India’s Foreign Policy : ইউক্রেন সংঘাতের আবহে পরীক্ষার মুখে ভারতের নিরপেক্ষতা, কত বড় ফ্যাক্টর হবে চিন?

India's Foreign Policy : ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাতের আবহে কি ভারত স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ বিদেশ নীতি বজায় রাখতে পারবে? ঘরে বাইরে ভারতের অবস্থান নিয়ে এই প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে কি ভারত পারবে নিরপেক্ষ থাকতে? এই প্রশ্নই করা হয়েছিল ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। প্রশ্নের জবাব দিতে জয়শঙ্কর মন্তব্য করেন, ‘আপেল আর কমলা তো এক নয়।’

India's Foreign Policy : ইউক্রেন সংঘাতের আবহে পরীক্ষার মুখে ভারতের নিরপেক্ষতা, কত বড় ফ্যাক্টর হবে চিন?
ছবি : PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 22, 2022 | 11:09 PM

নয়া দিল্লি : ইউক্রেন রাশিয়া সংঘাতের আবহে কি ভারত স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ বিদেশ নীতি বজায় রাখতে পারবে? ঘরে বাইরে ভারতের অবস্থান নিয়ে এই প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। সম্প্রতি সংসদেও রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন যে ভারত ‘জোট নিরপেক্ষতা’র নীতি থেকে সরে এসেছে সাম্প্রতিককালে। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতে কি ভারত পারবে নিরপেক্ষ থাকতে? এই প্রশ্নই করা হয়েছিল ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। প্রশ্নের জবাব দিতে জয়শঙ্কর মন্তব্য করেন, ‘আপেল আর কমলা তো এক নয়।’ উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক কালে কোয়াডের মাধ্যমে ভারত-আমেরিকার সখ্যতা বেড়েছে। তবে মার্কিন ‘হুঁশিয়ারি’ সত্ত্বেও ভারত রাশিয়া থেকে S-400 মিসাইল সিস্টেম কিনেছে। অবশ্য চিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে ভারতের আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াকে প্রয়োজন। এদিকে ঐতিহাসিক ভাবে ভারত-রাশিয়ার বন্ধুত্ব বর্তমানে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘে ভারত নিরপেক্ষ থেকেই বক্তব্য পেশ করেছে ইউক্রেন ইস্যুতে। রাশিয়ার নিন্দা না করেই ভারত সুকৌশলে বারবার বলে এসেছে, ‘দুই পক্ষকেই আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান সূত্র বের করতে হবে।’ রাশিয়া ভারতের এই অবস্থানের প্রশংসাও করেছে। এই অবস্থানের জন্য এখনও ভারতের উপর কোনও ‘চাপ’ সৃষ্টি করেনি আমেরিকাও। তবে এই গোটা ইস্যুতে চিনের অবস্থান ভারতকে বিপাকে ফেলতে পারে।

আমেরিকা বিরোধী চিনের সম্পর্ক এমনিতে রাশিয়ার সঙ্গে  এমন কোনও মধুর নয়। তবে সম্প্রতি ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকাকে বিপাকে ফেলতে চিন ঝুঁকেছে রাশিয়ার দিকে। এরই মাধে গতমাসে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলির দ্বারা আনা রেজোলিউশনের ভোটাভুটিতে ‘অনুপস্থিত’ থাকে ভারত। যা নিপাত পক্ষে রেজোলিউশনের ‘বিপক্ষে’ ভোট দেওয়ারই সামিল। ভিতরে ভিতরে পশ্চিমা জোট এই নিয়ে ভারতের উপর ক্ষুণ্ণ থাকলেও মুখে তা প্রকাশ করেনি। এদিকে রাশিয়া খুল্লামখুল্লা ভারতের প্রশংসা করেছে। তবে এরপরও ভারতের সঙ্গে  ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে যুদ্ধের কালো মেঘ যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ভারতের নিরপেক্ষ থাকা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারত কোনও দিন সরাসরি কোনও ‘ব্লক’-এ যোগ দেয়নি। জওহরলাল নেহরু থেকে শুরু করে ইন্দিরা গান্ধী, সবাই এই নীতি মেনেই চলেছে। তবে ভারত সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তীতে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ থেকেছে। তবে জর্জ ডাব্লু বুশের শাসনকালে মার্কিন মুলুকে আলকায়দার হামলার পর থেকে সমীকরণ বদলাতে থাকে। ভারত-আমেরিকার বন্ধুত্ব গভির হয়েছে। এর দাম দিতে গিয়ে ইরানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কিছুটা শীতল হয়েছে। বদলে সৌদি আরব, সংয়ুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দেশের সঙ্গে  ভারতের সম্পর্ক ভালো হয়েছে। তবে এই পুরো সময়কালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে  নিজেদের বন্ধুত্বে কোমও আঁচ পড়তে দেয়নি। মধ্য এশিয়ার রাশিয়াপন্থী দেশগুলোর সঙ্গে ও ভারতের সম্পর্ক খুব ভালোই। ধীরে ধীরে ‘জোট নিরপেক্ষতা’র নীতি থেকে ভারত ‘বহুাক্ষিক জোট’ নীতি গ্রহণ করেছে।

