হাতে টিকা নিতে ভয়? দেহের এই অংশে করোনা টিকা নিলেও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবেন আপনি
মর্ডানা ও ফাইডার-বায়োএনটেকের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে দেখা গিয়েছিল, বেশ কিছু অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেই হাতে টিকা নেওয়ার পর ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল।
নয়া দিল্লি: স্বাস্থ্যকর্মী, ষাটোর্ধ্বদের ও ৪৫ উর্ধ্বদের টিকাকরণের পর ১ মে থেকে টিকাকরণ শুরু হতে চলেছে। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও টিকাকরণ নিয়ে অনেকের মনেই নানা সংশয় রয়ে গিয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আমরা সকলেই হাতে টিকা নিয়েই অভ্যস্ত। তবে কেবল হাতেই নয়, জানেন কী আপনি উরুতেও টিকা নিতে পারেন? স্বাভাবিকভাবে সকলে হাতে টিকা নিলেও কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে উরুতেও টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। এটি সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে শারীরিক পরিস্থিতির উপর।
কোন কোন ক্ষেত্রে আপনি উরুতে টিকা নিতে পারেন?
লিম্ফেডিমা– অনেক সময় দেহের কিছু অংশ জমাট বেধে ফুলে ওঠে। কষ্টদায়ক এই শারীরিক পরিস্থিতিকেই এক কথায় লিম্ফেডিমা বলে। সাধারণ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। এই জমাট বাধা মাংসপিন্ড অস্ত্রোপচারও করতে হয়। মর্ডানা ও ফাইডার-বায়োএনটেকের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে দেখা গিয়েছিল, বেশ কিছু অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা দিয়েছিল হাতে টিকা নেওয়ার পর। তবে এটি অতি সাধারণ একটি উপসর্গ, এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে ভ্যাকসিনটি শরীরে পিরবেশ করেছে এবং দেহ তাতে সাড়া দিচ্ছে। মর্ডানার টিকা নেওয়ার পর এক-দুদিন হাত ফোলা থাকলেও ফাইজার-বায়োএনটেকের ক্ষেত্রে তা ১০ দিন অবধি ফোবা থাকতে পারে।
যে সমস্ত রোগীদের লিম্ফোডিমা রয়েছে বা তার উপসর্গ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বহু চিকিৎসকরাই উরু বা থাইয়ে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।
স্তন ক্যানসার– যে সমস্ত মহিলারা স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত বা সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও হাতের বদলে উরুতেই টিকা নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কারণ স্তন ক্যানসারের সঙ্গেই যেহেতু লিম্ফ বা মাংসপিন্ড জমাট বাধার উপসর্গ থাকে, সেক্ষেত্রে মডার্না বা বায়ো-এনটেকের ভ্যাকসিন নিতে ফের সেই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এমনকি তা ভুল চিকিৎসার দিকেও এগোতে পারে।
টিকা নেওয়ার ৬ সপ্তাহের মধ্যে যাদের ম্যামোগ্রাম করানোর কথা
হাতে যখন করোনা টিকা নেওয়া হয়, তখন হাতের নিচে বা কাধের আশেপাশে লিম্ফ নোড দেখা দিতে পারে। ম্যামোগ্রামের সময় এটি কেবল একটি সাংদা চিহ্ন হিসাবেই ধরা পড়বে। চিকিৎসক যদি আপনার সাম্প্রতিক টিকাকরণের বিষয়ে অবগত না তাকেন, তবে তিনি এটিকে ক্যানসার ভাবতেই পারেন। সুতরাং করোনা টিকা নেওয়ার আগেই ম্যামোগ্রাম করিয়ে ফেলুন অথবা দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার কমপক্ষে একমাস পর করোনা টিকা নিন। এক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনা কমবে। এছাড়া বিকল্প হিসাবে আপনি উরুতে করোনা টিকা নিতে পারেন, যা আপনার ম্যামোগ্রাম রিপোর্টে কোনও প্রভাব ফেলবে না।
প্রথম টিকা হাতে নিলে কি দ্বিতীয় টিকা উরুতে নিতে পারবেন?
চিকিৎসকদের মতে, এটি নিয়ে কোনও চিন্তী করার কারণ নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে করোনা টিকা নেওয়া সমথেকে বেশি জরুরি। প্রথম ডোজ় নেওয়ার পর যদি আপনার হাত ফুলে যায়, তবে আপনি দ্বিতীয় ডোজ় উরুতেও নিতে পারেন। এক্ষেত্রে বিশেষ কোনও ফারাক পড়বে না।
হাতেই টিকা দেওয়া হয় কেন?
করোনা ভ্যাকসিন মানবদেহের পেশিতে প্রয়োগ করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। হাতের পেশিতে টিকা দেওয়া যেহেতু বেশি সহজ ও কম যন্ত্রণাদায়কর বলে মনে করা হয়, তাই মূলত হাতেই সমস্ত টিকাকরণ করা হয়। তবে চিকিৎসকদের মতে, দেহের যে কেনও শক্ত পেশিতেই টিকা প্রয়োগ করা যায়। যদি হাত বা উরুতে টিকা দেওয়া হয়, তা বাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী লিম্ফ নোডে পৌঁছয়। সেখান থেকে তা বাহিত হয়ে রক্তকণিকায় প্রবেশ করে, যা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত কোষকে নষ্ট করে দেয় বা দেহে তার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।