে যুদ্ধ করেছিল তারা।

ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা ত্যাগী

১৯৯৭ সালে প্রথম মহিলা সেনা অফিসার হিসেবে ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগীকে লেহ-এর সুউচ্চ সেনা শিবিরে মোতায়েন করা হয়েছিল। তিনি ছিলেন লজিস্টিক শাখায় দায়িত্বে। ১৯৯৯ সালে, কার্গিল যুদ্ধের জন্য যখন তাঁর ডাক পড়েছিল, তখন তাঁর গর্ভে ছিল তাঁর দ্বিতীয় পুত্র। যুদ্ধের পর, তিনি তাঁর পরিষেবার জন্য কার্গিল স্টার, অপারেশন বিজয় পদকে ভূষিত হন।

প্রয়াত মেজর সি বি দ্বিবেদী

দ্রাস সেক্টরে মোতায়েন ছিল ৩১৫ ফিল্ড রেজিমেন্ট। নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল এনএ সুব্রমনিয়ন। কার্গিল যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রাসে মোতায়েন করা প্রথম আর্টিলারি ইউনিট ছিল এটি। এই বাহিনরই সদস্য, মেজর সি বি দ্বিবেদী। শত্রুপক্ষের একটি গোলার আঘাতে রক্তাক্ত হয়েও তিনি শত্রুর উপর গোলা বর্ষণ করে গিয়েছিলেন। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি গোলা ছুড়তে থাকেন।

প্রয়াত ক্যাপ্টেন নেইকেজাকুও কেঙ্গুরসে

রাজপুতানা রাইফেলসের একজন জুনিয়র কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন কেঙ্গুরসে। কার্গিল যুদ্ধের সময় দ্রাস সেক্টরে মোতায়েন ছিলেন তিনি। ব্ল্যাক রক নামে একটি খাড়াইের উপর অবস্থিত একটি মেশিনগান পোস্ট শত্রুদের হাত থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁর ঘাতক প্লাটুনকে। তারা দায়িত্ব পালন করেছিল। কিন্তু, মাত্র ২৫ বছর বয়সে শহিদ হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কেঙ্গুরসে। সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের জন্য তাঁকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বীরত্বের পুরস্কার, “মহা বীর চক্র” দেওয়া হয়েছিল। আর্মি সার্ভিস কর্পস থেকে প্রথম এবং একমাত্র মহাবীর চক্র প্রাপক হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কেঙ্গুরসেই।