আমেরিকার সঙ্গে  ভারতের ‘বিশেষ সম্পর্ক’ থাকলেও সব ইস্যুতে যে ভারত আমেরিকার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলায়, এমনটা নয়। জয়শঙ্করের কথায় এটা, ‘কৌশলগত স্বতন্ত্রতা’। ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকার সঙ্গে  এক পথে না হেঁটে তাদেরকে আশির দশকের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সেই সময় পাকিস্তান যখন পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছিল, তখন আমেরিকা নীরব দর্শক থেকেছে। পরবর্তীতে অটল বিহারী বাজপেয়ীর সময়কালে ভারতের পারমাণবিক বোমার পরীক্ষার পর ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল আমেরিকা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও আমেরিকা সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানের দিকে। সেই সময় রাশিয়ার সাহায্য পেয়েছিল ভারত। ভারতকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রেও রাশিয়া চিরকাল মুক্তহস্ত ছিল। অবশ্য ভারতের এই রাশিয়া নির্ভরতা স্বইচ্ছায় ছিল না। আমেরিকা ও ইউরোপ ভারতকে সাহায্য না করায় ভারত বাধ্য হয়েই রাশিয়ার মুখাপেক্ষি হয়েছিল। ভারতের পক্ষে গিয়ে বহুবার নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার ‘ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি’তে যে দুই দেশের নাম ছিল, তাদের মধ্যে একটি ভারত, অপরটি চিন।

চিনের সঙ্গে  রাশিয়ার সখ্যতা অবশ্য ভারতের মাথাব্যথার কারণ নয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত ভালো করেই বোঝে যে পশ্চিমকে ঠেকাতে রাশিয়া চিনের কাছাকাছি যাবে। চিনের সঙ্গে  রাশিয়ারও সংঘাত রয়েছে। মাঞ্চুরিয়া প্রদেশ নিয়ে দুই দেশ সংঘাতে জড়িয়েছিল আজ থেকে প্রায় পাঁত দশক আগে। চিন যে পরবর্তীতে সাইবেরিয়া অঞ্চলের উপর নজর দেবে না, এই বিষয়ে রাশিয়া নিজেও সংশয় মুক্ত নয়। এদিকে চিনের সঙ্গে  ভারতের সংঘাতেও রাশিয়া নাক গলায় না। শি জিনপিংয়ের সঙ্গে  ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠকের পর পাঁচ হাজার শব্দের যৌথ বিবৃতিতে ভারত নিয়ে কোনও শব্দ খরচ করা হয়নি। যা প্রমাণ করে যে ভারতের সীমান্ত ইস্যুতে রাশিয়া চিনকে সমর্থন করে না। এই আবহে ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান ‘ন্যায্য’। চিনকে ঠেকাতে ভারতের কোয়াড জোটের প্রয়োজন হলেও রাশিয়ার সঙ্গে  তাদের সম্পর্ক খারাপ করার কোনও কারণ নেই। ভারত নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে যে অবস্থান গ্রহণ করেছে, তাতে আমেরিকাও সরাসরি আঙুল তুলতে পারে না। তাই ‘জোট নিরপেক্ষ’ না হলেও ভারতের ‘বহুপাক্ষিক জোট’ আপাতত ‘পাশ’ করেছে।

আরও পড়ুন : Bajrang Dal Activist Murder : কর্নাটকের হিংসায় দায়ী কেরলের মডেল, বজরং দলের কর্মীর খুনে দাবি তেজস্বীর