IAS Cadre Rule : ‘মনমোহন জমানায় সব ফাইল তো ক্লিয়ার করতেন এক মহিলা’, IAS ক্যাডার রুল নিয়ে চিদম্বরমের দ্বিচারিতা ফাঁস প্রাক্তন আধিকারিকের
IAS Cadre Rule : সম্প্রতি কেন্দ্রের প্রস্তাবিত IAS ক্যাডার রুলের সংশোধনী ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে। বহু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। এই বিষয়ে কলম ধরেছিলেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। কিন্তু তাঁর যুক্তির ফাঁকফোকর তুলে ধরলেন অবসরপ্রাপ্ত আইএসএস অফিসার।
প্রবীর কে বসু
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে সম্প্রতি আইএএস ক্যাডার রুলের প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিরোধিতা করে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন কংগ্রেস নেতা তথা মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য পি চিদম্বরম। এবং এই লেখাতেই ফুটে উঠেছে দেশের আইএএস, আইপিএসদের নিয়ে তাঁর অজ্ঞতা। নিজের লেখায় চিদম্বরম অযৌক্তিক এবং হাস্যকর দাবি করেছেন যে কেন্দ্রীয় সরকারে আইএএস অফিসারদের অভাব আদতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর দোষ। কেন? চিদম্বরমের বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদীর অধীনে কাজের সংস্কৃতি বিষাক্ত, কাজ করার পরিস্থিতি ভালো নয়, অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ। চিদম্বরমের আরও অভিযোগ, সচিবদের নির্দেশ পাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী দফতরে অপেক্ষা করতে হয়, বেশিরভাগ বাজেট বক্তৃতা পিএমওতে লেখা হয়, ইচ্ছে মতো কর্তাদের যেখানে সেখানে নিয়োগ বা বদলি করা হয়। চিদম্বরমের আরও অভিযোগ যে এই সংশোধনীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছে মতো একতরফাভাবে যেকোনও কর্তাকে ডেকে পাঠাতে চায় কেন্দ্র। নিজের যুক্তির সমর্থনে চিদম্বরম আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘটনা এবং জেপি নড্ডার সুরক্ষায় ফাঁক থাকার পর পুলিশ আধিকারিকদের ডেপুটেশনের নির্দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন।
এবার আসল নিয়মের কথা জানা যাক, প্রতিটি আইএএস অফিসার জানেন যে তাঁকে রাজ্য এবং কেন্দ্রের হয়ে কাজ করতে হবে। তাঁরা কেন্দ্রীয় ডেপুটেশন পেতেও চান। কারণ এটা তাঁদের শেখার সুযোগ করে দেয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকার এক আইএএস অফিসারকে হেনস্থা করার জন্য ডেপুটেশন আটকে দেয়। আবার বিরোধী দলের পরিচালিত রাজ্যগুলো রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে আইএএস অফিসারদের ছাড়তে রাজি হয় না। সংখ্যা দিয়ে একটু বিষয়টা বোঝানো যাক। একটি সরকার চালাতে ৪০ জন আইএএস অফিসারের প্রয়োজন। তবে ক্যাডারে আছে ৪০০ জন। সেই ক্ষেত্রে ‘অনুগত’ ৪০ জনকে বেছে নিয়ে বাকি ৩৬০ জন আইএএস অফিসারকে দিয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজ করায় রাজ্য সরকার। এইভাবে সেই অফিসারদের আটকে রাখে রাজ্য।
আর চিদম্বরম কাজের পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কথা বলছেন? তাঁর দল যখন সরকার চালাত, তখন পরিস্থিতি কেমন ছিল, তা সব আইএএস অফিসাররা জানেন। তখন মূলত তিনজন পুরো ক্যাডারদের পরিচালনা করতেন। প্রধানমন্ত্রীর সচিব পুলক চট্টোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব টিকে নায়ার, ক্যাবিনেট সচিব চন্দ্রশেখর। এই তালিকায় প্রথম জন আদ্যপান্ত ভদ্রলোক হলেও বাকি দু’জন কেমন ছিলেন তা গোটা ক্যাডার জানত। এরই মধ্যে NAC-এর রূপে একটি অসাংবিধানিক সংস্থার মাধ্যমে সোনিয়া গান্ধী সব জায়গায় নাক গলাতেন। পুরো বিশৃঙ্খলা চলত তখন। আশ্চর্যের কিছু নেই যে সেই সময় আমরা কেলেঙ্কারির পর কেলেঙ্কারি চাক্ষুষ করেছি।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী শৃঙ্খলা ফিরিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে আলাপনের প্রতি চিদম্বরমের সহানুভূতির বিষয়টি অদ্ভূত। আলাপন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করেছেন। আমি যদি কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিব হতাম, আমি আলাপনকে কাজ থেকে বরখাস্ত করতাম। আর কুমিরের কান্না তো দেখুন! এই চিদম্বরমই পিসিএ সংশোধন করেছিলেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মোদী ফের পিসিএ সংশোধন করে শ’য়ে শ’য়ে আইএএস আধিকারিকদের বাঁচিয়েছিলেন। তাঁর সরকার শ্যামা ঘোষ, প্রদীপ বৈজাল, পারেখ, ভাবে, এইচসি গুপ্ত, বেহুরিয়া এবং আরও অনেকের মতো ভালো সরকারি কর্মচারীদের হয়রানি ও অপমান করেছিল। ক্ষমতায় আসার মুহুর্তে তাঁরা অরুণ সৌরি এবং তাঁর অফিসারদের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু করেছিল। অতি-কেন্দ্রীকরণ? চিদম্বরম? সিরিয়াসলি? একটা সময়ে যখন প্রতিটি ফাইল একজন নির্দিষ্ট মহিলা (সরকারের অংশ নয়) ক্লিয়ার করতেন, সেটা ছিল অতি-কেন্দ্রীকরণ।
প্রবীর কে বসু : লেখক একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএসএস অফিসার যিনি কেন্দ্রের কৃষি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।